বাপি গাইন-এর কবিতা
১
লোকটা সিলিং জুড়ে আয়না লাগিয়ে ছিলো বেডরুমে।
বালিশ ছাড়াই তার অভ্যাস হয়ে গেছে এখন।
ডাক্তারবাবুর বারণ।
আরো অনেক বারণের মধ্যে একমাত্র বালিশটাই ছুঁড়ে ফেলা গেছে।
বালিশ, নির্জন আসবাব, প্রতিবাদ পারেনি।
না প্রতিবাদের ভেতর হু হু মেঘ, মেঘভর্তি তুলোবীজ, বৃষ্টিহীন তুলোবীজ …
২
কীভাবে হৃদিকে বোঝাবো
যতই বিষয় দিয়ে আড়াল করি পেট
প্রিয়তম, সব নেশা ছুটে যায় ইহজন্মের।
সন্ধের দিকে ঝুঁকে পড়া বাবাটির চোখে
আজও একফালি ছাদ লেগে থাকে।
আমি তার যোগ্যতর সন্তান, কবিতা লিখি।
কতদিন লিখবো – বলতে পারিনি।
অন্ধকার ঘনিষ্ঠ হলে বাবাকে দেখেছি
মায়ের ওষুধ আর আমার শিক্ষার পিছনে দৌড়ে দৌড়ে
তার জিভ বেরিয়ে গেছে
যৌনতাবোধ মরে গেছে তারও বহু আগে।
আজ আমি সেই বাবার হাত ধরে প্রথম বসেছি।
একটা ছাদের খুব কাছে
আমাদের অভিনীত সন্ধেগুলো
অদ্ভুত ভাবে মুখস্থ বলছে বাবা ।
৩
বাপি গাইন একটা সমস্যা।
আর তুমি সমস্যায় পড়েছ।
জীবনে পড়েছ ভুল করে।
এই গাঢ় পাহাড়ের দিকে দেখো বন্ধু
আবহাওয়া পরিবর্তনের দিকে দেখো।
দু’তিন পেগ সূ্র্যাস্তের পর
তুমি কীভাবে ঝুঁকে পড়ে বুকপকেট দেখছ।
দেখছ সিঁড়ি যার দুদিকেই আসা যাওয়া করা যায়।
সিঁড়ির কোন দিকে যেতে চাইছ তুমি?
রেসের মাঠে এসে আমাদের চীৎকার করার কী আছে
একপশলা হাওয়া ছাড়া আমাদের খরচের কিছুই নেই।
এতদূর ঠেলাঠেলি আর মৌনমুখরতার শেষে
আজ জুতো খোলো, চলো হেঁটে আসি
দক্ষিণ মাঠে আমাদের জন্য শীতের রস রাখা আছে।
৪
শরীরের খেলনা ভেঙে কেঁদে উঠছে অবুঝ শিশু
বাইরে অপ্রকৃতিস্থ জল বাইরে যে যার নিজেই রুমাল
ঢেউ দিচ্ছে আর এই দুহাত কেবলমাত্র পরিত্রাণ নয়
যা ছিলো অথৈ সাদাপৃষ্ঠার নীচে
যা ছিলো সকল মেঘের পিছনে একটি স্পর্শ অন্ধের।
তবু তো খেলনা মাত্র, অস্হির কোনো অসুখের
নীচে আটকে যাওয়া ফড়িংয়ের আয়ু
কোথাও যাবেনা তবু মিথ্যে এই আগুনের ছটফট।
৫
নিভৃত প্রশ্নের আলোয়
মৃত্যু নিয়ে অহেতুক কষ্ট পাচ্ছ তুমি
জীবন যেভাবে সম্ভব যায় নিজেকে অতিক্রম করে
প্রকৃতির গর্ভে সেভাবে কিছুই অপচয় হয় না।
প্রতিটা উত্তরের পর তাই
যে প্রশ্নটির মৃত্যু ঘনিয়ে আসে
অজ্ঞানতাবশতঃ তার জীবনপ্রণালী লক্ষ্য করি
দেখি – জন্ম ও মৃত্যুকে একমাত্র খিদে দিয়ে প্রশ্ন করা যাচ্ছে
অর্থাৎ এই প্রশ্নমুখর খিদের অজ্ঞানতাই জীবন
জীবন আমাকে ভুলতে বসেছে পথেঘাটে।