অর্ণব সাহা

হস্তমৈথুনের মুহূর্তে এরকম ঘটে থাকে

–সেক্স লাইফ ?

–নেই । অলমোস্ট নেই…ইন্টারকোর্স করি…খুব অনিয়মিত…

–নেই মানে ! উইদাউট সেক্স সারভাইভ করছেন ? কতো বছর ?

–কে বলল উইদাউট সেক্স ? মাস্টারবেট করি । রেগুলার…

–বাট হোয়াই ডোন্ট য়্যু ট্রাই টু ফাইন্ড আ সেক্স পার্টনার ?

–কে বলল পার্টনার জরুরি ? আর আমার পার্টনাররা ছেড়ে চলে গেছে আমায়…

–বুঝলাম । শেষ কবে কারো সঙ্গে ফিজিক্যালি মিট করেছিলেন ?

–ছ’মাস আগে । জোকার রিসর্টে…

–বেশ । কিন্তু কেন ছেড়ে গেল তারা ?

–আই নিড পারভারশনস । আই ডেসপারেটলি নিড ইট ।

–হোয়াট কাইন্ড অফ পারভারশন ?

–আই লাইক বিডিএসএম । রোল প্লেইং ।

–হোয়াট ইজ ইয়োর প্রেফারেন্স ?

–টু বি ডমিনেটেড । আই লাইক পেইন । আই লাইক টু ডমিনেট অলসো । আই লাইক টু গিভ পেইন…

–আচ্ছা, তো কী এমন করেছিলেন যে ছেড়ে চলে গেল আপনাকে ?

–দেয়ালে মাথা ঠুকে দিয়েছিলাম । লেদার বেল্ট দিয়ে মেরেছিলাম ঝিলিককে…

–মাই গড । ডিড য়্যু গট ম্যাড টোটালি ?

–ডক্টর, আমি সেক্সের সময় অবাস্তব সব দৃশ্য টের পাই…

–কীরকম ?

–কাল রাতেও দৃশ্যটা দেখেছি…

–হ্যাঁ, বাট কী দৃশ্য ?

–১৯৯৮, জেনোয়া, কার্লো জিউলিয়ানি…

–অ্যান্ড হু ওয়াজ হি ?

–আপনি জি-এইটের কথা জানেন ?

–হোয়াই নট ? পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী আটটা দেশের বাণিজ্য-সংগঠন…

–এগজ্যাক্টলি । ১৯৯৮-এ জি-এইটের-র সম্মেলন বসেছিল ইতালির জেনোয়ায় । ২০ জুলাই । কনফারেন্স বিল্ডিং-এর সামনে থিকথিক করছে পুলিশ ।  অজস্র । আকাশে চক্কর কাটছে  সামরিক হেলিকপ্টার । আর গোটা শহরের  প্রত্যেকটা রাজপথ, অলি-গলিতে তৈরি হয়েছে ব্যারিকেড । গোটা পৃথিবী থেকে হাজার হাজার মানুষ এসেছে প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে । তাদের মুখে শ্লোগান—‘ডাউন উইথ জি-এইট’, ‘হে হে হো হো হো—ডব্লিউটিও হ্যাজ টু গো’…

–আপনি কার্লো জিউলিয়ানির কথা বলছিলেন…

–কার্লো ছিল জেনোয়ারই এক বাইশ বছরের কাজ-হারানো যুবক । সে পুলিশবাহিনীর দিকে ধেয়ে গেছিল  জ্বলন্ত পেট্রোল-বোমা হাতে…

–দেন হোয়াট হ্যাপেনড ?

–অ্যান্টি-টেররিস্ট পুলিস স্কোয়াড ফায়ার্ড অ্যান্ড শট হিম ডেড…বিশ্বায়নের প্রথম শহিদ কার্লো জিউলিয়ানি…

–আপনি রাজনীতি করতেন বোধহয় স্টুডেন্ট-লাইফে, তাই না ?

