বর্ণালী দত্ত

বর্ণালী দত্ত’র কবিতাগুচ্ছ

 

১.

যেখানে পথ নেই

 

মৃত্যুর পথে যেতে ভয় পাই। তীব্র মাথা যন্ত্রণার ভিতর তোমাকে মনে করা আরও ভয়ানক। রেল লাইন পার করলেই তোমার বাড়ি পৌঁছানো যাবে, তারপর একটা ছোট ডোবা, তারপর তুমি। শান্তির জন্য তোমার বাড়ি পৌঁছে যেতে চাই বারবার কিন্তু ডোবা পার করতে পারিনা। আমার অনির্দিষ্ট বাড়িতে কোনো সচল জীব আসেনা যখন থেকে বড় হলাম। তুমি অবধি পৌঁছানো বেঁচে থাকার চেয়েও জটিল ভাবলে আশ্চর্য হই।

 

 

২.

তুমি একটি অবলুপ্তির মত

 

একতলা বাড়ির মাথা ভেঙে যাওয়ায় যে অপমান লেগে থাকে, সেখানে মার্কেজ আমি লুকিয়ে রাখি তোমাকে। খ্রিস্ট ধর্মের প্রতি আমার যে প্রবল টান, ভক্তি, ভগবান যীশুর প্রতি আমার যে বিশ্বাস— এ সবই তো আমার বয়ঃসন্ধিকাল থেকে তুমি আমার মধ্যে চালান করে গেছো। আমার ধর্মের ভিতর ঢুকে গেছো তুমি, আফিমের নেশার মত আমার চোখের ভিতর লাল হয়ে উঠেছো। মার্কেজ, আমি ভয় পাই তোমাকে বলতে— নতুন কোনো জন্মলগ্নে তোমার বুক পেতে আমার ইচ্ছা হয়, মাথা ভাঙা বাড়ির খাটের তলায় আমি তোমাকে লুকিয়ে রাখি।

 

 

 

৩.

জেদ একটা মাছের কাঁটা

 

জেদ করার মত আর কিছু নেই বলতে এখনও জিভে আটকায়। আমার মারাত্মক গলা ব্যথা নিয়ে তোমার সমস্ত কথায় সম্মতি জানিয়ে যাওয়া এখন নতুন একটা জেদ হয়েছে। নিজেকে রোজ উগড়ে ফেলা এই গলা ব্যথার মতোই অসহ্য। এত মাছের বাজার ঘুরে বেড়িয়েছি একসাথে, যৌনতা নিয়ে কথা বলেছি। অথচ তুমি আমি কেউ জানতে পারিনি— গলায় একটা কাঁটা বিঁধে আছে।

 

 

 

৪.

আমার ঘাতক হয়ে ওঠা

 

ঈশ্বর মানে তুমি, খুনিও। আমার বেঁচে থাকার যোগান রোজ একবার করে তোমার থেকে নিয়ে আসি। তুমি ক্রমশ শুকিয়ে আসছ দেখে রোজ পেটে ঘা দি। গলা টিপে রাখি বহুক্ষণ। তারপর গিলে নি একগাদা থুতু। অনেকদিন খিদে পায়না। পেটে ঘা দি। তোমার শুকিয়ে আসা শেষ হচ্ছে। আত্মহত্যা করছি আমি।

 

 

 

৫.

যে অভ্যাসের প্রচার নেই

 

আমার সাড়ে তিন বছরের নিঃসঙ্গতার জীবনে একবারও তোমাকে পাইনি বলে আমার কোনো অসুখ নেই। তোমার প্রতিটা প্রেমিকার কথা আমি জানি। সরলতা জানি, ব্যক্তিত্বের গাম্ভীর্য জানি। আমার প্রিয় কোনো শহরের রাস্তায় হেঁটেছি একসাথে, রেস্তোরাঁয় পাশাপাশি বসে ভাগ করেছি বিদেশি খাবার। উভয়ের পরিচিত জায়গাতে কতবার তুমি এসেছ, আমি চেয়েছি তুমি আসো। কতবার তোমার থেকে চেয়ে নিয়েছি জল। কিন্তু তোমাকে যে চাইব এমন কী সামর্থ্য আছে আমার!

 

 

 

৬.

প্রিয় কিশোরীকে

 

বৃষ্টির দিনে বিকালের হাওয়ায় একটা বিষণ্ণতা থাকে। কিশোরী তার সুতোর মত সরু শরীর নিয়ে লেপ্টে থাকে বিছানায়। কদম ছাঁট চুল আর একটা বৃহৎ মাথা নিয়ে সোজা হয়ে থাকে কিশোরীর অনির্দিষ্ট আয়ু। বৃষ্টি এলে দৌড় দেয় ওর গর্তে ঢুকে যাওয়া চোখ— পাহাড়ের দিকে। একটা পাইনের বন পার করে চলে যায় চা বাগানে। বৃষ্টি থামলে একা চোখ ফিরে আসে…

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment