ভিক্ষু
হয়তো বাইশজন তাদের মুছে যাওয়ার জন্য যা-যা দায়ী করে গেল
তা ওই শরীরেরই বাইশ-কুঞ্জের বোবা হাওয়া
পৃষ্ঠা থেকে আনুভূমিকতা সরালে সাদা সরাচর। আরও আরও ঠান্ডা কামানবাইশ ভিক্ষু আজ পুথির মাছপোকা। কিছুটা ক্ষয়াটে আর সংঘপ্রাচীন
বাইশ শতাব্দীর ধস স্তূপের চূড়ায় হয়তো কখনও হাঁস
বাইশ ভিক্ষুর ঘুণলাগা সমাধি কোলে শূন্যে উড়ছে
বাইশ-কুঞ্জের লিপি বাইশ-সূত্রের অবসানহীন মেষ। কুয়াশাকঠিন
নেমে জ্যোৎস্না ঢালে বাঘের থাবায়
কাফিলা
মন কাফিলা করছে। নগরীর শেষে মস্ততম হাওয়ার দোকান
আঙুলের ক্ষত আজ শুকিয়ে এসেছে। হাঁটুভাঙা উটও
উঠছে পাংশুটে ছুরির রেখায়
বালির দেয়ালা ফুঁড়ে পুঁতে যাওয়া ক্যারাভান খেজুরপাতার শিস
মন সদাগর। মনসা পেয়াদা করে অবসন্ন মরুর মায়ায়
ছড়
জবরজং সন্ধ্যায় তুমি জ্যোৎস্নাজ্বলা বঁটির নির্জনে চলে গেলে
রক্ত নিয়ে আর কোনও পুনরাধুনিক শীৎকার নয়। মেচেতা-পড়া
অভিনয়ও নয়। অভিশাপ পর্যন্ত কোনও চাপাস্বর গোধূলিনিষিদ্ধ
কালো ঠিকানায় ডানার অশনি ফেরে পোড়া নাভি মুখে
সৎকারশূন্য দেশ। ফাঁকা মাংসের চেয়ার। জ্যোৎস্না পোড়ায়
ঘুমে। স্বাদহীন জিভের বরফে
কাঁঠালিচাঁপার নীচে কাটা আঙুলের ছড়। স্তব্ধতা
সেলাই করে দেশহীন লোহার পাড়ায়
পুরবী
হাঁস ও হাসিনা উড়ে কেন্দ্রাতিগ যামিনীবাগান
মাতৃনিশানা ভেঙে সমাপ্তিশূন্য রেল অস্তযমুনায় বেঁকে
মাইল মাইল মনোবিকলন সূর্যমুখীর খেতে ভৌতজোৎস্নায় নেভা গ্রাম
পতঙ্গের বিকেল হাসছে। নেভা আলোর পাখিরা হেসে
খুনখার। দিগন্তসরল
সুড়ঙ্গের চেরা জিভে গলে যাওয়া ধাতুর পুরবী লোহার নিশানে একাকার
হাঁস ও হাসিনাঘেরা ছায়ার কেতায় ক্ষতের ফোয়ারা হেসে যায়
ছক
কাটা আঙুলের ছকে রুদ্ধশ্বাস দাবার গোধূলি ফিনকি তুলছে মেঘে
কবন্ধের নখ থেকে খুঁটে খুঁটে ময়লা সরাচ্ছে কাটামুণ্ড। যেন
শবেরও অগম্য
স্মৃতির বেড়াল বসে প্যাঁচার পালক মুখে। স্তূপের শীর্ষে ভাঙা কাল
তোমার কঙ্কাল তবু কথা তোলে। নিচু আর বরফসামান্য
আমার হাড়ের নীচে এখনও সন্ধে হয় ভোর হয় অবিচ্ছিন্ন তোমার ভাষার
পেন্সিল
মোটা পেন্সিলে যা লিখছি মোটা পেন্সিলের জন্যই ততটুকু
খয়েরগাছের নীচে বেগুনি সত্যের মেয়ে পাথুরে চিহ্নগুলো মুছছে অবিকল
পেন্সিলের খুঁটিপোঁতা তাঁবুর ভেতর নির্বিকার বরফের শিস
খয়াটে রাত্রি থেকে মাংসের ছায়াকে জাগাই। মৃতদেহ লাফিয়ে উঠে অফুরন্ত
জিভের জ্বালানি। চর্বির সুরুয়া ফোটে। ভোর ফোটে
চ্যাটচেটে লাভার শিখায়
মোটা পেন্সিলে যা-লিখলাম মেয়েটির স্নানবীয় প্রকল্পের ভাঙা তীর
পাতার ডোঙায় উড়ে পেন্সিলের ভাঙা শিষ ফুঁড়ে যায় ঘিলুর আকাশ
একান্নপীঠ
যন্ত্রের মাংসে এসে ডালা খুলে পিয়ানো তুলছো
বরফঠান্ডা শ্বাস ওঠে। বরফশূন্যে ওড়া সুরের লশকর
মাংসের একান্নপীঠে নাতিশীতোষ্ণ এক দেহের মাচান
পাঠ ওঠে। হাড়গোড়থুথুকফঘিলু ও রক্তে ভেজা সন্ধ্যাভাষার
বরফবর্ষের তুমি। কীটের তরঙ্গে নেমে ক্ষুধার শিখায়
মাংসের হিমাংকে পোষা অনন্তের ছায়া
যন্ত্রের খোলস ভেঙে পর্ণমোচী শরীরে ছড়াও
মসিহা
আলোর বাতাবি ভেঙে ছিটেফোঁটা বিকেল উঠছে
তোমারই সুমেরু। ডানার সারং। তরল বন্দিশ খুলে নুড়ির রেখায়
কাঁচা পায়ের বয়সী মেয়ে। রাস্তা খুলছে টানা মরুস্বর্গ ঢেলে
ছায়ার পৃষ্ঠা থেকে আমিও কবন্ধ। যাই। পথের মুচকুন্দে বোজা কাল
আমাদের যত টিলা মোরগঝুঁটির শীত। ভস্মের নীচে কাঁপা গান
খেতের কঙ্কালে হাওয়া ওঠে। ঘোড়ার মসিহা, পিঠের সূর্যাস্তে
ফেরে হাড়ের হ্রেষায়। লালা ঝরে। লালা ঝরে
জালের দিগন্তে লেগে রুদ্ধশ্বাস সন্ধে ছড়ায়