অনিমিখ পাত্র

অনিমিখ পাত্রের কবিতাগুচ্ছ

কবিতা

কত পাতা নড়বো হাওয়ায়
কত ফল পড়ে যাবো, গায়ে লেখা থাকবে অবিমৃষ্যকারী
এক পাখি বসন্তে তো অন্য পাখি ঠুকরে খায় প্রিয় মার্চ মাস
হাওয়ায় গর্ত করে ঢুকে পড়ে দূরদেশে ভ্রমণের কথা

বাপ রে! লাইন দেখে কেটেছি এক্কেবারে সিজন টিকিট
আমি ঋতুবদলের পুরনো গ্রাহক। ফলে বাড়তি সময় পেয়ে
যথাসাধ্য কবিতার চেষ্টা করে থাকি।

 

কাহিনি

দায়সারা একটা রোদ এসে জীবনের কিছুটা দেখাল
তখন তো সারা বাড়ি কী হয় কী হয় ভাবে থমথম করছে আর
সেই রোদে উড়ে এসে জুড়ে বসল দু’চারটি সন্দেহের পাখি
কাহিনি এবার শুরু – এরকম ঘোষণাও দিয়ে গেল হাওয়া সূত্রধর
অনেক উঁচুতে একটা চিল উড়ছে আর আকাশে ছটফট করছে নীল রঙ
সেই দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখে জল ভরে এল

ক্রমশই বোঝা গেল এটা একটা শিকারকাহিনি,
যেটা ঘোষণার বহু আগে শুরু হয়ে গেছে

 

ধরি ধরি

চাঁদ পাখি ফুল তারা – এইসব শেষ করে এসে
ভেবেছি এবার নেবো কবিতার সান্দ্র কুসুম
এদিকে যাবে না মন ওদিকে যাবে না
যা কিছু হয়নি দেখা সেইসব দৃশ্যকল্পে ডুব মারবে চোখ

কবিতা আশ্চর্য প্রাণী। নাম বলতে জিভ কেঁপে যায়
দিনেরাত্রে থাকে কোথা, মনে হয় সঙ্গে আছে, মনে হয় কখনো ছিল না
কল্পনার ঘরে তার বাসার ঠিকানা, এইমতো জেনে, দেখি
উপমার প্রায়ান্ধকারে ওই যায় তার শাদা নগ্নতা

‘কবিতা কল্পনালতা’ অতঃপর এরকম বাক্য স্থির হয়
ধরি ধরি করে দেখি শেষমেশ ধরছি সেই
চাঁদ পাখি ফুল আর তারা

 

চুরি

চুপি চুপি ফিরে আসি, যেন আততায়ী
ফিরেছে হত্যার কাছে
কিন্তু এই খুন
মনের মধ্যে ঘটেছে, কোনো
দাগ
রক্ত
নেই

যেন ঢাকনা একটু তুলে
দেখে নিচ্ছি পরমান্ন একই আছে কিনা

গতরাত্রে শেষ যে লেখাটা লিখেছি, তাকে
দিনের আলোয় ফের চুরি করে দেখতে ইচ্ছা হয়

 

ইয়ার্কি

সে এক ইয়ার্কি এসে বসে গেছে ভোরবেলা স্নায়ুর ভেতর
হাটবাজারের মধ্যে, চলা ও ফেরার মধ্যে থকথকে হাসির দোয়াত
সে এক আশ্চর্য কালি হাসি হাসি পদক্ষেপে সামনে সামনে যায়
গোবেচারা লোকেদের টানাটানি করে আর যত্রতত্র ছাপ মেরে দেয়

নামধাম পড়া যায় না, খুব যে মাতব্বর, বুঝতে পারি শুধু
রক্তবীজের মতো স্নায়ুর মধ্যে হা হা হা হা ঢলে পড়লে
টের পাই, মূলত ঘোড়েল, সে খুব সহজ ইয়ার্কি না

 

দুঃখে কী আর ফোটে

দুঃখে কী আর ফোটে
তোমার মহিলামনে দূরে দূরে সন্ধ্যা দেখা যায়
কে কাঁদে অন্তরা’য়
তোমার পুরুষমনে গানগুলি তারা হয়ে ওঠে
যাওয়া আর আসা মিলে আসা যাওয়া ঘনিয়ে তুলেছে
কে কাকে তুলবে ভাবি, রোদ বৃষ্টি রোদে কার ব্যাটন কোথায়
মনে মনে সেই তো চিল ঘুরে ঘুরে উড়ে উড়ে কোথাও বসে না
দুঃখের অভিকর্ষে মাঝেমধ্যে এসে পড়ে আনন্দগ্রহটি
আর তাতেই গ্রহণ লেগে গ্রীষ্মপ্রধান দেশে ছিটেফোঁটা শীতের আরাম
অন্য গোলার্ধে গেলে বাক্যটিরও রঙ চটে যায়
এ মনের ধ্বনিবীজ ওই মনে ধ্বনির অঙ্কুর
ও মনের পাখিবীজ এই মনে পাখিটির ওড়া

দেখি, চিন্তার বাঁকানো ছায়া এইমাত্র জলে পড়ে গেল
ছায়া লেগে জল কাঁপে। জলও কিছু ছায়াকে কাঁপায়

Facebook Comments

Related posts

3 Thoughts to “অনিমিখ পাত্রের কবিতাগুচ্ছ”

  1. Sourav Majumder

    @ Animikh Patra :

    আপনার কবিতার পরতে পরতে … এক একটি ধ্বনি বীজ … রোপণ করে ছলেছেন…। ভিন্ন সময়…ভিন্ন ভিন্ন বিভঙ্গে …যার অঙ্কুরোদগম…পাঠকমনে… এবং বিকাশ …। অভিনন্দন অফুরান…আমার … । ভালো থাকবেন…।

    1. ANIMIKH PATRA

      অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। এইরকম মতামত সত্যিই প্রাণে বাতাস এনে দেয়।

  2. Sourav Majumder

    দুঃখিত। অনুগ্রহ করে.. .ছলেছেন নয়… চলেছেন পড়বেন…।

Leave a Comment