গৌতম বসু

সুকুমারীকে না-বলা কথা


অন্ধকার একটা ঘোড়া ছুটে বেড়াচ্ছে প্রভুর সন্ধানে,
মিছে হতে মিছে, এ প্রহেলিকা হতে অন্য প্রহেলিকায়,
অন্ধকার একটা ঘোড়ার কেশর থেকে ঘাম ঝরছে
এ প্রহেলিকায়, ও প্রহেলিকায় অশ্বক্ষুরের আঘাত ৷

সদ্যমৃত এই মাঠে তুমি যে বারবার ফিরে আসছ
আমি তার কতটুকু বুঝি, তবু, চোখ ফেরাতে পারি না;
যত বড় জয় তত বৃহৎ ধ্বংসস্তূপ, মাঝরাস্তায়
ততবার হারিয়ে যাই, সামান্য এই পথনাটিকায় ৷

ততবার, গণনাসঙ্কুল আমার এ রাত্রিপটমাঝে,
দূর হতে শুনি তারে, টিলার ধার বেয়ে ধোঁয়ার মতো
উঠে আসছে সে, চোয়ালের কোণ থেকে অবিরাম ফেনা
ঝরছে, আমরা মরলোকের শেষ ক্রোশ পেরিয়ে যাচ্ছি ৷৷

 


দেখতে-দেখতে গন্ধর্বলোকের পথে এসে উঠলাম,
নিঃসঙ্গ, কেবল সেই ক্লান্তিহীন বাঁশরি চলেছে আগে,
তার পিছনে আমি, সঙ্গীহীন এক অনুসরণকারী,
দেখতে-দেখতে, একা হয়েছে কুকুর,সরাইখানায় ৷

দেখতে-দেখতে আর সব পথ এমনিই হারালাম ;
তোমায় বলা হয় নি, এত এত নিঃশ্বাসের কোলাহলে
বিরহবেলা কাটল, অবহেলায় ঝাপসা হয়ে এল
কঠোর প্রস্তরফলক, বজ্রকঠিন হল প্রশ্নমালা ৷

গলা যত শুকায়,সুকোমল আলোকে তত ভিজে যায়
বহির্বিশ্ব, শুনতে পাই প্রজাপতির ক্ষীণ কণ্ঠস্বর,
সরাইখানার একা কুকুর গা ঘেঁষে শুয়ে আছে পাশে,
এই তবে গন্ধর্বলোক, সুকুমারী, এই তবে মদিরা ৷৷

 


সবার শেষে, তুমি৷ কোন্‌ পথে চলেছি যদি জানতাম,
কোন্‌ ধূলিতে মৃত্তিকা, ভস্ম কোন্‌ বাতাসে, কোথা জঙ্গম;
মাথা নামাও, মাথা নামাও,জলবিন্দু উড়ে আসছে ঐ,
হাতির মতো দু’গাছা পা আমার, বলো কোথায় লুকাই৷

এই বিবরণখানি লিখে রাখা যাবে, ভাবি নি কখনও;
বেশ কয়েকটি জলের তীরে বিদ্ধ হলাম, সুকুমারী,
দুটো মাথার হাড়ে, তিনটে কাঁধে, আরও কত কত তীর
ঝঁকে-ঝাঁকে নেমে এল আবালবৃদ্ধবনিতার উপর৷

রক্তাপ্লুত দেহমনে,রয়ে গেলাম সকলে, হেঁটমুণ্ড,
তুমি কি শোনো নাই দেবতাদের স্বহস্তে বাজানো ঢাক,
দ্যাখো নাই, ইহলোকে, কীভাবে কাঁসর ঘণ্টার রোদে
আমি আলিঙ্গন ক’রে রয়েছি নিজের কর্কশ অতীত ?

 


ওড়ার আদি ক্ষণে আমি তখন আকাশ হতে ঝুলছি,
দেখছি, ঐ মেঘবর্ণ অরণ্য,অনাশ্রিত শালপাতারা
এ ওর হাত ধ’রে ছুটে চলেছে, জড়ো হচ্ছে নিজেরাই,
রাম,দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয়; থালার জন্মযন্ত্রণা ৷

সূর্যাস্ত আজ পাঁচ ঘটিকার কিছু পূর্বে; আরও জানাই,
আজ অমাবস্যা, আকাশে চন্দ্রমার শব্দ শোনা যাবে না,
অন্তত আজ, ঘোর উন্মাদিনী হওয়া হবে না তোমার,
অন্তত আজ, আমাদের মাথার উপর স্বাতী নক্ষত্র ৷

প্রলম্বিত দুই বাহু মেলে এগিয়ে চলেছি ; অমাবস্যা ৷
এ কারে স্পর্শিলাম, তুমি কি শতপ্রহরীর কেউ নও,
বৃক্ষ গজরাজ; ভুঁইয়ে লুটিয়ে প’ড়ে আছে এরা কারা,
কতটা প্রত্যাহার, কতটা দাক্ষিণ্য, কতখানি অন্ধতা ৷৷

Facebook Comments

Related posts

2 Thoughts to “সুকুমারীকে না-বলা কথা”

  1. দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম

    আহা, সকালটাই দারুণ হয়ে গেলো।
    প্রিয় কবির কবিতা পড়ে শুরু করা গেলো।

  2. Alamin Islam

    খুব সুন্দর

Leave a Comment