ম্যাড মঙ্ক
১.
ঘর পেরিয়ে যাও তোমরা, আর আমার ভেতর
দাঁড়াও, আমিই এক পথ, যে পথে তোমাদের
আসা যাওয়ার মধ্যবর্তী সময়টুকু আলো পায়
এই সরাইখানায় তোমাদের স্বাগত, এই স্যাঁতস্যাঁতে
প্রায়ান্ধকার ঘর তোমাদের কনফেশন রুম, এই ঘর
তোমরা পেরোতে পেরোতে রাশিয়ার মানচিত্র পেরিয়ে
গ্রীসের দিকে চলে যাও, সেই অর্থোডক্স গির্জায়
অতএব, পবিত্রকরণ… এই দেহের ভেতর বোকা গ্রিশকা
ধারণ করেছে কত আত্মা, তার চৌখুপি ভরে উঠেছে
কথায়, অথচ যাকে তোমরা বিশ্বাস করছো, সে তোমাদের
তামার থালার ভেতরে দস্তাটুকু ভরে দেবে এমন সংশয়
তোমাদের হয় না, হাঃ, ধর্ম অন্ধ, এই কৃষকশ্রেণীর
অতীন্দ্রিয়তা তোমরা গ্রহণ করেছে, সততই তোমাদের
প্রতি কৃতজ্ঞ এ লম্পট, তোমাদের দেহ অনেকাংশে
আমারই হাতের ছায়ায় নড়ে, আমি চাইলে পেরিয়ে যাও
সমাপিত কাল, সমবেত প্রেমিকদের, হে ইশ্বর, আমাকে
ক্রূঢ় করুন, এই আত্মাদের এই স্বীকারোক্তির ভেতর যেন
আমি আলোটুকু নিয়ে উঠতে পারি, আর দিতে পারি
আমার আত্মার ভয়াবহতাকে যা এদের
ভুল ভাঙাতে, চমকে উঠতে সাহায্য করবে
২.
আজও ভয়! তোমার অভিব্যক্তির ভেতর বসে আছে
একটা কাঠবেড়ালি, তোমাকে দেখছে, আমার
হাতের ভেতর কি অনায়াস গতি, সে কোটর খুঁজছে,
আস্থাভাজন সঙ্গী তার ছায়া, কাঠবেড়ালি গ্রাস করে
ফেলছে সময় কারণ তুমি দেখছ, আর ভয় আজও
তোমার নিজেকে… যে কোনো ধর্ম, অতিবাহিত
এক কালের কথাই বলে, কাঠবেড়ালিটিও সেই একই
কথা বলছে, তোমরা সে ভাষা বুঝছ না, অথচ তারও
ভয়, তবু কালের ভেতর তার শীঘ্রগমন, তার গূঢ়পথে
একটি বাদামবন, সে জানে না ঈশ্বর ওই বাদামের খোলায়
কি সক্রিয়ভাবে একটি ফল প্রবেশ করান, মানে জন্ম
তার ভেতরে ছুটে বেড়াচ্ছে, অভিব্যক্তি তার ভেতর,
যেন তোমাদের বদলে ব্রাদার গ্রিগরির সামনে সে’ই
এসে বলে উঠবে বাদাম ছাড়ানোর কৌশল, আর
যে কোনো ধর্মই তো মুক্ততার কথা বলে… শুধু ভয়
তোমাদের, গরম মাংসের নিচে তোমরা তুরতুর করে
এগোতে পারো না কেবল অতীত তোমাদের গলার
বকলস টেনে ধরে, আমি জানি, এই প্রণয়টান… ওহ ফিও
৩.
“I enjoy all this emerging, holding of hands –”
— John Ashbery
শীতের ঘরগুলো পেরিয়ে সন্দেহ আসে, এ এমন চোখ,
ঘোলা কিন্তু কাম সেই জলে ছায়া ফেলছে, আমি সেভাবে
বিশ্বাস করি না পুরুষের অতীত বলে কিছু থাকে, তা
সে ফেলে দিয়ে আসে হাঁটার সময়, যেটুকু পায়ের ডিমে
লেগে থাকে সেটুকু স্মৃতি, অতীত হারিয়ে সে ফেলবেই
তাই, দ্বিধাটুকু আসে শীতের সেই ঘরগুলো পেরিয়ে, কেন
আথোস পাহাড়ে বসে আছে এক উন্মত্ত কৃষক, তোমরা
সংশয়কে এতদূর নিয়ে এসেছ, মহান যীশু তোমাদের
নিশ্চয় বহনক্ষমতা দিয়েছেন যথেষ্ট, অথচ দেখো ওই
হাতগুলো অন্ধকার রঙের, যদিও গাউনগুলো অযাচিত
উজ্জ্বল, চোখে সম্ভ্রান্ত চাহনি… তোমরা জিজ্ঞাসা করো
ওহে রাশিয়ান, আমার সাফাই দেবার কিছু নেই, আমি
শুধু ওই অন্ধকার রঙের হাতের ভেতর দেখতে পাই
সন্দেহজনক তোমাদের মতোই কেউ তাদের দ্বিধা
চিনিয়েছে, আর সে শীতের ঘরগুলো পেরিয়ে আসছে
যেমন আমিও পোকারোভক্সো পেরিয়ে এখানে এসেছি
তোমাদের মাঝে সাজিয়েছি সন্দেহের বসত, যদিও
আমি পুরুষ, আমার গেলকাল নেই, আমি পায়ের ডিমে
লুকিয়ে রেখেছি ছুরি, লংকোটের ভেতর যা কেউ
দেখতে পাচ্ছ না – সেই পাপের ঘরবাড়ি পেরিয়ে এসেছি,
যা কেউ দেখতে পাচ্ছ না – সেই ঘোড়াদের
চিৎকার, কেউ শুনতে পাচ্ছ না – এই অক্ষমতা তোমাদের
বিভ্রমের সহায় হোক, তোমাদের হাতেও লেগে আছে
অন্ধকার এবং পোশাকও অযাচিত উজ্জ্বল রঙের
৪.
সামাজিক হতে তেত্রিশটা বছর লেগে গেল
১৯০২তে মস্কোয় আমার ছায়া নেই, আমার সমাজ
এখন রাশিয়া থেকে দূরে, আমি কৃষিকাজ থেকে দূরে
পোশাকের ভেতর চলাফেরা করা খলবলে এক মানুষ
আমার লজ্জাজনক কোনো অবস্থান নেই এখন, এই
তেত্রিশ বছর তোমরা আমার বোধ, আমাকেই চেনালে
দেখলাম – মানুষ খাদ্যের অভাবে সরাইখানায়যায়,
মানুষ শরীরের অভাবে যায় ব্রথেলে, মানুষ মনের অভাবে
বিছানাতেও তার কণামাত্র উপুড় করে দেয়, অথচ
তাদের ভেতর উপসাগরীয় স্রোত, বরফ আর
তিলধারণ করার জায়গাজমি, সেখানে কৃষিকাজ নেই,
আগাছার মতো স্টারেটস সেখানে বোকা গ্রিশকা
ধর্ম নিয়ে সেঁধিয়ে যাই – যীশু, মানুষ ভয়ানক, তার
অতি নিষ্ক্রিয় আবর্তনকারী স্মৃতি তাকে কিছুতেই
চেতনায় আনতে পারে না, তুমি তাদের মুক্ত করো,
এই অনর্থক অতীত অনুজ্ঞা থেকে তাদের নতুন ব্রথেলে
কিংবা সাইবেরিয়ার গ্রামে নিয়ে যাও, বরফের মাঝে
দেখাও অবস্থান্তর – সে নিত্য, তার কাল তার ওপর
সময়ের প্রলেপন, ১৯০২’র মস্কো থেকে দূরে আমি
জেনেছি একথা, শুধু সামাজিক হতে তেত্রিশটা বসন্ত
যার কোনো অবস্থান নেই, আমাকে জাগালো
এ লেখা অতীতকে অস্বীকার করে, আপাতযে কোনো
অক্ষরই আমার আগের অক্ষরকে অস্বীকার করে,
বস্তুত এ লেখাও এক বিক্ষেপ আগের লেখা থেকে,
ওহ যীশু আমার ভেতর থেকে সময় মুছে দাও,
আমাকেও যদি পারো ফিরিয়ে দাও, ওই ভয়ানক
মানুষগুলোর মতো অন্তত একবার সরাইখানা,
ব্রথেলের বিছানায় ঘুরে আসি, তেত্রিশটা বছর আগে
৫.
“I like poems you can tack all over with a hammer and there are no hollow places”
– John Ashbery
এই আয়তন সঠিক আমার কাছে, তোমাদের দেহ
তোমাদের চেয়ে বড়, পেট ফোলা আর মায়ার মতো,
বৃহদাকার বৃষের মত তোমাদের ধারণা, তোমরা বেঁচে থাকবে
তোমাদের ঘরের ভেতর আল্পাইন থেকে আনা স্মারক
সংরক্ষিত থাকবে, অথচ মাত্র ২১ দিন লাগে একজন
মানুষের একজনকে ভুলে যেতে, আমি তো ছেড়ে এসেছি
পোকারোভস্কো একযুগেরও বেশী, আর দেখছি
মানুষের সঠিক আয়তন কেবল তার কফিনেই ধরা পড়ে
এমনকী উত্তল আয়নায় আমরা তার যে প্রতিকৃতি দেখি
তা’ও মিথ্যা, অথচ তোমাদের আতসকাচ বলে যে বস্তুটি,
তার তলায় কোনো শুকিয়ে যাওয়া মেয়েকেও মনে হয়
রসস্ফীত, হতে পারে – সে ছিল, তা মিথ্যা তার কাছে নয়
এভাবে দেখতে সুবিধে হয় তোমাদের, ছোটোখাটো ভ্রান্তি
নজরে আনার জন্য সেই আতসকাচ, যেখানে তোমরা
নিজেদের চেয়ে বড়ো আকৃতির, তোমাদের মধ্যেকার
একবগগা ষাঁড়টিকেও দেখে নিতে খানিক সুবিধে, তোমাদের
ভেতর তখন কবিতার মতো নয়, অনেকাংশ ফাঁপা,
হাতুড়ি মারলে তোমরা ভেঙে পড়ো আমার ওপর –
তবু বিশ্বাস করো, জোড়া দিতে আমি অপারগ, আমি
শুধু তোমাদের ভাঙা অংশটা সামনে তুলে দেখাতে
পারি মাত্র, আর আদপেই জানিয়ে দিতে পারি, লেন্সের
সামনে তোমরা নিজেদের চেয়ে বিশাল, মহৎ আর সে’ও
এক মায়ার প্রকোপ, সুতরাং ষাঁড়টিকে পোষ মানাও
৬.
তোমরা যারা শূন্যতার উপস্থিতি চেনো, তারা কি
পেরেছো তা’কে বুঝতে এক কল্পিত ভরাট অবস্থানের সাথে
নিজেদের মেলাবার সেই প্রাচীন পন্থা থেকে বের হতে?
তোমাদের চারপাশে ঘোড়া, বার্লিখেত, সাদা বরফের
ভেতরে বেলচা নিয়ে কাজ করে চলা, মাছ ধরে চলা
মানুষ, প্রিয়জনের কথা এসবের বাইরে এক খনির
ভেতর
সে, আসলে শূন্যতাও ফিও’র বুকে মুখ ঘষার সময়
বেরিয়ে আসা লালা – প্রায় পঁচিশ বছর আগে, আসলে তা’ও
যখন তোমরা আমার নামে রটনা করছ আর আমি
খুঁজে উঠতে পারছি না গ্রিগরি কে! সেই নামে রাশিয়ার
আস্তাবলের মালিকেরা কাকে চিনত, আমি পাশে কোনো
দৃশ্য পাচ্ছি না, যার সাথে মিলিয়ে আমি সাদা’কে সাদা
আর কালো’কে কালো বলতে পারবো, কোনো
ভরাট অবস্থান আমার ছিল না, আমি শুধু সময়ের ওপর
বয়ে যাওয়া পালক, যাকে বাতাস যেভাবে চেয়েছে
সেভাবেই নিয়ে গেছে, তাই’ই তার অবস্থান।
শূন্যতা এক সরলরেখা যা আমি পেরিয়েই চলেছি
অথচ ওহ ঈশ্বর, তুমিও এর শেষ দেখতে পাচ্ছ না,
শুধু আপেক্ষিক এই গমনের অংশীদার, আমারা কেউ
সেই অন্তিম বিন্দুস্থ মায়া’র বুকে মুখ ঘষতে পারবো না
প্রিয়জন হয়ে উঠতে না পারা এই অতৃপ্ত আত্মার নামই
কি তবে…