শুভম চক্রবর্তী

শূন্য-স্থানে তাকাও


নব্বইয়ের কবিতায় যে বিশ্বায়ন এসেছিল, শূন্যের কবিতায় তা যুগোচিতভাবেই সুদূরপ্রসারী । কোনো একটি বিশেষ প্রবণতার দিকে ঝুঁকে দলগতভাবে লেখালেখির উদাহরণ শূন্যে বিরল নয়। শূন্য দশক এই সময়কাল এর মধ্যে অনেকগুলি প্রবণতাকে প্রত্যক্ষ করা যায়। এই বহুমাত্রিক সম্ভাবনা তৈরি করতে পারাই যে কোনো দশকের কবিতাচর্চার সার্বিক সাফল্য।

শূন্যে দশকে এসে যন্ত্রসভ্যতার সুফল এবং কুফল দুই-ই মানুষ পেতে শুরু করেছে। যার ফলস্বরূপ ভোগপণ্য, যন্ত্র, পাউচ প্রবণতা মানুষকে সম্যক শান্তি দেয়নি। এখন এই নাথিংনেস যে শূন্যের কবিতায় সঞ্চারিত হবে তাতে বিস্ময় কী ! এই যন্ত্র এবং স্ট্রিট রিয়েলিটি নির্ভর কাব্যচর্চাকে অনেকাংশে ঐতিহ্যরহিত এবং কৃত্রিম মনে হলেও এটিও সত্য যে সময়ের মধ্যে দিয়ে তাদের চারণ তা তাদের এই নাথিংনেসের দ্বন্দ্বময় খণ্ডত্ব ছাড়া আর কীই-বা দিতে পারে ! আর তারা যে সময়ের প্রতিনিধি তখন একটি স্থির বিশ্বাসের ভিত্তি আঁকড়ে ধরে অস্তিত্বের অন্য অভীক্ষায় পৌঁছনো সহজ নয়, কারণ বিশ্বাসের ভিত্তিভূমিই এতদূর এসে উবে গেছে। সার্বিক অবিশ্বাস, সন্দেহ, প্রতিহিংসা কোনো মহৎ ভাবের দিকে নিয়ে যাচ্ছে না কাউকে । তবে কী এই খণ্ডত্বই একমাত্র সত্যি ? এখানেই ভ্রম, যে কোনো দশকেই অনেকগুলি প্রবণতা ক্রিয়াশীল থাকে। একটি প্রবণতাকে ধরে বিচার করলে উজ্জ্বল গলদ এড়ানো যায় না। অনেকটা দূর থেকে দেখলে কিছু সত্য দেখা যেতে পারে। তবে এখানেও প্রশ্ন থেকে যায়। যেহেতু সেই দেখা নৈর্ব্যক্তিক নাও হতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গের বাংলা কবিতায় শূন্যে এসেই সর্বপ্রথম আরবান এর সঙ্গে গ্রামীণতা মিশে গেল। এর আগে সত্তরের কবিরা গ্রাম – মফস্বল থেকে লিখতে এসে সময়ের অনিবার্যতায় কলকাতায় এসে উপস্থিত হলেও তাদের স্থানিক রঙ অবিকৃত ছিল। কিন্তু যন্ত্রসভ্যতা, খণ্ডার্থে, স্যোশাল মিডিয়া কালচারের উদ্ভব হল শূন্যের মাঝামাঝি সময়ে যাকে শূন্যের কবিরা ব্যবহার করলেন সময়ানুগ চাহিদায়। ফলে কবিতা সহজে ছড়িয়ে পড়লো। শূন্যের কবিদের নিজেদের কবিত্বশক্তির প্রকাশের জন্য কোনো ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের দারস্থ হওয়ার আর প্রয়োজন থাকলো না। শূন্যের আরেকটি বড় কৃতিত্ব বাংলা কবিতাকে সার্বিকভাবে অর্থহীন করে তোলা। নব্বইয়ের অধিকাংশ কবিতায় আমরা যে বুঝিয়ে বলার প্রবণতা পাই শূন্যে এসে সে দাবী সম্পূর্ণ নস্যাৎ হয়ে গেল। কবিতা হয়ে উঠলো বহুমাত্রিক, একটি নয় ; অজস্র ব্যঞ্জনাবাহী। কোনো একটি সত্যে নয়, অজস্র সত্যের মতো কিছুতে পৌঁছতে চাইলো শূন্যের কবিতা ; হয়তো পৌঁছতে নয় শুধু পথ চলাতেই তাদের আনন্দ। পাউচসভ্যতার অনিবার্য ভাণ উঠে এলো শূন্যের কবিতায় —

” মৃত্যুর শিয়রে বসে আমি একটি মৃত্যুময় লোক
অগোছালো হয়ে থাকি। শক্ত হয়ে থাকি। ভাণ করি।
বিগত দিনের স্পৃহা শরীরের অন্ধিসন্ধি ঘেঁটে
নিলয়ে অলিন্দে রাখি। পুরোনো চিঠির মতো সস্নেহে রাখি
আসতে চাইনি তবু এসেই যখন গেছি
গাম্ভীর্য রাখি।

আসতে চাইনি তবু এসেই যখন গেছি
গাম্ভীর্য রাখি। ” ( অনিমিখ পাত্র )

প্রতিটি দশকেই আলাভোলা স্বভাব কবিত্বের যে ধারাটি বহমান থাকে শূন্যে এসে তা প্রায় শূন্য হয়ে গেল। কবিতা হল মস্তিষ্কনির্ভর ; বুদ্ধিনির্ভর। কবিতার স্বর হল সংযত, উচ্চাকতাহীন, সাংকেতিক। সামান্য বলায় আর অনেকটা না বলায় কবিতাকে নবতর বাঁকে পৌঁছে দিলেন শূন্যের কবিরা——-

” তোমাকে দেখে নৈঋত হল খুব। তোমাকে দেখে ইস্কাপনের বিবি হল খুব
খুব তোমাকে দেখে আমি দশরকমের বানান শিখেছি রফলা যোগে
আমি নীলকান্তমণির নাম দিলাম সা.রে. গা অমনি টানটান চামড়ার
রবীন্দ্রসংগীত বেরিয়ে এল তোমার দুহাতের বাঘনখ থেকে

ততক্ষণে আমরা খুঁজে পেয়েছি রোডসাইড ধাবা, গলার আলজিভ বের করে
বোঝাতে চাইছি একটুও নেশা হয়নি আমার, কখনো কোনোদিন
প্রথম কদমফুল হয়নি আমার– বিশ্বাস কর, হে বাঁ হাতের দেবতা

খুব একটা দূরে যেতে পারিনি কখনো তোমার চোখ এড়িয়ে
যে কোনও রাস্তার হিস হিস শব্দে দেখেছি তোমার কালো বুট
ততোধিক কালো মেঘের মত ছেয়ে আছে পথে পথে ” ( সুদীপ চট্টোপাধ্যায় )

তবে সত্তর ও নব্বইয়ের রক্তমাংসময় উত্তাপ, এলোমেলো পাগলামি শূন্যে অনুপস্থিত। এবং বিশ্বায়নের ধাক্কায়, বেকারত্বে, পাউচ সভ্যতার ক্রমাগত করাঘাতে শূন্যের কবিকুল সহজেই উপলব্ধি করলেন শুধু লিখে ভরণপোষণ সম্ভব নয়, চাই অন্য এক অস্তিত্বের লড়াই যা নিতান্তই বস্তুগত। এখন এইরকম একটা সময়ে বেড়ে ওঠা কবিদের পক্ষে কবিতার কাছে সর্বময় সমর্পণ প্রকৃত প্রস্তাবে অসম্ভব। এই ব্যর্থতার ক্ষতচিহ্ন নিয়েই শূন্যের পদচারণা। সেই ক্ষতবিক্ষত যন্ত্রনাই ফুটে ওঠে সন্তু দাসের কবিতায় —-


আর সে-ই দিন আমি একটুর জন্য সন্তু হয়ে গেলাম— সন্তু, সন্তু দাস
অথচ আমার মা-বাবা রাতের অন্ধকারে মহাভারত থেকে যখন তুলে নিয়ে
এসেছিল তাদের সংসারে তখন আমার গায়ে বর্ম হাতে তলোয়ার

পরে বাবা আমার বর্ম বন্ধক দিয়ে কিনেছিল চাল-ডাল আর বিড়ি
মা আমার তলোয়ার বেচে কিনেছিল একটা সেকেন্ড হ্যান্ড রেডিয়ো

এখন
আমি দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর রেডিয়ো শুনি—
অনুরোধের আসর, স্বর্ণযুগের গান
গান বন্ধ হয়ে যায় হঠাৎ কোনো কোনো দিন
শুরু হয় কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের বাংলা ধারাবিবরণী
ছুটিতে থাকা সৈনিকদের সত্বর যুদ্ধে যোগ দেবার
ঘোষণা হতে থাকে, হতেই থাকে—— ”

নব্বইয়ের কবিরা ধ্রুপদী কাব্যপ্রকরণগুলিকে তাদের কাব্যে যেভাবে প্রয়োগ করেছিলেন, শূন্যের ক্ষেত্রে তার গত্যন্তর হয়েছে। শূন্যের অধিকাংশ কবি অনেকাংশে ধ্রুপদী কাব্যপ্রকরণ সম্পর্কে উদাসীন। ব্যাতিক্রম অবশ্যই আছে। নির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, হিমালয় জানা, অনিমিখ পাত্র, দেবব্রত কর বিশ্বাস, দেবর্ষি সরকার, কুন্তল মুখোপাধ্যায়, রাকা দাশগুপ্ত, দীপান্বিতা সরকার এর মতন কবিরা।


আশ্চর্য ব্যথার পায়ে নত হয়ে আছি
শরীর সম্মত হলে ডানা পেয়ে যাবে একদিন
আমার সকল ক্ষত ; পাখির পিছনে উড়ে যাবে
আমি নেমে চলে যাব হিরন্ময় পিপাসার দিকে

প্রত্যহ জাহাজ দোলে, কনকপুত্তলি আসে যায়
আমি তার মায়াভঙ্গি, অবাক হিল্লোল আর সবুজাভ চোখের ইশারা
অনুমান করে করে ক্রমভুলে মগ্ন হয়ে দেখি
মাস্তুলে জড়ানো আছে খুলিচিহ্ন, কৃষ্ণবর্ণ ধ্বজা

আয়ু ন্যুব্জ হয়ে আসে, প্রতিরক্ষা কুন্ডলী পাকায়
ত্রাস আত্মগত হলে জ্যোৎস্নাধরা সরল মুঠোয়
জেগে ওঠে প্রতিহার, জাগে তার গুপ্ত প্রহরণ
ঋষভে উদ্যত হয় মর্ষকায়গন্ধী ব্যথা… সেই

আশ্চর্য ব্যথার পায়ে নত হয়ে আছি
শরীর সম্মত হলে ডানা পেয়ে যাবে একদিন
আমার সকল ক্ষত ; পাখির পিছনে উড়ে যাবে
আমি নেমে চলে যাব হিরন্ময় পিপাসার দিকে… ” ( নির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়)

সময় ছিল স্ট্রিটস্মার্টনেসের, চমকে দেওয়ার। নিমগ্ন নিভৃত স্বরের কাব্যচর্চার নিদর্শন কারও কারও মধ্যে লক্ষ্য করা গেলেও শব্দের মূলানুগ প্রবণতা ছিল চমকনির্ভর। ভিন্নার্থে ভাবলে এই মেট্রোনাগরিক স্মার্টনেস শূন্যের দান যার নান্দীপাঠ শুরু হয়েছিল রণজিৎ দাশ, জয়দেব বসু, সাম্যব্রত জোয়ারদার মধ্যে দিয়ে এবং ক্রমে সঞ্চারিত হয়েছিল শূন্যের অধিকাংশ কবিতায়। তবে কোনো একজন বা দুজন ব্যক্তির মধ্যে দিয়ে কোনো একটি প্রবণতা সঞ্চারিত হয় না, সঞ্চারিত হয় এক এবং অদ্বিতীয় সময়ের মাধ্যমেই। এই পথ ধরেই শূন্যের কবি জুবিন ঘোষের কবিতায় দেখি গান স্যালুটে চুমু খাবার তীব্র ও স্মার্ট আবেদন——–


ভাবছি একদিন তোমাকে ঠিক চুমু খাব
গান স্যালুটে
ভাবছি একদিন তোমাকে ঠিক চুমু খাব সেন্সর বোর্ডের সামনে
তোমাকে চুমু খাব রগরগে ‘এ’ মার্কা —
চুমু খাব টোয়েন্টিথ সেঞ্চুরি ফক্স হলিউডি মুভির দৃশ্যে
ভালোবাসা, তুমি কি ঠোঁটে ঠোঁট পেতে দাঁড়াবে না !

কেউ চলে যাবে ভাবলে ধকল বাড়ে, এর বেশি কিছু নয়।
পুরোনো গানের টানে তাঁত টানো, গ্রামের পর গ্রাম
মুখরিত খটাখট্‌ শব্দে হাড়ে হাড় জোড়া লাগে —
জানো ? ধকল বাড়ে এইসব ভাবলে।
চলে তো যাবেই ; তা’বলে কি চুমু খাব না ?
যেভাবে শামুক সরে যায় দূরগামী জলের কিনারে,
পেছনে পড়ে থাকে স্নেহশীলা ভিজে দাগ
ভালো বাসতে বাসতে পার্কের যাবতীয় চেয়ার দখল রেখে
চুম্বন সন্ন্যাসী হয়। নিকটে কপট হয়।

সাধক হয় কাঠের বেঞ্চি, গোল বেদি, ঝোঁপের আড়াল।
পাহারার চোখ, পুলিশের চোখ, ছায়াময় মূর্তির পিকেট এড়িয়ে
যা যায় চুম্বনের দিকে তা কখনও ফেরে না।
কে তাদের বোঝাবে দেবলীনা, একমাত্র ভালোবাসলেই
ঝোঁপের অভাব বোঝা যায় এ শহরে !
চুম্বন তুমি কি ঠোঁটে ঠোঁট পেতে দাঁড়াবে না — সমস্ত আইন অমান্য করে ?

কোনও অন্ধকারে নয়
ভাবছি একদিন তোমাকে ঠিক চুমু খাব সার্ক সম্মেলনে
ভাবছি একদিন তোমাকে ঠিক চুমু খাব কোনও শহীদ কিংবা স্বাধীনতা দিবসে
তোমাকে চুমু খাব সেই পুণ্য, পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়। ”

তবে আবারও বলছি কোনো একটি প্রবণতাকে সঙ্গে নিয়ে একদশকের দীর্ঘ সময়কাল চালিত হয় না। চালিত হয়, বিবিধ প্রবণতার সমান্তরাল বহমানতায়। শূন্যেও একদল কবি নিজ নিজ অন্বেষণে এই স্ট্রিট রিয়েলিটির ঊর্ধ্বে কিছু খুঁজছিলেন। যা গ্রামজীবন ও নগরজীবনের ঊর্ধ্বে কোনো নিজস্ব স্বস্থান। তারই নিদর্শন পাই সেলিম মল্লিক, অর্ণব পণ্ডা, শুভেন্দু দলুই, নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়, রাজদীপ রায় এর কবিতায়।

সেলিম মল্লিকের কবিতায় পরিস্ফুট হয় তাঁর স্বস্থান। যা রহস্যে রোমাঞ্চে আলোছায়ায় এক অপর অনুভূতিতে পৌঁছে দেয় আমাদের—


সে আমার রাধারানি। আমাদের দুজনের
একটাই গামছা, বুড়োবয়সের চামড়ার ময়লা
এক জায়গাতে মুছে রাখি। পয়সা জমানোর
ভাঁড়ও একটাই। পুতও নেই পুতিও নেই, দেয়ালের কোণে
বাঁশের খুঁটায় পোকা বাসা বেঁধেছে, পোকা ডাকলে
রাধারানিকে বলি ঃ শোনো শোনো —–
আমাদের মধ্যে আর- কেউ থাকলে এমনই করে ডাকত।
শুনতে শুনতে রাধারানি
এখন থেকে তিন- চারশো বছর আগেকার
বঙ্গদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের দুপুর হয়ে গেল। নির্জন
তাকিয়ে দেখি ঃ ঘুঘু সই ঘুঘু সই
খেলছেধুলছে পাখি, জমিনে সোনার লহর।
কথায় কথায় আমি যখন বেসামাল
অভ্যেসমতো রাধারানি
আমার ষাঁড়া গতরে খানিক কাতুকুতু দিল।
তারপর আরও শুনশান চারপাশে
তাল গাছের কান্ডের মতো কালো অন্ধকারে
হাঁকারি শ্বাস নিচ্ছে, দমবন্ধ রেখে ভেসে আছে
মেঘঘন জলে নিজঝুম শোল মাছ । ”

সেই নিজভূমি যা শুধু ভৌগোলিক বা আর্থ-সামাজিক নয়, অধিকন্তু মনস্তাত্ত্বিক। শুভেন্দু দলুই এর ” গোধূলি ” কবিতায় যেন তারই ছায়া—
” সূর্য ডোবার খানিকক্ষণ আগে
মায়ের হাতে ধরা থাকে একটা গোল রঙের আয়না।
উজ্জ্বল পায়রারা ফিরে আসছে নিজের ঘরে।
মুখ তুলে একবার দেখে নেন তিনি
তার ঘরের খোকাটি ফিরে এল কিনা । ”