–আমাদের প্রত্যেকের বেঁচে থাকাই রাজনৈতিক ম্যাডাম…নান ইজ বিয়ন্ড পোলিটিকস…

–দ্যাট আই নো…এবার আপনার প্রবলেমটা বলুন ডিটেইলে…

–আমার খুব ভয় করে ডক্টর…আমি একলা একটা দু’কামরার ছোট্ট ফ্ল্যাটে থাকি…বাবা-মা মারা যাবার পর এই বিয়াল্লিশ বছর বয়সে আমি সম্পূর্ণ একা । আমি টের পাই ওরা আমাদের পিষে দিতে আসছে । ওরা আমাদের এনসার্কেল করছে ডক্টর…অফিস থেকে ফিরে আসি আমি । মিউজিক শুনি—সবরকম মিউজিক, জ্যাজ, ব্লুজ, মেটাল, হার্ড রক থেকে বেটোফেনের সিম্ফনি…আর আমার মনে হয় এই ঘর,এই তল্লাট জুড়ে এখুনি ব্ল্যাক-আউট করে দেওয়া হবে…রাস্তায় ভারী বুটের শব্দ…

–একধরনের হ্যালুসিনেশন । আপনাকে কেউ খুব বেশি মানসিক আঘাত করেছে, আই মিন বন্ধু বা বান্ধবী কেউ ?

–দিয়া অলমোস্ট ডেস্ট্রয়েড মাই লাইফ…বাট ইউ নো আই কান্ট রিকালেক্ট হার ফেস নাউ…সেটা আর একটা গল্প ডক্টর, সবকটা গল্প শুনতে গেলে তো রাত কাবার হয়ে যাবে…

–সবগুলো না হোক, কিছুটা তো শুনতেই হবে । ইনফ্যাক্ট, শোনাটাই আমার কাজ মিস্টার…।

–অনমিত্র । অনমিত্র বসু…

–হ্যাঁ, অনমিত্র-বাবু, আপনার ভিতরে একটা ডিপ ট্রমা কাজ করছে…কোনো বিট্রেয়াল, কোনো সর্বক্ষণের চাপা টেনশন, আচ্ছা, কী চাকরি করেন আপনি ?

–নিউজপেপারের ডিপার্টমেন্টাল হেড । আমি এনটারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি কভার করি ।

–ওয়াও ! আপনি তো খুব রিসোর্সফুল লোক তবে…প্রচুর কানেকশন নিশ্চয়ই আপনার…

–প্রোফেশনাল এথিকস-এর বাইরে আমি কাউকে পাত্তা দিই না । কারও সঙ্গে যোগাযোগও রাখি না…

–স্ট্রেঞ্জ ! বাট এই যোগাযোগ, ক্লাব-কালচার, পার্টি-অ্যাটেন্ডিং করলে আপনার মন অনেক বেশি রিল্যাক্সড থাকত অনমিত্র । মে বি ট্রমাটাই সাইফার করে যেত…

–আমার পেপারহাউজ গত তিন মাসে আটশ লোককে ছাঁটাই করেছে মিসেস…

–কুর্চি । কুর্চি ব্যানার্জি…আপনি কি চাকরি চলে যাবার ভয় পাচ্ছেন ?

–না । এরা আমায় তাড়াবে না । বিকজ আই অ্যাম টু মাচ এফিশিয়েন্ট অ্যান্ড প্রফেশনাল…

–তবে ভয়টা কীসের পাচ্ছেন আপনি ?

–আপনি বুঝবেন না । আপনি প্রসূন চট্টোপাধ্যায়-রাজা সরখেলদের নাম শুনেছেন ?

–নেভার । কারা এরা ?

–ইউএপিএ আইনে আটক । আজ ছ’বছর…

–কোনো আন্ডারগ্রাউন্ড পোলিটিক্যাল পার্টির সঙ্গে অ্যাটাচড এরা ?

–সিপিআই-মাওয়িস্ট । নাম শুনেছেন ?

–সর্বনাশ ! আপনি ওদের স্লিপিং সেলের সদস্য নাকি ?

–হাসি পেল আপনার কথা শুনে । সেই সাহস আমার আছে বলে মনে হয় ?

–সেটা আপনিই ভালো বলতে পারবেন…

–কুর্চি, আমি ভয় পাই অপমানকে । হেরে যাওয়াকে । মানুষের নিঃস্ব হয়ে যাওয়াকে । দিয়া যেদিন আমায় ছেড়ে চলে যায়, তার আগের রাতেও আমরা তুমুল সেক্স করেছি । আমার ফ্ল্যাটে । আমার বিছানায় । আর পরদিন সকালে জানতে পারি ও অলরেডি এনগেজড । ওর বিয়ে ঠিক হয়েই ছিল । জাস্ট টু টাইম পাস ও আমার সঙ্গে দু’বছর শুধু নাটক করেছিল । খেলেছিল আমায় নিয়ে…

–বলুন, আমি শুনছি ।

–এই হেরে যাওয়া, ব্যর্থ মানুষদের আমি সর্বত্র দেখতে পাই কুর্চি । গোটা পৃথিবী জুড়ে । মস্কো সাব-ওয়ের ধারে যে বৃদ্ধ লোকটা তার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্যাজ, পোশাক, জুতো বেচে দিচ্ছে সামান্য দুয়েকটা ডলারের জন্য, যে মেয়েটা আজও চিলির সান্তিয়াগোর রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে টাইট হট প্যান্ট আর গেঞ্জি পরে অথচ মাঝরাত পেরিয়েও তার খদ্দের জোটেনি, বাংলাদেশের গারমেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করে নাসিফা, ওর বর গত মাসে মারা গেছে আর একটা পোশাক-সেলাইয়ের কারখানায় আগুন লেগে—এরা সকলেই আমার রাতের স্বপ্নে ফিরে ফিরে আসে । আমি যখন বিছানায় কুঁকড়ে গিয়ে নিজের নিস্তেজ, গুটিয়ে যাওয়া পেনিসটা নিয়ে খেলি, আমার চোখ ফেটে জল আসে অথচ একফোঁটা সিমেন বেরোয় না, আমার মনে হয় রাস্তায় কার্ফু চলছে…আমার বাড়ির পাশের মসজিদটায় লুকোনো আছে অসংখ্য অস্ত্র, গোলাবারুদ…লস্কর-ই-তৈবার সিক্রেট সেল এবার একটা গণহত্যা চালাবে…চিয়াপাস মুভমেন্টের কৃষক গেরিলারা এইবার হাতিয়ার নিয়ে তৈরি…ওদের জমিতে কফির চাষ এবছর ওরা করতে দেবে না । সিয়াটেল থেকে দাভোস মানুষ জেগে উঠছে কুর্চি…গতমাসে আমার অফিসের এক ছাঁটাই-হয়ে-যাওয়া ফোটোগ্রাফার সুইসাইড করেছে…ওর একটা দেড় বছরের বাচ্চা মেয়ে আছে…দিয়া আমায় মিথ্যা বলল কেন ডক্টর ? আমি ওকে পাগলের মতো ভালোবাসতাম…

–আস্তে, অনমিত্র, আপনি জল খান…হাঁফাচ্ছেন আপনি !

–আপনার কী মনে হয়—আমার  মাথায়  সবকিছু জট পাকিয়ে গেছে আর আপনি যুক্তি দিয়ে বিশ্লেষণ করে

সেই জটগুলো ছাড়াবেন ?

–দেখুন আপনি যদি সাহায্য না করেন, আমি আপনাকে কীভাবে হেল্প করব বলুন…স্পেশালি আপনার সেক্সুয়াল ফ্যান্টাসিগুলো আমায় বুঝতেই হবে…সবকটা মেটাফরিক…ভিতরে অর্থ আছে !

–বাঃ ! চমৎকার ! জ্ঞান-যুক্তি-প্রগতি-এনলাইটেনমেন্টের সেই বাঁধা সড়ক…যুক্তি আর র‍্যাশনালিটির পথ ধরে হাঁটলে আমরা ঠিক একটা হ্যাপি এন্ডিং পেয়ে যাব, তাই না ডক্টর ? একদিন লাল সূর্য উঠবেই, তাই তো ? আচ্ছা, আপনি নিটশে পড়েছেন ? ‘উইল টু পাওয়ার’ ? পড়েছেন ?

–পড়েছি । নিটশে ছিলেন অ্যান্টি-ফাউন্ডেশনাল…’সত্য’-র অস্তিত্বে বিশ্বাস রাখতেন না ।

–শুধু তাই নয় । উনি বিশ্বাস করতেন ইটারনাল রিটার্ন-এ । ইতিহাসের কোনো বাঁধা সড়ক, কোনো লিনিয়ার গতিতে ওঁর বিশ্বাস ছিল না…আমি মডার্নিটিকে ঘেন্না করি ডক্টর !

