বহতা অংশুমালী মুখোপাধ্যায়

বহতা অংশুমালী মুখোপাধ্যায়-এর কবিতগুচ্ছ

 

এলাম্নি মিট

শেষমেশ সে এলো না।
আমরা তার হাত ধরে ঝোলাঝুলি করলাম
ফেরার রাস্তায় দেখি কড়া মদ্যপ রোদ উদ্যত চাবুকে
দুপুরকে পেটাচ্ছে, যে দুপুর তার বউ নয়
এই মফস্বলের দুপুর
যার কোমরে মেদের ঘামে চিকচিকে হঠাৎ কামনা
শান দেওয়া বাড়িগুলোর ঠাণ্ডা মেঝেয় কারা সারি সারি ঘুমোয়?
উঁকি দিলাম, অন্ধকারে দেখাই গেলো না
শেষমেশ সে এলো না
আমরা তার পা ধরে বলতে গেছি
“দেহি পদপল্লবম উদারম”
কিন্তু তার পায়ে ব্যাখ্যাহীন চোট
তার ব্যাণ্ডেজ খুললেই সে কি গন্ধ
আর ব্যাণ্ডেজের মধ্যে আমাদের কবেকার একতাড়া চিঠি
সেই গন্ধে পুরো পাড়া ওপাশ ফিরে শুলো
তুমি কাল গেছলে
আমি আজ গেলাম
তুমি কাল উড়ে যাবে আবারো
কলেজের বন্ধুদের এই একটা দিন
একখানা আজব বিকেল
উদ্গত অশ্রুর মতো আমাদের মিনতি অচল
বাল্যপ্রেম
অভিমানিনী প্রেম
ক্যান্সার হলো বলে হোমিওপ্যাথিই শুধু খেলো
বারান্দায় ঠেস দিয়ে শেষ রোদে দাঁড়ালো খানিক
কলিংবেল বেজে গেলো, এবার খুললো না
কিছুতে এলো না

 

তোমার বিপণি মনে পড়ে

অপরনগরে যেতে তোমার বিপণি মনে পড়ে
মনে পড়ে লণ্ঠণের আলোয় রহস্যময় ছায়া
সমুদ্রের ধারে ধারে লবণাক্ত হাওয়ার দাপটে
কেনাবেচা দিতে দিতে আমার মুখের দিকে চাওয়া
তোমার হঠাৎ কোন মোহময় রূঢ় অত্যাচারে
ঠোঁটের রক্ত থেকে লোনা স্বাদ পায়ের অবশে
অপরনগরে যেতে তোমার বিপণি মনে পড়ে

 

যত ডোজ বেদনার বীণা

বাইরে বসন্ত দাউ দাউ করে জ্বলে
প্রবল তেষ্টার মুখে পথ্যের সুপ
জীবনের পরম রস মনে হয়
হঠাৎ গানের খটকার গমকে খিদে আসে
নার্সটি প্রশ্ন করে “আজ কত ডোজ বেদনার বীণা
ইন্ট্রাভেনাসে দেবো? ”
আমি মনে করতে চেষ্টা করি কাল রাতে কে এসেছিলো?
যার ঠোঁট কালচে?
নাকি যিনি বটফলের মতো
লাল লাল টুনি বাল্ব জ্বালিয়ে রাখেন?
এঁদের প্রেম নালীতে আটকে থাকে
যন্ত্রণা ছাড়া গলে না
যন্ত্রণা ছাড়া নামে না
যন্ত্রণা ছাড়া বার হয়ে যায় না
ফেরে না মাটিতে

 

আমি আছি, পরে ফোন কোরো

এভাবেই একটা ভয়ের গল্প লেখা হয়
একটা সমুদ্রে ঘেরা শহর
তার সব ওষুধের দোকান সন্ধে ছটার মধ্যে বন্ধ
তার সবকটি অফিস আসলে বড় বড় শিশুদের ডেকেয়ার
তার সব কটি ব্রথেল মেয়ে পুরুষের সাম্যে ভরে গেছে
যখনি ফোন করি, তখনি উত্তর পাই
“আমি আছি, পরে ফোন কোরো”
যখনি দেখতে চাই, আছে কি না আছে
শহরের চারপাশে সমুদ্র মাংসল ঘটপত্রী পাতার মতন
অদ্ভুত ফুলে ফেঁপে ওঠে
এভাবেই একটা ভয়ের গল্প লেখা হয়
বুঝতে পারি না এই সমস্তটা হাসপাতাল কিনা
সকালে ওঠার পর সব্বার চুল
মাঝখানে সিঁথি কেটে দুখানা বিনুনি দিয়ে বাঁধা
নার্স দিদিমণি যেন আশির বুড়িকে ফের ইস্কুল দিনে নিয়ে গেছে
মাঝে মাঝে কারা যেন রোঁদে আসে, বলে কিরকম
বোধ করছেন আজ, কেমন শরীর?
কোথায় শরীর?
কেন সক্কালবেলা এত নির্ভার মনে হয়?
অভ্যস্ত বেদনায়?
আর রাত্তিরে
প্রহরা বদল কালে
কেবল টাইপ করা যায়
“এইবার একবার এসো”
সঙ্গে সঙ্গে বেজে ওঠে ফোন
“আমি আছি, পরে ফোন কোরো”
তুমি আছো? আছো বুঝি?
যেই দেখতে যাই
জানলার ফাঁক দিয়ে দেখি পূর্ণ চাঁদ সরে গেছে
ডেনড্রাইটের বিজ্ঞাপনে
আমারই থুতুতে সাঁটা
উপচ্ছায়া প্রচ্ছায়া শুধু ঝুলে আছে

Facebook Comments

Related posts

One Thought to “বহতা অংশুমালী মুখোপাধ্যায়-এর কবিতগুচ্ছ”

  1. অর্ণব চট্টোপাধ্যায়

    ভালো লাগলো

Leave a Comment