পৌষালী চক্রবর্তী

পৌষালী চক্রবর্তী’র কবিতাগুচ্ছ

ঠিকা শ্রমিকের ইস্তাহার 

মথুরানগর থেকে বসন্তে আসেনা আর
 কোনই মস্তান
মুরলিবিহীন পথ
   ছয়লাপ শুধু আজ ছাদ পেটানোর গানে
   
  ধীরে ধীরে ভরে ওঠে শহরের মেধাবী শূন্যতা

তবু তো সহজ নয় ভাবি
বেদনার পরিবর্তে এই নির্মোহ নির্মাণ...

মাঝেমাঝে
ওদের,

কেউ কেউ পড়ে থাকে নষ্ট ঘিলু 
যেন থ্যাঁতলানো আপক্ক ফল
অক্ষিকোটর ছেড়ে ঠিকরানো তৃণগুল্ম- তাকিয়ে থাকা
আর প্রিয় স্পর্শহীন কোনো
                                 সমাধিস্থল
নৌকাপটু ভীল তরুণীকে
চেনাতে চাইলে কেন ট্র্যাফিক সিগন্যাল!


খ্রিস্টজন্মের কথা

চিনার গাছের পাতা, তোমার উড়ন্ত ছায়ার দিকে 
আমার কেবলই মনে পড়ে
ক্রুশ কাঁধে হেঁটে যাওয়া 
মেরীর সে ছেলেটির কথা

গ্রাম নদী কন্দরের বুক চিরে,
মেঠো পথ পড়ে রয়েছে
তাহার বাণীর মত উত্তেজনাহীন 

তাকে দগ্ধ করতে পারে,  আছে কোন রোদ?বলো, চৈত্র মেঘ

যে দুটি পলকা হাত 
কাঠ কেটে,কাঠ জুড়ে বানিয়েছে ক্রুশ 

পেরেকের নীচে শুয়ে তাকেও সে বলেছিল 'প্রেম হোক, প্রেম হোক!'

তার সেই মৃত্যুগামী ঠোঁটে
সভ্যতা তুলে দিতে ভুলেছিল
একবিন্দু জল...


বৈবাহিক 

যতবার ভিড়ে ভেঙে গেছ তুমি
এনেছে তোমাকে খুঁজে আমার শপথ
তবু তুমি  ইস্তাহারে 
গুঁজে দাও পুরীষ, পালক
যেন তা বাতিল অতি, দুর্ভেদ্য চিহ্নক!

তারপর চন্দ্রকিরণ ছেড়ে 
খুঁজে যাও
লুপ্ত অন্ধকার 
যুদ্ধের নশ্বর আওয়াজ...
সুচারু ছুরির ফলা,জহুরি ঘাতক


প্রতিটি হত্যার শেষে আমাকেই ডাকো
হাজিরা খাতার মতো
'মিথ্যেবাদী', 'গুপ্তহন্তা'
বর্ণময় বাক্যছটায় 
                  অপরূপ তছনছ কত


আত্মদীপ

মেঘে মেঘে হিরণ্যজল, মহাকাশে হংসযূথ যথা
কুলালচক্র ঘুরে তুলে আনছে ত্রিকোণ উপদ্বীপ 
নৈরামণি আলো জুড়ে কে তোকে রমণ দেবে আ লো ডোম্বিনী!
এখানে ঈশ্বরী লিখি, ভূর্জপত্র জুড়ে তার বাক্ আরাধনা
পঁউয়া খাল কেটে ঢোকে কুম্ভীরের পারা
চক্ষু খায় , যোনি খায় বিকটদশনা 
অলিন্দ গলে যাচ্ছে পথে পড়ে নির্দুগ্ধ স্তন
মনুষ্য নিকটে আসে
সহস্রার নিশিপুষ্পে ডোম্বি লো, তুই অন্ধ হয়ে যা


একলব্য

অনন্তপতনশব্দের পাশে , আচার্য, তুমি খেয়েছিলে জ্ঞানবৃক্ষের ফল

আমার তো ভুখাপেট ছিল

দরিদ্রের ব্রতকথা হয় না, জানোই


আমি আরও সরে যাই , লোকাপ্রতিভা থেকে দূরে

উপকথার রেলবাজারের পাশে মেধাবী আঙুল আমার কাটা পড়ে আছে

ক্ষুধার্ত ব্যাধের আঙুল শরাচ্ছন্ন দিগন্তে তবু হাঁস হয়ে ওড়ে।
Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment