মোছার দাগটুকু থেকে যাবে
এসো, তোমাকে আজ একটু আদর করি, চলে যাওয়ার সময়
আমি, আমার ছাইভস্মের লেখা, তোমার পিঠে
পরম করে একটু হাত রাখব? ব্যথা যা দেওয়ার সে তো সাধ্যমতো
যত পারো দিয়েছ, তোমার ভারি পাছায় অগণিত তারার
আলো, কী অবাক করা সৌন্দর্য্য এই পৃথিবীর, এটুকু তো
মিথ্যা ছিল না একেবারেই, শৃঙ্খলা
সেটাই আমাকে যা বেঁধে রাখবার, রেখেছিল হাওয়ায়, বৃষ্টিতে, দিনের
পতনে ও নিশার উপহাসের ভিতর, আমি তখন বলেছি—
অন্যায় হচ্ছে, আমার উপর অনেক অবিচার করা হল, আজ
সে কথা ভেবে উলটে মিটিমিটি হাসছি, বলি—
এত কি সময় আছে পুরনো কথায়, সংসারে কত কাজ, সূর্য
ওঠে লোকেরা ভ্রমণে যায়, বৃক্ষের কাছে, নদীর
পাশে, যেখানে কাশবন দুঃখের গান
শোনাবে, অতি বৃদ্ধ পাহাড় যেন বসে বসে মহাভারত থেকে পাঠ
করছে, উদাসীন কবি বলে একলব্যের প্রেম কাহিনি, সমুদ্র শাসন করে
বাজারের তরিতরকারির রঙ, মূল্য ও ওজন, সে
সময় কবির পালক ছিঁড়ে ছিঁড়ে মাংস বিক্রি করছে নিষ্ঠুর
সময়, ভিড় হয়ে গেছে, কেউ বলছে সাড়ে সাতশ, কেউ বা আবার
দেড় কিলো, সঙ্গে ফ্রি মেটে, আমি উঁকি দিয়ে দেখে
ফিরে আসি লেখার খাতায়, না পৃথিবীর কোথাও কিছু কম পড়েনি
ষাট পাওয়ারের আলো ষাট পাওয়ারের আলোই দিচ্ছে
শুধু আমি আর থাকছি না এখানে, তাতে
ক্ষতি কী? যেটুকু রইলাম তা অনন্তে রয়ে গেলো, রবার
দিয়ে ঘষলেও এবার মোছার দাগটুকু থেকে যাবে
অশ্রু, অশ্ব, অগ্নিরথ
হাতে কুঠ, তাই লিখতে পারিনা আজ। যদি তুমি এসে দেখা দাও
সোম, এক চুমুকে তোমাকে পান করে নেব
নিঃসঙ্গতা, তারও ছায়া আছে, তবে কোথায় যে শুরু আর কোথায় বা তার শেষ
বর্ষা, মনে করতেও পারছি না ভগবান, আছো না
নেই রুমালের ভেতর, যেভাবে চাঁদ;
ওঠে, যেন এক তরুণ কবি
কবিতা পড়ছে, ঈর্ষা করি, তোমার উপমা, অভিনব বাক, এ তো
নদীর পাড়ের হাওয়ায় সন্ধ্যা নেমেছে , আমি
একে চিনতে পারিনি সারাজীবন, বাসনার ভিতর আমার বিশ্বাস ধীরে ধীরে
কাদায় নেমে কী খুঁজেছে? পরী? অহংকার? সোনার
স্বপ্নের মধ্যে ক্ষুধা থাকে না, মাংস, রক্ত
পানীয়ের পেছনে টাকা-পয়সা খরচ করলেই কি পৃথিবীকে ভালো করে
দেখা যায়? সুন্দর খুব হিংস্র, নিষ্ঠুর, অপমান
করে, অশ্রুর, নিশিজাগরণের চোখের নিচে
কালো তিল হয়, সুর, অশ্ব-
অগ্নিরথে করে ভেসে যাবে নিশ্বাস, কুহক ডাকছে, ইশারা করি
লেখার ভিতরে ঘুম নেমে আসছে।
মজ্ঝিম পথ ও করুণার আলো
অনন্য যে পথে হাঁটে সে পথ বুদ্ধের, অহিংসার, করুণায়
ভরা, আমি কী করে সে পথ দিয়ে হেঁটে যাবো, সারীপুত্র-মৌদগল্যায়ণ
বলো? আমার কামনার রিপু আমাকে যে মশার মতো
রোজ কামড়াচ্ছে , বৈষ্ণব সাহিত্যে আছে
বিশ্বজয়ী এক তার্কিক-কে শ্রীজীব গোস্বামী একবার বলেছিলেনঃ
আমি সন্ধ্যা আহ্নিক করব কীভাবে, আমার যে
স্ত্রী বিয়োগ হয়েছে।
সেই তার্কিক তখন জানতে চান – তুমি তো আজন্ম
ব্রহ্মচারী, তোমার আবার স্ত্রী এলো কোথা থেকে, শ্রীজীবের
উত্তর- আমার কামই হলো আমার স্ত্রী, আর
এখন সে মৃত।
কিন্তু আমার কামনা যে গুছিয়ে সংসার করছে, কপালে
দিব্যি সিন্দুর, ধক ধক করে জ্বলে
ওঠে, পিঠের আঁচলে নানা চাবির গোছা, কতরকমের বিষয়ের
যে তালা খোলা যায় আমারই তা জানা
নেই, এদিকে আবার সন্ধ্যা-আহ্নিক বলতে শুধু রোজ মদ্যপান-
আমার তাহলে কী হবে, মৌদগল্যায়ণ
আমাকে তোমার প্রভুর মজ্ঝিম পথের কথা একটু
ভালোভাবে বুঝিয়ে দাও, যেন
সে করুণার জ্যোৎস্নার আলোয় আমিও পুষ্প হয়ে ফুটতে পারি
ক্ষুধার কন্ঠে গান শোনা যায়
তুমি হলে সন্ধ্যার তরবারি, লহমামাত্র, ক্ষীণ
কোটি, সহস্র, লক্ষ মুদ্রা। অন্তরে ঘিয়ের প্রদীপ জ্বলছে, অঙ্গার
কল্লোল করে, নাভির উপরে রাত হয়ে যায়, দাঁড়কাক
ডাকে, যেন হাসি নিভে গেল ঘৃণার
বাতাসে, কাকে এত ঘৃণা করো, কত লক্ষ, কোটি ঘৃণা করো
কলম আমাকে লিখে দাও, ভালোবেসে সে
আমার গালের মাংস কামড়ে নিয়েছে, থুথু ফেলেছে লেখায়, নগ্ন
করতলে জ্বলজ্বল করছে তার অনৃতভাষণ, তবু
তাকে পুজো দিই, স্বশীষ
ডাব পাঠাই উপহারে, ধেনু অর্ঘ্য দিই, দূর্বা ও তুলসী-চন্দন সহ
মন্ত্র পড়ি, হে বাসব তুমি যাও অন্তরীক্ষে
আমি এসে পাতালে প্রবেশ করব
খন্ড-ত, ঈর্ষা করো না –
অল্প জলে অনেকটা হুইস্কি মেশালে খুব শীত করবে, ভয়
প্রণাম করছে ভিক্ষা-কে, অদৃশ্য থেকে ক্ষুধার
কন্ঠে গান শোনা যায়, সে আসে…