ভেংচি
পুরোটা মনে আসছ না, তবে পেশীতে, শরীরে?
অন্তত কোনও ভাঁজে ঢেউ কিংবা খাদের মতো অপেক্ষা করছ?
নেই হাওয়ায় পাতা নড়লে, ভূত নয়, নিজেকে কিংবদন্তী লাগে
ও উহ্য তোমাকে রপ্ত করবার আকাঙ্ক্ষায় থাকি
চারিদিকে চরিত্ররা বাজারে যায়, পার্স খোয়ায়
এসে দেখি বাঁকের কাছাকাছি কেউ বা হাঁটা নকল করছে তোমার
অনুসরণ করার দূরত্বে এলে দেখি কোথাও আসল নেই
তোমার তুমি-ই নেই
এই লেখাটুকু হবে বলে পেশীতে বসে ভেংচি কাটছিলে
শব্দের বদলে
শব্দের বদলে মুখ থেকে উঠে আসছে থকথকে কাদা
একমনে কোনও অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের বাগান থেকে উঠে আসছে প্রিয় কলহ
যার জন্য লোকে পায়রা পোষে, একদিন লক্ষ্যে চিঠি নিয়ে উড়ে যাবে
রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে সন্দেহ রটে,
গম ভাঙানোর কলে অবসর ভাঙে
থলে ভর্তি হয়, স্ফীত হয়
দিনমান তার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মানুষ জগৎ আলো করে
অন্ধকার থেকে অসংখ্য ইঁদুর হাততালি দেয়
আমাদের কলমের ডগায় একটু একটু অন্ধকার জমে
মুখ থেকে কালি সরে না, কথা বসে না
সমস্বর
পৃথিবীর গায়ে টেরিকাটা গাছ
আজ সমস্বরে সা গাইছে
যত পাখি সব খোঁচাখোঁচা রাগ আঁচড়ে
মিলিয়ে দিচ্ছে এ ডাল- ও ডাল
কে কাকে গাইছে, ভাবি
গাছ তোমাকে, না তুমি গাছকে
অসহ্যে মাতিয়ে রেখে আজ সারাদিন
বকবকম হয়ে আছে
শুধু পালক রয়েছে
পায়রা কোথাও নেই—সেই দোষে
দোষী হয়ে আছি
সব ঝিঁঝি হয়ে গেছে
তোমার বাসনার ভিতর, জ্বলে আছে— সে দূরের কুপি রেখে দেখো
জ্বলে জ্বলে কালি পড়ে কিনা। আপাত মাধুর্যের কাছে এসে পড়ে দেখো,
তার সম্রাট তখনও বাকি রয়ে গেছে কিনা। শুধু সন্দেহের বশে
সে দরজা পেরিয়ে কান পেতেছিল। তাতে সব ঝিঁঝি হয়ে গেছে।
কুকুরও ঝিঁঝি। রাতের জনহীন বাইকও ঝিঁঝি।
কেউ বিশ্বাস করবে না—এতখানি শব্দের ভেতর, ক্রমে স্বাভাবিক হয়
বাজুতে নৈশশিস্ ওঠে, দৃশ্যত যে কোথাও নেই, তার ছায়া হেলে পড়ে
যখন সম্রাট বাকি পড়ে আছে, এও স্বাভাবিক বলে মনে হয়।
অতঃপর যুক্তির ছাদ ওঠে। একে একে হাত-পা-মুখ-মাথা ঘুমে কাদা
ঠিক তখনই, তোমাকে অসাড় দেখে
তুমি বেরিয়ে আসছ কুপি জ্বেলে।
তোমাকে কি তবে আহত করেছে—আর কেউ
পাখি বিষয়ক ইশতেহার
১.
আকাশ ক্রমে নিঃসঙ্গ হয়ে উঠছিল
তুমি পাখি সেই রোদ গায়ে মেখে চক্কর দিচ্ছিলে
ঘুরে ঘুরে রচনা করছিলে ধারালো ঠোঁটে ভয়টি
ভয়ে কোরাসের মধ্যে বারবার কাঁটা হচ্ছিলাম যারা
আমরা আর কেউ নই
আমরা বশংবদ তোমার
তোমার ও জ্ঞান দেখে, তোমার লহর আনন্দটি দেখে
আমরা বেড়ে ওঠা নিজের মনে কাগজফুল
ভালোবাসি তোমার তৃষ্ণাটি ফিরে পেতে
পাখি বিষয়ক ইশতেহার
২.
সূর্য গোধূলিরেখায়, আর জিজ্ঞাসায় ডুবে মরে প্রশ্ন
বলবার মতো গ্রীবাভঙ্গি রেখে দিগন্তে ওড়ে বক
ভঙ্গিটুকু দেখে হৃদয় এত পাতাল হ’ল, আর উথাল হ’ল সে
যেন বা দেখাটুকুর জন্য আমি সে চিরকালীন শোক
শোক, যে কিনা অপেক্ষা করছে সমস্ত না-দেখা
চিনার গাছের অভূতআড়ালে
আমাকে তালিম দেওয়ার অছিলায় প্রশ্ন থেকে জিজ্ঞাসারা ওড়ে
ওড়ে মাইল মাইল ব্যাপী, আর ভঙ্গিটুকু ফেলে যায়
ছুতো খোঁজে— যেন বা আর একদিন
ভঙ্গিমার ভেতর আমাকে নেবে
খুব সুন্দর ভাবে শেষ হয়েছে কবিতাটি , অন্য ভাবে লেখা, খুব সুন্দর লাগলো
পাখি বিষয়ক ইশতেহার ১, সব ঝিঁঝিঁ হয়ে গেছে, শব্দের বদলে
এ তিনটা কবিতা আমি বারকয়েক পড়লাম। একটা ঘোর তৈরি করে।
বাকি কবিতাগুলিও দারুন।
“সে দরজা পেরিয়ে কান পেতেছিল। তাতে সব ঝিঁঝি হয়ে গেছে।
কুকুরও ঝিঁঝি। রাতের জনহীন বাইকও ঝিঁঝি।” – আমিও কবিতাগুলি পড়ে ঝিঁঝি হলাম।