শূন্যের কোনো কোনো কবির কবিতায় পাই বিস্ময় বিমুগ্ধতাকে ছাড়িয়ে যাওয়া এক প্রতীকী জগৎ। তাদের কবিতাবিশ্বাসের অন্তরীন আলো অন্ধকারই এক ঝাঁকুনিতে অন্য একটা পৃথিবীতে পৌঁছে দেয়। সঞ্জয় মৌলিক, সঙ্ঘমিত্রা হালদারের কবিতা যেন ফ্যান্টাসির জগৎ, স্বনির্মিত এবং অভিনব।

” একটা ইংরেজি দৈনিকের দুটো — চারটে পৃষ্ঠা ওলটাতেই চোখে পড়ল গল্পটা—-

এক বিদেশিনী যুবতী ঘুমিয়ে পড়েছেন
বাসে উঠে, জানালার ধারে।

তাঁর পাশের সিটে ধ্যানস্থ এক ভারতীয় যোগী।

পাহাড়ের রাস্তায় হঠাৎ ঝাঁকুনিতে জেগে উঠলেন দু-জন।

যোগী বললেন, ‘ মা, তুমি দেখছি অনেকদিন ভালো করে ঘুমাওনি।
চাইলে আমার কোলে মাথা রাখতে পারো। ‘

সুন্দরী বললেন, ‘ আই অলওয়েজ প্রেফারড আ ল্যাপ লাইক ইয়োরস। ‘

গল্পটা ক্রমশ বাঁক নিতে থাকে।

বেঁকে বেঁকে বেঁকে অবশেষে মাগুর মাছের লেজের মতো পিচ্ছিল
দুটো পায়ের ফাঁকে ঢুকে তৈলাক্ত পৃষ্ঠা ছেড়ে হঠাৎ বেরিয়ে যায়…

পাঠক হিসেবে তখনও আমি বুঝতে পারি না ওই
তাঁবুর খুঁটির মতো নগ্ন, খাড়া ও ঢ্যাঙা দুটো পা কার !

কোনো ফুটনোট নেই। কোনো মরাল নেই। ভাবলাম
হয়তো-বা পা-দুটোই প্রকৃত অর্থে চুম্বক। গল্পটা নয়। ” ( সঞ্জয় মৌলিক )

” পুরোটা মনে আসছ না, তবে কি এ- পেশিতে, শরীরে
অন্তত কোনো ভাঁজে ঢেউ কিংবা খাদের মতো অপেক্ষা করছ ?
নেই- হাওয়ায় পাতা নড়লে, ভূত নয় নিজেকে কিংবদন্তি লাগে
ও উহ্য তোমাকে রপ্ত করার আকাঙ্ক্ষায় থাকি

চারদিকে চরিত্ররা বাজারে যায়, পার্স খোয়ায়
বাঁকের কাছাকাছি এসে দেখি কেউ-বা হাঁটা নকল করছে তোমার

অনুসরণ করার দূরত্বে এলে দেখি কোথাও আসল নেই
তোমার তুমিই নেই
এই লেখাটুকু হবে বলে পেশিতে বসে ভেংচি কাটছিলে ” ( সঙ্ঘমিত্রা হালদার )

বাচ্যার্থকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা শূন্যের কবিতায় বিরল নয়, বরঞ্চ মূল একটি প্রবণতা হিসেবে চিহ্নিত। অনুপম মুখোপাধ্যায় কবিতার ধ্বনিময় দিকটিতে গুরুত্ব দিয়েছেন তাঁর লেখায়। একটি শব্দকে কেটে তার পাশেই অন্য শব্দ বসিয়ে দিয়েছেন এতে কবিতার ক্ষত এবং দ্বিমাত্রিক উপশম দুই-ই হয়েছে।

শূন্য দশক সময় পর্বের দিকে দেখলে প্রত্যক্ষ করবো শূন্যের অধিকাংশ কবিই নিজস্ব ভাষানির্মাণে নিবেদিত।এটি বড় কথা। কোনো তালিকা সম্পূর্ণ নয়, কোনো আলোচনাও। দশবছরের সময়কালে রচিত কবিতা সুবৃহৎ গবেষণা ও আয়তন দাবি। এখানে সীমিত পরিসরে সীমিত সাধ্যে প্রিয় কিছু কবির কবিতা নিয়ে মুগ্ধতা জানালাম এবং কাব্যিক প্রবণতাগুলিকে নিজের মতো করে আলোচনা করলাম। এর বাইরেও থেকে গেলেন অনেকে, আমার অপারগতায়, আমিও রইলাম নতুন আলোচনার আশায়।

ঋণ — অনিন্দ্য রায়, অনিমিখ পাত্র, সেলিম মল্লিক।

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment