শিবাশিস দত্ত

শম্ভু রক্ষিতের কবিপ্রতিভার রহস্য

‘The poet is like the prince of the clouds who haunts the tempest and laughs at the archer. Exiled on the ground in the midst of the jeering crowd, his giant’s wings keep him from walking.’  — Baudelaire 

 

১৯৭১ সালে প্রকাশিত বইয়ের (‘সময়ের কাছে কেন আমি বা কেন মানুষ’)  একটি কবিতায় কবি শম্ভু রক্ষিত লেখেন :

‘রবি ঠাকুর বা নজরুল নই আমি, আমি শম্ভু রক্ষিত :’ 

এ কবিতাতেই আরও (‘আরামখেকো ঈশ্বরের প্রতি’) পড়ি :

‘আমি একজন কবি, আমি বাংলার কমার্শিয়াল বুদ্ধিজীবীদের গুম করে জখম করে দিতে চাইছি।’ 

উত্তম পুরুষ একবচনে ব্যবহৃত এই যে ‘আমি’, সে আসলে কে? আধুনিক কবিতায় ‘আমি’-র ব্যবহার নিয়ে জীবনানন্দ প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাঁর  মতে, এ ‘আমি’-র মাধ্যমে কবির ব্যক্তিগত সত্তাকে উপলব্ধি করা যাবে না। এ দ্বিধা মেনেই আমরা আলোচ্য কবির কবিতার আত্মা ও শরীরে প্রবেশ করব।

   ‘আমি’-র অন্য এক প্রসঙ্গও এক্ষেত্রে স্মর্তব্য।

   ‘শম্ভু রক্ষিতের শ্রেষ্ঠ কবিতা’ বইয়ের সূচনায় ছাপা কবিতাগুলো সম্পর্কে কবি লিখেছেন, ‘কবিতাগুলোর বড়ো গুণ এদের কোনো রহস্য নেই।’ এই ‘আমি’-র বয়ান নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই, কেননা এটি কোনো কবিতার লাইন নয়। কিন্তু কবিতা এমন রহস্যবোধশূন্য হয়ে ওঠে কেমন করে? তবে কী রহস্যহীনতার গভীরেও কোনো রহস্য থাকে যা আপাত, কিন্তু গূঢ় চেতনাসম্পন্ন ? কবির অস্তিত্বের যদি কোনো অজ্ঞাত উদ্দেশ্য থাকে, তবে তাঁর কবিতায়  রহস্যের প্রলেপ পড়তে বাধ্য। হতে পারে, কবিতাকে ধাঁধাজটিল পরিচয়ে হাজির করবার মতো গোপন কোনো কাব্যিক অভিসন্ধি কবির আছে। কবিতা তো এক ধরনের উৎপাদন, যা একইসঙ্গে অতিদুরূহ এবং অতিজটিল। জ্ঞান বা নীতিবাক্য কবিতা নয়, আবার বিশেষ ধরনের দক্ষতা ছাড়া কবির অস্তিত্ব কল্পনাই করা যায় না। কাজেই  আপাতরহস্য না হলেও কবিতায় গূঢ় রহস্যের উপস্থিতিকে অস্বীকার করা যাচ্ছে না।  

কবিজীবনের গোড়ায় লেখা, একেবারে প্রথম বইয়ের কবিতা(‘ভালোবাসা-সম্পর্কিত নীতি ও বোধের কবিতা’) পড়ে পাঠকের জানা হয়ে যায় ভবিতব্যটি। তা হল, কবির শরীর এবং বয়স প্রাচীন একটা ধ্বংসস্তূপের মতো হয়ে গেছে এবং সে কারণেই হয়তো কবি বড়োজোর দু-একটা বছর কবিতা লিখবেন। অতিনিশ্চিতভাবে যে কথা কবির জানা হয়ে যায়, সে কথাতেই পাঠকের ধন্দ জাগবে। কবি যেন ঠিক জাদুকরের মতো, আর এ জাদুক্রিয়ায় শব্দমহল, বাগরীতি নানা রহস্য গড়ে। অন্যথাচারণের এ এক অভিপ্রায়ও বটে। জাদুময় আবিসিনিয়ার প্রত্যন্ত প্রদেশে শুকনো ছায়া ও ঘন্টার শব্দের উল্লেখ আছে একটি কবিতায়। কাজেই পাঠক সচেতন হলে রহস্য উপলব্ধির আনন্দটুকু নিংড়ে নিতে পারেন। কবিতা তো আনন্দ দেয়, শান্ত আনন্দ।

ঈশ্বরকে ভালোবেসে, বিশ্বাস করে অধিক শ্রদ্ধা, প্রশস্তি জানাবার কোনো অভিপ্রায় নেই কবির। ঈশ্বরের সত্যিকারের উপস্থিতির সামনে কবি নিজেই নিশ্চিতভাবে অসাধারণ হয়ে যান। ঈশ্বরকে আরামখেকো বলতেও দ্বিধা নেই যখন, তখন ধরে নেওয়া যায় অধিবিদ্যার চেতনাকে লোপাট করে দিতেই তিনি কবিতায় মগ্ন হয়েছেন। লিখেছেন : ‘এখন আমার শরীরে কোনো ঈশ্বর নেই, ঈশ্বরের মতো ঈশ্বর এখন অবারিত মাঠ, ধূ ধূ প্রান্তর…।’ তবু এমন ঈশ্বরবিহীনতার চেতনা সত্ত্বেও অধ্যাত্মচেতনার বোধ যেন নির্মূল হয় না। ‘আমার মুখ ও চিবুকের মধ্যে অধ্যাত্মজগৎ যেন কথা বলছে।’ কবিতায় ঠাঁই পাওয়া এই আমার আমি-কে পাঠক  জীবনানন্দীয় যুক্তিতে অস্বীকার করতেই পারেন, তবে অন্য যুক্তিও খাড়া করা যায়। ‘আমি সময়ের অনুগামী হব’– এ ঘোষণা যাঁর, তিনি মুহূর্তের জন্যও অস্তিত্বঘন জগৎকে বিস্মৃত হবেন এমন অনুমান সহজসাধ্য নয়। 

সব শরীর, সব দৃশ্য, সমগ্র পৃথিবী যখন অশ্লীল হয়ে ওঠে, তখন ‘তিনশো মানুষের বারোশো মাথা ও পেট’-সম্বন্ধীয় কল্পনা দানা বাঁধে। এ কি উদ্ভট কল্পনাশ্রয়ী শব্দের রূপকল্প, নাকি কবিতার অলৌকিকত্ব গড়ে তুলতে কবিমন সক্রিয় হয়ে ওঠে? উদাহরণ অজস্র। যেমন, ‘সোনালি নস্যি রঙের ফ্রককোট পরে’, বেশ কয়েকটা অক্ষর নিয়ে বিষুবরেখার কয়েক ডিগ্রি ওপরে উঠে যাওয়া,শুধু তাই নয়, অক্ষরসমূহের মধ্যে কোথাও ‘সৃজনীশক্তি লুকিয়ে আছে কিনা’ তা দেখবার জন্য অতিসুস্বাদু মাছ দিয়ে তাদের বাতাস করার মধ্যে যে কল্পনা, তাতে সুন্দর এবং উদ্ভটত্বের যেন অপূর্ব বিরচন ঘটে যায়।  

‘মহাপৃথিবী’টা কোথায়? তার ঠিকানা মিলবে ‘আমাদের প্রেম’ কবিতায়। কবির পত্রিকার নাম ছিল ‘মহাপৃথিবী’–এ কথা আমাদের জানা। অন্য পরিচয় হল, এ এক নতুন বাড়ি, যাকে ‘আমাদের বাড়ি’ বলে উল্লেখ করেছেন কবি। নোংরা ছবি চলে এমন তিন তিনটে সিনেমা হাউস(যার নামগুলো পর্যন্ত বিশ্রী), হোটেল, চায়ের দোকান, মুখোশ, পরচুলার দোকান, রেলগুদাম পেরিয়ে এ বাড়িতে পৌঁছোতে হয়। অলিতেগলিতে এত মন্দির, অথচ কী আশ্চর্য, এ বাড়ি যাওয়ার পথে কোনো মন্দির নেই। একটা বাগানের উল্লেখ আছে যেখানে মানুষ নেই, রণহুঙ্কার নেই, দ্বেষ নেই, ষড়যন্ত্র নেই, নেই বৈরিতা, নিষ্ঠুরতা। সেখানে কবি তাঁর প্রেয়সীকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেন। এ প্রেম কি যৌনতাকে স্বীকার করে নেয়? এ প্রশ্ন ওঠে কারণ অন্য কবিতায় কবি যৌনতাহীন প্রেমের কথা বলেছেন। আবার কোথাও পড়ি, ‘তুমি  স্থির, নিঃশব্দ রক্তমাংস, তোমার যৌনাঙ্গকে আমার প্রণতি/ তোমার উন্মুখ স্তনে মুখ দিয়ে আমি ব্যবধাহীন বেঁচে আছি।’ উল্টোদিকে, ‘অলৌকিক পাপ’ কবিতায় প্রেমিকার প্রতি চরম বিরূপতা যেন–‘তখন প্রেমিকার মুখও  অসহ্য লাগে। কন্ঠনালী থেকে পায়ু পর্যন্ত জ্বালা করে।’ প্রেম তো রাষ্ট্র-শ্রেণি-সমাজনিরপেক্ষ কোনো ভাবাদর্শ নয়, সম্পর্কের এক জটিল রসায়ন। সময়প্রেক্ষিতের  ডাইকোটমিতে প্রেমের সত্য খানখান হয়ে যেতে পারে। অন্য যুক্তি হল,প্রেম কখনো যৌনতাকে প্রকট করে, কখনো বা আড়াল করে। প্রেম ও যৌনতার দ্বন্দ্বকে মেনে নিলে বিশেষত পুরুষের স্টিরিওটাইপ যৌনকল্পনা কি ধাক্কা খেয়ে যায়? ‘যতি-স্ত্রী’, ‘ভিসুভিয়াস নারী’, ‘ দ্রঢ়িষ্ঠা(নিরেট, না অনমনীয়?)রমণী’, ‘শ্রেয়স্করী নারী’– এমন বিবিধ নারীরূপকে কল্পনা করতে কবি যেন যৌনচেতনার পরিকল্প(paradigm)কেই বদলে দিতে চান। তবে সবকিছুর পরেও প্রেমেই আস্থা রাখেন তিনি : ‘প্রেমই আমার ধর্ম, যন্ত্রণাই আমার সুর, আমার বাঁশি’…।

