দক্ষিণের পিঞ্জরা
১.
আরেকটু কথা বললেই কথা ফুরিয়ে যাবে
যেমন বই ফুরিয়ে গেলে বন্ধ থাকে বইয়ের দোকান।
আরেকটু গাছ চিনলেই, থাকবে না আগ্রহের খেলা,
তোমাকে লাট্টু হাতে ধরিয়ে দিয়ে
কেড়ে নিয়েছে সুতো, ঘোরানোর।
যদিও কক্ষপথ থাকে
আর ঘুরপাক খাওয়া তোষামোদ
তোমাকে প্রদক্ষিণ করে যায় প্রতিবারের মতো…
২.
সন্ধির সমস্ত শর্ত মেনে নিয়ে
টুংটাং শৈশব বাজায় ছেলেটা;
হাতে কোনো বাঁশি নেই, কপালে নেই লটারি-প্রকোপ;
আমার ভারাক্রান্ত মধ্যাহ্নে
ভোরের চিঠি ফেরি করে তার মায়া ;
আমি দেখছি দড়ি বেয়ে
হেঁটে যাচ্ছে ছেলেটির মা,
দুহাত প্রশস্ত পাশে, দুলে উঠছে দুপায়ে ছোবল;
সন্ধির সমস্ত শর্ত মেনে নিয়ে
টুংটাং শৈশব বাজাচ্ছে ছেলেটা;
অথচ জানি, যা বেজে ওঠে,
তাকে ছেড়ে আসতে হয়েছে অনেক,
বিকেলের সাদা থানের ইমেজে একটি করে শোক;
আমারও তেমনই এক নামহীন লোক থাকে গাঁয়ে
যে রোজ ক্ষেতের থেকে শুশ্রুষার ফল নিয়ে আসে;
যে রোজ কপাল টেপে, খুঁটে যায় জলপটি বেলা,
ঘুম জড়ানো চোখে ক্ষোভ আর আবিরের কথা বলার মতো
আমার তেমনই আছে কেউ;
যেমন শ্মশানে থাকে একটি করে চায়ের দোকান।
৩.
যে হরিণ লোকপ্রিয়, রাঁধো তারই প্রণয়-উপচার
তেঁতুলে অক্ষয় গোলো, উপবৃত্ত খড়িদাগে তার
শাসন পেলব হলে নিয়ে যায় মেষ-সমাচারে
যে জন জ্বরের দেশে হৃত-ক্ষোভ কিনে নিতে পারে
খিচুড়ি রন্ধ্রে তার রন্ধন পটিয়সী প্রিয়া
এনেছে অরন্ধন, পাশা-রোগ, তটিনী বাহিয়া
৪.
গুটোনো সুতোর কোলে এক ফালি চন্দ্রাভিযান
গ্র্যাভিটি পেরিয়ে এই গ্লাসে ঢোকে কিছুটা বরফ
দুকলি হেমন্ত আর ধ্রুপদী পাঁইটে জলে মিশে…
রুমালে ঝাঁঝালো কালি ওপাড়ার গুঁফো বিড়ালের।
চোখের পাথর নামে জমা কোনো ক্ষীণ জলাশয়ে
এঁটো-কাঁটা দিয়ে তার নামাবলি ডবল-সেলাই
রামের বদলে গায়ে লেখা ছিল “গন্ধপুষ্পে এতে”
এরকম আঁচ কেন? দুপায়ের ভারে যেন কাঁপে
যে যত ফলের ভার গাছ হয়ে সতীনের ঘরে
রেখে দেবে, ফুল-লতা কাঁটা হয়ে গেঁথেছে গোলাপে।
গুটোনো সুতোর টানে চন্দ্রও নিচে নেমে আসে
রূপকে গ্রহণ লাগে, উপমাতে ঘুণ ধরে যায়
সারেনা এ তামারোগ, যে ভোগে কাঁদিয়ে রেখে তাকে
তুমিও সে ঘরে যেও, যেই ঘরে তোমাকে মানায়।
এভাবে গ্রহণ লাগে ডাইনিং এ ঢেকে রাখা চাঁদে,
ওঠে তার স্বনির্ভর চোখ
এখুনি ফুরোবে মায়া, তারাদের সন্ততি হোক…
৫.
মোরগের যুদ্ধ লেগেছে শহরে ; কড়াই থেকে মাইক্রোওয়েভ সর্বত্রই একশো চুয়াল্লিশ ধারা।
খুব কড়া আর পেলব ভঙ্গিতে মার্চপাস্ট করছেন কিছু প্রশিক্ষিত ব্রয়লার, চম্পারণের ধাঁচে কালো গ্রেভি সহযোগে ছুটে আসে প্রতিপক্ষ দল ; প্রচারের সময় শেষ, এখন কেবলই পাড়ায় পাড়ায় মোরগের যুদ্ধ, এ ওকে দিচ্ছে দানা, সে তাকে শোনাচ্ছে পিলু রাগ।
প্রচারের সময় শেষ, এবার শান্তির দানা মুখে পুরে নিন অথবা জানিয়ে দিন উলু-খাগড়ার থেকে নিরাপদ দূরত্বের কথা
৬.
এখনই শোনাবে নাকি ঘুমচোখে জরুৎকারু ধ্যানের আগল যার ভেঙে দিয়ে গিয়েছে শয়ান ক্রোধের বাকল থেকে খসে খসে পড়ে আয়ু তার কুচক্রী পাক বেয়ে উঠে যাবে সর্পের কাছে
এমনই যে মই, তাতে বেঁধে রাখে নিম আয়ুগাছ মাচার প্রসবব্যথা, লতানে সবুজে ঢেকে রাখে