–বেশ ! আপনি কি অজ্ঞেয়বাদী ? স্কেপটিক ?

–অন্তত আমি স্থূল আশাবাদে আর বিশ্বাস রাখতে পারি না ।

–অথচ আপনার ভিতরে সেই পুরোনো মডার্নিটির সবকটা অ্যাম্বিশন লুকিয়ে আছে—বিপ্লব, লড়াই, শ্রমিকশ্রেণির মুক্তির সংগ্রাম—সবই তো মার্ক্সিস্টদের মতোই !

–আমি রেজিমেন্টেড মার্কসবাদকে ঘেন্না করি । কমিউনিস্ট পার্টিকে ঘেন্না করি । স্তালিনকে ঘেন্না করি…

–কিন্তু এই বিডিএসএম-এর প্লেজার কোথায় পান ? এটা তো সেক্সুয়াল ফ্যান্টাসি আপনার…

–না । আমার একটা চেনা মেয়ে ছিল । শবনম । ও এগুলো লাইক করত…

–আচ্ছা ! কী কী করত আপনার সঙ্গে ?

–বন্ডেজ গেম ওরও প্রিয় ছিল । আমার ঘরে সবরকম প্লেজার গেমের ইন্সট্রুমেন্ট পাবেন আপনি—ব্যান্ডানা,  হুইপ, লেদার বেল্ট, হ্যান্ডকাফ, লোহার চেইন—সবকিছু ।

–বুঝলাম । আপনি এই প্লেজারগুলো এনজয় করেন । খুব কমই পার্টনার পান । বেশিরভাগ সময়েই পান না—এই তো ? আর হ্যালুসিনেশন দেখেন, ফিয়ার সাইকোসিসে ভোগেন…

–ব্যাস ! ব্যাখ্যা কমপ্লিট ? এইভাবে ব্যাখ্যা হয় নাকী ?

–দেখুন অনমিত্র, আমার প্রাথমিক কাজ ব্যাখ্যা করা, তারপর সেই ব্যাখ্যা ধরে একটা কংক্রিট রেমিডি খুঁজে বার করা । এটুকুই আমরা পারি…

–আচ্ছা, আপনি মনে করেন মানুষকে সুস্থ করে তোলা যায়, তাই না ?

–কিছুটা তো যায় বটেই…

–না । যায় না । মানুষ আসলে ঈশ্বরের অসুখ । জানেন এটা কার লাইন ? রণজিৎ দাশ ।

–তাহলে আপনি আমার কাছে এলেন কেন অনমিত্র ? আপনার তো সাইকো-থেরাপিতে সেরকম কোনো আস্থা নেই ।

–না । আস্থা সত্যিই নেই । তবু এলাম আপনার কাছে, কারণ আমি দেখতে চাইছিলাম একজন সাকিয়াট্রিস্ট কতোটা দূর অব্দি বুঝতে পারে আমায়…

–হোয়াট ডু ইউ মিন ? আপনি ফাজলামো করছেন আমার সঙ্গে ? অর ইউ আর সিরিয়াস ?

–টু হান্ড্রেড পার্সেন্ট সিরিয়াস আমি…আমার ঘুম পাচ্ছে কুর্চি…মনে হচ্ছে কতোদিন ঘুমোই না আমি…কতোদিন…

#

বিছানায় আরও একবার কুঁকড়ে যায় অনমিত্র । সম্পূর্ণ নগ্ন এখন সে । প্রায় নিস্তেজ লিঙ্গে হাত বুলিয়ে খেলা করে সে । খুব ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায় তার শিশ্ন । বিডিএসএম । অনমিত্র একইসঙ্গে ধর্ষক এবং ধর্ষিতর ভূমিকায় নিজেকে রেখে ভাবতে ভালোবাসে । তার মনে হয়, এই পৃথিবী তার জীবনে এক নিরন্তর ধর্ষকের ভূমিকা পালন করে চলেছে । বাবা-মা মারা যাবার পর থেকে এই অনুভূতিটা আরও বেড়েই চলেছে প্রতিদিন । সেই কবে, সাতাশ বছর বয়সে মাত্র দেড় বছরের জন্য একটা বিয়ে করেছিল সে । সেটা ভেঙে যাবার পর আর কোনো স্থায়ী সামাজিক চুক্তিতে সে জড়াতে চায়নি কারো সঙ্গে । ছাত্র-যৌবনের র‍্যাডিকাল রাজনীতির চাপ থেকেও সে আজ অব্দি বেরিয়ে আসতে পারেনি মানসিক ভাবে । নিজের নিরাপত্তাহীনতাকে সে সামাজিক আন্দোলনগুলোর মধ্য দিয়ে আড়াল করতে চায় । আর যখন কোনো মেয়েকে সে শারীরিক ভাবে প্রহার করে, এতোদিনের পুষে-রাখা-অপমান, যা দিয়া তাকে দিয়ে গেছে, সেই অপমানের বদলা যেন নেয় সে । আবার, আবার সে নিজের কাজের ভিতর র‍্যাশনালিটি আর যুক্তি খুঁজছে । ভুল । পুরোটাই ভুল । যুক্তি দিয়ে নিজের এই আচরণের কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে না । শিশ্ন এখন স্থির হয়ে দাঁড়িয়েছে আকাশের দিকে । এই মুহূর্তটাকে সে বেশ এনজয় করে । যখন বীর্য ছিটকে বেরোয় নি, অথচ তার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে । আর সেই পরম মুহূর্তে পৌঁছনোর আগে সে যেন একবার বিড়বিড় করে বলে ওঠে :

 

‘…শহরের যেখানে যত নোংরা ফেলার ড্রাম ছিল, আগের দিন রাতেই বিক্ষোভকারীরা সেগুলো জড়ো করেছিল…মুখমন্ডলে চাপিয়ে নিয়েছিল গ্যাস-মাস্ক—টিয়ার গ্যাসের শেল মোকাবিলার জন্য । তারা নিজেদের পরস্পরের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়েছিল—যাকে বলে ‘লক-ইন’ করা । এই বন্ধন থেকে এক একজন করে হঠিয়ে দিতে না পারলে পুলিশ আর তাদের বিচ্ছিন্নও করতেও পারবে না । সিয়াটেল শহরকে  ভাগ করা হয়েছিল ১৩ টি খন্ডে, যার নাম ‘প্লাই স্লাইসেস’ । ভ্রাম্যমান গোষ্ঠীগুলিকে তৈরি রাখা হয়েছিল সামনে,  যাতে পুলিশের বিরুদ্ধে আক্রমণকে দ্রুত অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া যায়…

#

সি.এন.এন টেলিভিশনের প্রশ্নের উত্তরে সিয়াটেলের মেয়র পল শ্চেহেল বলেন—“আমরা মাঠে নেমেছি—ওদের দেখে নেব” । রাতের বেলা ১২ ঘন্টার কারফিউ জারি হয় । রাস্তায় নামে ঘোড়সওয়ার বাহিনী ও আর্মার্ড ভেহিকল । হেলিকপ্টার থেকে সার্চলাইট ফেলে খোঁজা শুরু হয় আন্দোলনকারীদের । তখনই বিক্ষোভ জঙ্গি হয়ে ওঠে—দোকান, রেস্তোঁরায় ব্যাপক ভাঙচুর শুরু হয় । পুলিশ এই পালটা আক্রমণ রুখতে পারে না…উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বানচাল হয়ে যায়…’