যন্ত্রণার তো রকমফের থাকে। কেবল বিচ্ছেদজাত যন্ত্রণা তো নয়, রাষ্ট্রের কোপানলে অনেকসময় দগ্ধ হতে হয় কবিকে। ১৯৭৬ সালে কবি শম্ভু রক্ষিত গ্রেপ্তার হলেন, কয়েদ খাটলেন আট মাস। কেন? ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর কবিতার বই ‘রাজনীতি।’ তাতে ইন্দিরা জমানার জরুরি অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন কবি–‘এই সেন্সরশিপ মানুষের কাছে এখন কি চাইতে পারে?’ (‘এই দিন শুধুমাত্র কবিতা’)। এ বইয়ের অন্যান্য কবিতার লাইন :

‘রাজনীতিবিদরা এক বিভবশালী বিবুধের ধারে বসে/ প্রেরণাপূর্ণ নরক সৃষ্টি করে ‘ (‘রাজনীতিবিদরা’)

‘কোন ধারাক্রমে ভারতবর্ষ দু’টুকরো হয়ে গিয়েছিল/ আজ আবার যেখানে রাজতন্ত্র বসানোর চেষ্টা চলছে (‘উত্তরাধিকারত্ব’) 

“ছোট বড় সব মতবাদ ভেঙে/ ‘এক মতবাদ’ খাড়া করছে” (‘যথাযথ’)

কবিতার ছত্রে ছত্রে আদ্যন্ত পলিটিক্যাল হয়ে ওঠার তাগিদ–বলা বাহুল্য,এমন কবিকে শাসককুল রেয়াত করবে কেন? ঠিক, কিন্তু তাতেই বা কী এসে যায়! পুলিশি তৎপরতায় কবির ওপর সেদিন অত্যাচার-নিষ্পেষণের যে কুৎসিত-পর্ব গড়ে উঠেছিল তার আগেই তো পাঠকের হস্তগত হয়ে গেছে কবির অলোকসামান্য কাব্যগ্রন্থ ‘প্রিয় ধ্বনির জন্য কান্না'(১৯৭৩)। ঈশ্বরকন্যার সঙ্গে সংলাপে বিভোর হয়েছেন কবি। কাব্যসাধকের বিনম্র এবং ধ্যানী কল্পনায় নিমগ্ন কবি ‘গ্রহাণুর ভয়াবহ হাসি’, ‘বিদূষক শ্বেতহাঁসে’র জাগরণ, বন্দরহাতির দাঁত, ‘উটপাখির পালক’, ‘ডানার মতন মুদ্রা’, ‘ধ্যানমূর্তি শীত’, ‘বিহ্বল খাদ’, ‘বেঞ্জিপাইরিন বিস্ময়’, ‘পেডিমেন্টের ত্রিভুজ’, ‘রামধনুর ফোয়ারা'(মোটিফগুলো লক্ষ করুন) পেরিয়ে ঈশ্বরকন্যাকে আবিষ্কার করেন– এ তো পৌরাণিক দেবী আফ্রোদিতে, হাথোর-মিউজ বা বেনখাজির ভেনাসের চেয়েও অত্যুজ্জ্বল, এ যেন এক স্বর্গীয় অবলোকন।  অতিলৌকিক এ পরিক্রমার মাঝেই কবির জ্ঞানলব্ধ প্রত্যয় জাগে–‘কবিতা আজ পর্যন্ত গবেষণালব্ধ।’ একে কীই বা বলা যায়–‘শূন্যের ভিতর পরিশ্রম?’

 

কবিমনস্কতা কাকে বলে তা বোঝাতে কবি যে  শব্দগুণসম্পন্ন বাক্য একের পর এক গঠন করে চলেন, তা দুঃসাহসিক তেজ ও চেতনার ফসল বলা যায়। এই ওজঃগুণ বোঝার প্রয়োজনে বিভিন্ন কবিতার কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত করা যাক :

‘আমি ঊষার অস্পষ্ট আলোকে নিজেকে বিশ্লেষণ করি–

… আমি বাস্তবিক ভয়ংকর’ …

 ‘আমি গত ১০ বছর ধরে পৃথিবী-বহির্ভূত এক সভ্যতার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আছি’

‘আমি চাই লোকে আমাকে বিকট অগ্রাহ্য করুক’

কখনো শ্লেষে টইটম্বুর হয়ে বাজারগণ্য কবি ও তাঁর কবিতার অন্তঃসারশূন্যতাকে নিশানা করেছেন যেন : 

‘আমাদের স্বপ্ন হল প্রত্যেক গ্যারেজে একটি করে গাড়ি/ এবং প্রত্যেক টেবিলে পালিশ করা ময়দার রুটি/ দুটি চিকেন’..

‘বঙ্গদেশ টুপিপ্রদর্শক দেশ, এই দেশে সর্বাধিক বিক্রিত বস্তু টুপি।’

কবিতা লেখা আরামখেকোদের কাজ নয়। মধ্যবিত্তমদিরতায় আচ্ছন্ন থেকে কবিতা লেখার যে প্র্যাকটিস, তার বিপরীতে, তার অস্বীকৃতিতেই গড়ে উঠেছিল তাঁর কবিতাপ্রেম। বিড়ম্বনাকে আত্মগত করেই তিনি পথ চলেছেন। প্রথাগত ধ্যানধারণাকে তল্পি করে তার কবিসত্তার কোনো আন্দাজি মূল্যায়ন গড়া যাবে না। তাঁর কথায়, ‘কবিতা আমলাতন্ত্র, দীর্ঘসূত্রতা এবং চ্যানেল ও লালফিতার নাগপাশ থেকে মুক্ত, সম্পূর্ণ মুক্ত …।’ সারকথা হল, বাজারসর্বস্ব লেনদেনের কোনো সম্পুটে কবিতাকে বন্দি করা যাবে না।

আত্মখননের এক গভীর কর্মসূচিতে এবাদতি যেন, কবি শম্ভু রক্ষিতের কবিপ্রতিভার কিমিয়াকে তেমন বিশ্লেষণেই খুঁজতে হবে। ‘poetry of intention’, হ্যাঁ, নির্দ্বিধায় বলতে হয় এমন অভিপ্রায় থেকে বাড়বৃদ্ধি ঘটেছে তাঁর কবিতার। বোদলেয়ারীয় নন্দনতত্ত্বের ধারণা অনুযায়ী বলা যায়, তিনি নিছক কবি নন, একজন Poet-alchemist. কোন এক গোপন  জাদুময়তার ঘেরে, সান্ত পরিধিতে যেন তাঁর কবিতার হাড়মাস সংগৃহীত হয়। অ্যাফরিজম নেই, তাঁর কবিতায়  যা আছে তা হল অভিনব কায়দার কৌশলী অন্তর্ঘাত। ভূতগ্রস্ত তথা অতীতকাল-সংক্রান্ত(Preterite) কৌতূহলকে ছেনেছুঁয়ে তিনি আধুনিক কবিতার সারকে মজুত করেন। আদিরূপাত্মক ভাবের ঐশ্বর্যঘন উপাদানকে পুরোদস্তুর কাজে লাগান তিনি। এমন এক উদ্ভট পরিকল্পনা থেকে তাঁর কবিতার বাগরীতিতে এক ধরনের hallucinating deformation গড়ে ওঠে, ঐন্দ্রজালিক নির্মিতির আবহে জন্ম নেয় কবিতা। আত্মঘাতী ক্লান্তি নেই, অবসাদ যেন থেকেও নেই,  তাঁর আছে আত্মনিষ্কাশনের (hollowing out) তুমুল উদ্যোগ। আর এ পরিশ্রমী উদ্যোগে সামিল হতে গেলে নির্জ্ঞান মনের যে বিরল কেরামতি লাগে, অধিদৈবতকে চূড়ান্ত ব্যবহারের জন্য যে স্বজ্ঞার আয়োজন অবলম্বিত হয়– কবির সে ভাবৈশ্বর্য ছিল। সে কারণেই তিনি এ সময়ের  বিরলতম বিরল কবি।

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment