সংসারগাছ
আমাদের সংসার এক প্রাচীন বটগাছ –
ঝুড়ি ধরে দোল খায় বাবা
এক একটি প্রাক্তন বর্তমান ভবিষ্যৎ প্রেমিকার
কথা ভেবে।
মা ঠায় মাটি থেকে জল আর খাদ্য
তুলতে থাকে।
মায়ের শাড়ি খসে পড়া তামাটে কোমর –
বাবার নন্দলাল দৃষ্টিতে সমস্ত প্রেমিকার কোমর ঠিক এরকম,
অবিকল এক। বাবাকে জল আর খাদ্য দিয়ে
বাঁচিয়ে রাখবে বলে
দান কিংবা বোবার না না
সরু রোগাটে নদীর মতো তোমার চলে যাওয়া
পড়ে থাকে। পাড়ের মাটিতে ঘুরে বেড়ানো
একজোড়া জুতোর ছাপ আঁকা,
এলোপাথাড়ি। আমার ঝাল ঝাল
হিংসেমাখানো বমিমাখানো অস্পষ্ট-স্পষ্ট ছাপ।
নদীর কান্নামাখানো হাওয়া এসে ভিজিয়ে দিলে
পাড়ে আঠালো মাটির তাল হেসে ওঠে,
বেইমানি করে আমাকে দেখে –
আমি ওর হাসির দিকে আমার শিরদাঁড়া
ছুঁড়ে মারি। আর নিজেকে বোঝাই
আমার ঈদটাকে আমার মহাত্মা
একজোড়া জুতোর ছাপকে দান করে গেছে।
অসম্ভব নিঃস্বার্থ নিংড়ে
গান কোনো সম্পর্ক না
*
যেটুকু বলার ছিল বড়শিবিদ্ধ করে রেখেছ
ঠোঁটের পাতায় – একবার হাত পেতে দেখো
সারিগান কবিগান ভাটিয়ালি উপুড় হবে !
চিলের সোনালি অথবা সূর্যমুখীর গুনগুন ট্রপিক চলন –
খানখান করে গুঁড়িয়ে ফেলবে রাতের স্তব্ধ নির্ঘুমকে।
তখন শুধু অভিজাত কৃষ্ণের অন্ধকার শরীরে বাঁশির সুরেলা,
চারটি চোখে চণ্ডীদাসের হাত-পা মেলা
আরামশ্লোকের ঢেউ !
*
আমাদের সারিগানে সুর দিতে ভুলে গেছে রাতের নিকষ পাখিটি।
পাতারা কেঁদে ওঠে – শোকের গায়ে অশোক বুলোনোর চেষ্টায়
বৃথা লেগে থাকে। দারুব্রহ্মের জটায় ধুনুচি-জ্বালানো ভক্তি
রেখে দিই – আঙুল গলে চিরুনির দাঁত থেকে ঝরে পড়ে বিশ্বাসঘাতক চুল,
একটা দুটো, ঘর থেকে অন্য ঘরে, বারান্দায় – যেন টুকরো মুখোশ,
এঁকে রাখছে সারিগানের চলে যাওয়াটুকু
*
মুগ্ধতামৃত্যুতে ফের সেই গানেরই জন্ম !
মাঝি চলে যায় লালনকে জমা রেখে – লালনের গেরুয়ায়
ছপছপ দাগ, দাঁড়ের কাঠের মৃত স্তব্ধতা স্থির হয়ে
চেপে বসে নদীর পেটে বুকে।
জলের ওপর বিয়োগচিহ্নের নিস্তেজ,
জলের গায়ে কাটা দাগের ক্ষণিক !
সম্পর্ক যেভাবে ঘোলা সেজে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে
নদীর তলায়, জুজুবুড়ির আঁচলের গিঁটে – ওপরের দিকে
উঠে আসতে থাকে শুধু কান্নার বিনয়পিটক !