#

৩০ নভেম্বর, ১৯৯৯, সিয়াটেল থেকে নিজের পাঠানো এই প্রতিবেদন হুবহু মনে পড়ে যায় অনমিত্র-র । কপি সে নিজেই লিখেছিল । সেবার অফিস তাকে পাঠিয়েছিল সিয়াটেল । ডব্লিউটিও সম্মেলন কভার করতে । কড়া ইন্সট্রাকশন ছিল তার উপর, কিছুতেই যেন বিশ্বায়ন-বিরোধী আন্দোলনকে হাইলাইট না করা হয় । কর্তৃপক্ষ তার রাজনৈতিক অতীত সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল ছিল… আলমারি খোলে সে । বের করে আনে  ক্যামোফ্লেজ পোশাক । আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পরতে থাকে সেগুলো । একটা কালো স্কার্ফ নাকে-মুখে জড়িয়ে নেয় । নিজেকে চিয়াপাস মুভমেন্টের চেয়ারম্যান কার্লোসের মতো লাগে তার ।  এবার সে খাটের নীচের কাবার্ডটা খোলে । বিভিন্ন গুপ্তসূত্র থেকে জোগাড়-করা একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র বের করে এনে  ড্রেসিং টেবিলের উপর সাজায় । এ.কে-৫৬, অটোমেটিক রিভলবার, হ্যান্ডগ্রেনেড । নিজেকে অসীম   ক্ষমতার অধিকারী মনে হতে থাকে । এইবার সে সমস্ত শত্রুর সঙ্গে লড়াইতে যাবার জন্য প্রস্তুত । কিন্তু তার  ঘুম পায় । আরেকবার, বিছানায় কুঁকড়ে শুয়ে পড়ে সে । গতসপ্তাহে বসের চেম্বারে ডাক পড়েছিল তার । ছত্তিশগড়ে মাওবাদ-বিরোধী সামরিক আক্রমণের বিরুদ্ধে একটা উত্তর-সম্পাদকীয় লিখেছিল সে । সেই লেখার ভাষা আর অ্যাপ্রোচের জন্য চিফ এডিটর তীব্র সমালোচনা করে তাকে । একুশ বছরের সাংবাদিক জীবনে সে এরকম অপমানিত আগে আর কখনও হয়নি । অবশ্য তার অত্যধিক সতর্ক মন এরকম দুঃসাহসী আর্টিকলও লেখেনি এর আগে, এই দশ-লাখি সার্কুলেশন কাগজের পাতায় ।

#

নিমেষে সে নিজেকে আবিষ্কার করে সিয়াটেলের ওই মিছিলে । তার হাতে পেট্রোল-বোমা । আগুয়ান পুলিশবাহিনীকে যে লোকটা নেতৃত্ব দিচ্ছে, তার মুখটা অবিকল তাদের চিফ এডিটরের মতোই । এইবার সুযোগ । পকেট থেকে অটোমেটিক রিভলবারটা বের করে পুরো ম্যাগাজিনের যাবতীয় কার্তুজ সে খালি করে দেয় ওই লোকটার শরীরে । লোকটা লুটিয়ে পড়ে । পুলিশবাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় । তখনই আকাশ থেকে চক্কর কাটা হেলিকপ্টার থেকে এলোপাথাড়ি গুলিবৃষ্টি শুরু হয় । অনমিত্র পালাতে শুরু করে । সিয়াটেল, দাভোস, জেনোয়া, সান্তিয়াগো, বার্লিন, সুকিয়া স্ট্রিট, ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেল, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডের অলি-গলি দিয়ে সে পালাতে সুরু করে । পালাতেই থাকে, যতোক্ষণ না তার পিঠ একটা উঁচু কবরস্থানের দেয়ালে ঠেকে যায় আর তাকে ঘিরে ধরে কলকাতার স্পেশাল স্কোয়াডের একটা হিংস্র পুলিশবাহিনী ।

#

আবার ঘুম পায় তার । একটা একটা করে পোশাক খুলে ফেলে সম্পূর্ণ নগ্ন, নিজের ফের নিভে-যাওয়া  লিঙ্গের উপর দু’হাত চাপা দিয়ে বিছানায় কুঁকড়ে শুয়ে পড়ে সে । ঘুমের অতলে তলিয়ে যায়…

#

মাথার উপর চক্কর কাটতে থাকে মার্কিন অ্যান্টি-রায়ট স্কোয়াডের ঘাতক হেলিকপ্টার…’দ্য লাস্ট ডেজ অফ ফ্রিডরিখ নিটশে’ ছবির শেষ দৃশ্যগুলো আবছা অন্ধকারে ঘুরতে থাকে তার চারপাশে…

 

Facebook Comments

Related posts

One Thought to “হস্তমৈথুনের মুহূর্তে এরকম ঘটে থাকে”

  1. নিশীথ

    আহা অপূর্ব

Leave a Comment