সন্তান প্রসবকালীন গান
এই পাহাড়ের নিচে যে দুপুর একা একা…বয়ে যাচ্ছো তুমিও। বাঁ কাঁধের ফেরেশতারা একে একে ভীড় করে এই পাহাড়ের ধারে। যারা একটু পরেই ফেটে পড়বে অট্টহাসিতে। তুমুল কোন নারীর যৌন জীবনের দিকে তুমিও ছুঁড়ে দেবে বর্শা। একটি তীর ক্রমশ ভেদ করে চলে যাচ্ছে অপার বর্ষা। এই তবে শেষ দিবসের গান? আজকের রাতটাই? তারপর কর্কটাক্রান্ত প্রতিটি ভোরের মৃত্যু হবে তোমাকে না জানিয়েই? আমি জানি, এইখানে ফলিত শরীরের নিচে বাসা বাঁধছে অবিশ্বাস। যারা প্রতিদিন একটু একটু করে জড়ো হচ্ছে। লিখছে কঠিন কোন শোকবার্তা। ভুল ঠিকানায় পোস্ট হয়ে যাওয়া সেইসব বার্তার আড়ালে ঘুমিয়ে মা কিংবা প্রেমিকারা। তাদের হাতে সদ্য ফোটা মৃত শিশু। সেটিও ভুলে পোস্ট হয়ে যাওয়া কারো নাম। তুমি নামের পাশে ঘুমন্ত টারবাইন। ক্রমশ ঘূর্ণায়মান এই দুপুর। সেও থাকুক সাক্ষী। তার ভেতর থেকে তোমাদের মৃত পিতারা। যারা দিবসের আগে হারিয়ে ফেলেছিল কোমর বন্ধনি। যাদের কবরের পাশে কখনো নামেনি রাত। এমনকি দিনও আসেনি কখনো।
*
আসেনি গতকাল, পরশু কিংবা তার পরেরদিনও। সেইসব দিনের পেছনে লেলিয়ে দেই অজস্র খরগোশ। যারা নিজস্ব সুরবাহারের আড়ালে লুকিয়ে রাখে যৌনজীবন। আর লুকিয়ে রাখে তীর ধনুক। তোমরা তাদের দাও অমরত্বের সুসংবাদ। সেই সুসংবাদ সমাচার পৌঁছে দেবে হলুদ বার্তাবাহকেরা। যারা নিশান উড়িয়ে চলে গেছে হেমন্তের বিকেলের দিকে। আসো তোমায় এবার বিকেল দেখাব। বিষাদে লেপ্টে থাকা বিকেল। শিবকুমারের সন্তুর পার করে যারা চলে গেছে, আর ফিরবে না । অথচ ফিরবে না জেনেও কত আয়োজন! দুপুরের পর ছিল কমলা উৎসব। ছিল উৎসব শেষে অতিথিদের বিদায়ে মন খারাপ হওয়ার পর্বও। তবুও তুমি শোনোনি, প্রসূতিদের যন্ত্রণা ও সন্তান প্রসবকালীন গান। বান্দিশ পেরুনোর আগেই যারা প্রাণত্যাগ করেছিলো তাদের কথাও।
*
কেবল তৃতীয় সুরের কাছে হাত পেতে বসেছিলে। অকূল হয়ে কেঁদেছিলে। ফিরিয়ে দিয়েছিলে যুদ্ধাহত ঘোড়াদের। যারা ফিরে এসেছিল বান্দিশের পথ ধরে। খোঁড়াতে খোঁড়াতে। তাদের তুমি শুশ্রূষা দাও। দাও লবণ ও লবঙ্গ। নাকের কাছে এনে ঘ্রাণ নাও। তবুও কি সে ভুলতে পারে বৃহস্পতিবার দুপুরের কথা? যার শরীরে কেবল যুদ্ধের দাগ, তুমুল ঘূর্ণিঝড় তার কাছে কেবলই বিপদ সংকেত। যেখানে সে হারিয়ে ফেলেছিল পিতৃপ্রদত্ত কোমর বন্ধনিও। তুমি খুঁজে নাও, অসুখের যত নাম। কেবল নকল করা গানই তোমাদের বাঁচাতে পারে। এই ভাঙা রেডিও তাই বারবার ফিরে আসে। আহতদের শুশ্রূষা হয়ে। প্রসূতিদের গান হয়ে। তোমার ভেতর যারা কেবল ঝরে যাচ্ছে।