খসড়া সঙ্গীত
৭.
দেবদূত বৃষ্টি মানে আচমকা বাবার সঙ্গে এসে পড়া ধাঙড় বস্তি
কাটা-ফুল-ফ্যাকাশে সকালে
পাঁকাল খাদ থেকে কিছু তোলা যায় না
শুধু একঝাঁক ছাই-ছবিঃ চোখের উপর স্রোত
কেননা তারা সকলেই ক্ষণস্থায়ী
ধাঙড়ের দীর্ঘ মদ্যপান তাড়িত সকাল
বাবার বুঝতে চাওয়া সামাজিক সমস্যা
আমি শুধু টের পাই গতকালের
সান্ধ্য ফুলের মধ্যে বন্দি বৃষ্টি বাতাস
আমি শুধু বুঝতে পারি আমার চামড়ার রং সেই মাটির মত
যে সব লুকিয়ে রাখতে জানে
পিঁপড়ের রাসায়নিক ভাষায়
আমার পালাতে চাওয়া বারবার
কোনও কিশোরীর অকারণ হাসির দমবন্ধ পাঁজর
৮.
ক.
সমস্ত বেরিয়ে পড়া আস্ত একটা শীতের দুপুর
রাস্তার ঝাঁকুনি, ছিটকে ওঠা সুর
কথায় অসতর্ক পুরুষ রসিকতা
যে সব মেয়েদের চোখ চুম্বনকালে সম্পূর্ণ বোজে না
গুলিয়ে আসে স্বপ্ন, গলি
অন্ধ মেয়েদের জন্য প্রকৃতিধারণাপূর্ণ গ্রন্থাগার
গাঁধী বা ডারবান ম্যান্ডেলা বা কলকাতা
সবকিছু দ্বিধার ভিতরে থাকা সাপের চলন
কোথাও কোনও উত্তর নেই
পরপর ফানুশে মোড়া শহরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা
ধোঁয়ার আকাশে ছড়িয়ে যাচ্ছে রঙিন ঘুড়ি
আর কিছু বলার নেই
গরীব দেশ থেকে আসা রোডস স্কলারদের গ্যালারিতে
যোগ হতে থাকবে শুধু ঘুড়ি আর অন্ধ মেয়েদের
প্রথম মরু দর্শনের স্নায়ব এম আর আই
কোনওদিন দীর্ঘ শতাব্দির আবরণ সরিয়ে যদি
কেউ আমাদের ভাষা পড়তে পারে
তাদের হাসি অকারণ কৈশোরক গন্ধে
টেনে আনতে পারে দুপুর নামক কুঁকড়ে থাকা চাদর
আমরাও তাহলে বুঝিয়ে দেবো
না জানতে চাওয়া ভাষা-মানচিত্রের ছেঁড়া পাতা
যেকোনও মুহূর্তে রাজনৈতিক ইস্তেহার হয়ে উঠতে পারে
খ.
তারা জানত আমাদের আপাত সহ্যশীল শরীর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে মাটির উপর, কোনও উপকরণ ছাড়াই। যেহেতু এই কুয়াশার কোনও স্তরভেদ নেই, যেহেতু বাতাস শুধু বাতাসেরই মুখোশ পরে উন্মোচন করে দিচ্ছে বাতাসহীনতার স্তর, যেহেতু দেবদূত বৃষ্টির মধ্যে ঝরে পড়েছে ব্লেডের পালক, তাই আমাদের কোনও পতাকা নেই। উন্মুক্ত কুয়াশা মাঠে শুধু সারসার দরজা বসানো। খুলে গেলে অস্পৃশ্য বর্তমান
সমস্ত নির্গত শ্বাসই একধরণের গোপন ইস্তেহার
৯.
আসলে সমুদ্রালোক বলে কিছু হয় না
মহাসাগরের ঔজ্জ্বল্যও আদতে মরা মাছের ভেসে থাকা
আমি দেখেছি একই রকমের দমবন্ধ নিরেট কাচের বাক্স
মেহিকো থেকে দিল্লি
জোহানেসবার্গ থেকে কলকাতা
বোবা লালা গড়িয়েয়ে নেমেছে আমাদের ঘুম জড়ানো
বন্দরগামী রাস্তায় যেখানে বিস্মৃতি ও সময় পরপস্পরের বন্ধু হয়ে ওঠে
আমিই সেই প্রেমিকা-বিকেল যার প্রতিটা নিঃসরণে
চিহ্নিত হয়ে আছি আমি নিজে
জানি না আমাদের শহগুলো কোনও দিন বাসযোগ্য ছিল কিনা
শুধু প্রকাণ্ড ঔপনেবিশিক ক্ষতের উপর নদী, সাগরের শুশ্রূষা
মাঝি কোনও উপমা নয় একধরণের বহমানতা
কোনওদিন অসুখ সারবে না জেনেও
হাসপাতালে থেকে বেরোতে ইচ্ছে করছে না
১০.
সভ্যতা প্রাচীন হলে ধীরে ধীরে উদাস হয়ে ওঠে
তার দীর্ঘদিনের অভ্যাসগুলো তাকে আরও নমনীয় করে
এমনকি উত্তেজনাও প্রশমিত হয়ে যায়
তার সমস্ত নগর ও গ্রাম শান্ত বুনো কুকুরের দল
নতুন কোনও সঙ্গীতের আবিষ্কারও তাকে নড়াতে পারে না
যেমন কবিতায় তারুণ্যের ছটফটানি শান্ত হলে
কবিতা একটা সাদা ছোপে ভরা ঘুম
দীর্ঘ প্রবাহিত কোনও নদীর শরীরে
ধুলোকণার কেঅস ও থিতিয়ে পড়া
পলিজন্ম ও জীবাশ্মের প্রতীক্ষা
১১.
আমাদের বয়স বেড়ে যাচ্ছে
আর আমরা সেই প্রতীক্ষারত সোডার বোতলের মত
কখন যে সশব্দে খোলা হবে সময়!
অথচ সমস্ত কিছুই ঝিমিয়ে পড়া বিদ্যুৎ
শেষ বৈশাখের
সাদা ছোপে ভরা ঘুমে ফিরে আসছে তত্ত্বের বই
গ্রীষ্মের উৎকর্ষ বুঝিয়ে তোলা মহৎ বাণী
ফুঁপিয়ে ওঠা ফিসফিসগুলো
ধর্মের গায়ে রেখে যাচ্ছে
এক আশ্চর্য বুঁদ হয়ে থাকা
১২.
আমাদের ইতিহাস সবসময় একটা
সদ্য মাথা কাটা যাওয়া জন্তু
ছটফটানি ও রক্তের মধ্যে দিয়ে
নির্মিত রাস্তা দিয়েই হাঁটা
ছড়িয়ে থাকা আগুন যে দরজা খুলল
তার সামনে শুধু ১৯৪৮ এর রক্তে ভেজা একটা ধুতি
কারুর শরীর ফোঁড়া দুটো বুলেট
কাচের বাক্সে
সমস্ত জাতীয় পতাকাই বুলেট ছিদ্রে ভরা
আমাদের প্রকৃত নিশান কি ওই
১৯৪৮ এর রক্তে ভেজা কাপড়?
১৩.
তারপরেই আচমকা ক্যালেন্ডার থেকে
তারিখ চুরি করা প্রজন্ম
এই নিঃশেষ শহরের গায়ে ছাপ রাখতে চায়
সতীর হাতের ছাপ পাথরে বাঁধানো
মধ্যযুগের গায়ে আমাদের কল্পনা উশকে দেওয়া আগুন গাছ
শহরের স্মৃতিতে পুরনো শোকের মত একটা জেগে ওঠা
আর কীই বা থাকে?
বহুতলের লিফটের খাদ সুগভীর
অথচ অতল বলে কিছু নেই
ভোরের আধোঘুমে নাগরিকত্বহীন মানুষ
সামনে পর্বতমালার কুঁকড়ে থাকা দেখে
তার অনন্তের কথা ভাবতে পারে না