যা-তা খাতার পাতা
আমার একটা প্রিয় খাতা আছে বহুদিন। মোটা কাগজের বেশ মোটা একটা খাতা। আমি বলি ‘কাঁচামালের খাতা’, কখনোবা ভালোবেসে ‘যা-তা খাতা’। মশকরা করি হিন্দিতে, “ইয়ে খাতা যা-তা চীজ খাতা হ্যায়” আর যখন যা মনে হয়, তখন তাই-ই সে খাতায়। খায়ও সে । ফলত তার পাতাগুলো বদলে যায়, প্রায়শই। এক ছবি হতে হতে কেউ হয়ে যায় অন্য আরেক ছবি। একটা ক্ষুদ্র সম্ভাবনার দাগ নিয়ে কেউ একা পড়ে থাকে অনেক মাস ও বছর। কেউ কেউ চলে যায় অন্য মাধ্যমে, সংসার পাতে। কেউ ছিঁড়ে যায়। ক্কচিৎ হারিয়ে গ্যাছে এই ভাবে যত্নে রাখা থাকে কেউ। কিন্তু সব পাতাই আসলে একটি চিরকালীন অপেক্ষায় থাকে – কাঁচামাল যেমন অন্তিম ও অনন্ত অপেক্ষায় থাকে পূর্ণতাপ্রাপ্তির।
যা-তা খাতার এই বদলে যাওয়া পাতাদের অসমাপ্ত কিছু দলিল রাখা থাকলো এখানে, ক্লাস ওয়ানে যেমন রমাদিদিমনি বড়ো হয়ে কে কী হতে চাই টুকে রাখতেন রুলটানা কাগজে।
০৭/০২/২০২৪
পৃষ্ঠা ৪ ও ৫
বদলপাখি একটা পকেট হয়ে বসেছিলো পাতায়। বহুদিনই ফাঁকা ফলতঃ প্রতিশ্রুতিপূর্ণ। সেখানে গুঁজে রাখলাম লকডাউনের সময়ে জমিয়ে রাখা খালি সিগারেটের প্যাকেট কেটে বানানো খুদে কার্ড। নাছোড় প্যাস্টেল ঘষে ঘষে তাতে রঙ ধরালাম এক ঢাল। ফাঁকা ফলতঃ প্রতিশ্রুতিপূর্ণ।
১৪/০২/২০২৪
পৃষ্ঠা ৮ ও ৯
তিনজনের শরীরেই অ্যামাজন থেকে নেমে এলো অ্যাক্রেলিক পেনের মতো কাঁচা পাকা সবুজ। কালো দিয়ে ‘সবুজ’ লেখা শেষ হলে, সবুজ দিয়ে ‘কালো’ লিখতে লিখতে ভুল করে সবুজ দিয়ে ‘সবুজ’ লেখা হয়ে গ্যালো। মনে হলো, দ্বর্থ্য ভাষায় ইতিহাস লেখা হচ্ছে, এই সময়ের।
২৮/০২/২০২৪
পৃষ্ঠা ৪ ও ৫
খুদে কার্ডকে উপুড় করে তার ওপিঠে খুব রাগারাগি হলো কলমে কালোতে। আর ক্যাওস জমতে জমতে দ্যাখো একটা বাংলা শব্দ হয়ে গ্যালো কেমন চোখের সামনে। বদলপাখির ডিম এখনও পকেট আগলে খুকুপিসির রানি কালারের বেনারসী। বাকীসবও চুপ, আগের মতোই।
৫/০৩/২০২৪
পৃষ্ঠা ১০ ও ১১
আকাশ থেকে কালো শব্দ নেমে এলে, রাস্তায় পড়ে থাকে অজস্র লাল শব্দ। মানুষের ভীড়ে মনে হয় রক্ত পড়েছে পরিযায়ী পাখিদের পা থেকে সেই কবে। আর আমরা যারা দাঁড়িয়ে ছিলাম, তাদের জন্য লিখে রাখা ধিক্কারলিপি ঢেকে যায় কালো জল মেশানো ভেজাল তুলিতে।
১৭/০৩/২০২৪
পৃষ্ঠা ১০ ও ১১
অক্ষর দিয়ে অক্ষর ঢাকি, কিছুটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো। ব্রাশ পেনের মুহুর্মুহু আঘাতে পাতার সাদা অংশে শানিয়ে তুলি আমার আক্রমন। ওয়াটার ব্রাশকে ব্যবহার করি ছোটো ছেলের বায়নাকরা নকল কান্নার মতো। আর চোরের উপর রাগ করে মাটিতে ভাত খাবো বলে একটা চোখ এঁকে দিই বড় করে।
১৭/০৩/২০২৪
পৃষ্ঠা ৮ ও ৯
পিছনবাগে পাতা উল্টাতেই তিনজনের অন্যরূপ। যেন ফেলে যাওয়া কার্তিক ঠাকুরের মতো ঠায় ভিজেছে বটতলায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। পাশের পাতাকে জাপটে ধরে এক নিরুপায় ছবি এঁকেছে বাকিতে জমিতে। আমি তো কিছুই করিনি শুধু জল শুকিয়ে যেতে দেখেছি গরম হাওয়ায়।