পার্থজিৎ চন্দ

পার্থজিৎ চন্দ’র কবিতাগুচ্ছ

রাত, অক্টোবর

(উৎসর্গ – হিউ এভারেট)

 

ম্যাজিশিয়ানের তাঁবু

 

বিস্ফোরিত ইঞ্জিনভ্যানে ম্যাজিশিয়ানের তাঁবু আসে, কালো কবুতর, রাস্তা ছিল
ইঞ্জিনের চাকা দিয়ে বাঁধা। চাকা গড়িয়েছে আর রাস্তা হাড় পেতে অপেক্ষা করেছে
রাস্তা গ্রাসে পুরে বহুদূরে ম্যাজিশিয়ানের তাঁবু এসেছিল বিস্ফোরিত ভ্যানে
কিছু নেই শুধু মুর্দাখোর তুলে এনেছিল ছায়াকবরের স্নেহ-মাখা স্নায়ু
জাদু-টুপি থেকে কালো কবুতর তীব্র সংশয়ে…সুতীব্র পায়রা…
নিজের ছায়ার দিকে বারবার ছুটে চলে গেছে, তার গায়ে লেগে থাকা স্মৃতি
ঠুকরে খেয়েছে…ছায়া-খতমের খেলা নিয়ে জাদুকর রাত্রি ফুঁড়ে
চলে এসেছিল; তার কিছু মৌল-জাদু – ঝরনার জল যেন
স্থির হয়ে রয়ে গেছে রাত্রিপাথরের গায়ে – বশীকরণের টুপি
মায়া-খতমের খেলা শেষে ফিরে যাচ্ছে ইঞ্জিনভ্যানে চেপে, শুধু
শিকলের ধাতুর ঝংকার রয়ে গেল, রয়ে গেল শব্দহীন মৃদঙ্গের বোল

চলো ইঞ্জিনভ্যান চলো, মুর্দাকলোনির মাঠে…ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে…সমবেত দর্শকের ঘুম

 

 

 

কৌতূহল

 

তোমাকে পেয়েছি আমি কূপ খননের শেষে অষ্টধাতু অবয়বহীন বিষ্ণুমুরতি
পশুহীন বনে নিশাত করাতে কেন এত রক্তদাগ, চাঁদ
পলল-শিলার বুক ফুটো করে ঢুকে পড়েছিল, ফিরেও গিয়েছে

সেই চাঁদ আর চাঁদহীন জ্যোৎস্নার যৌথ বিবৃতির শেষে একমাত্র শিলাকান্থ তুমি

শিলা চুরমার করে আজ (ছায়াচিত্র খোঁজে) তোমার চোখের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে

লাফাঙ্গার তীব্র কৌতুহল

 

 

 

পটুয়া

 

কথা-বলা নৌকা এসে রেখে গেছে সামান্য কয়েক দলা মাটি
বাটাম-ছিদ্রের কাছে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে মাঝি, তাই
এক-স্তনী মূর্তি গড়ে দিতে এসেছে পটুয়া, বারবার ধোঁকা খাচ্ছে
ভারসাম্য টলে যাচ্ছে, জোড়া জোড়া হাত জোড়া চোখ জোড়া চরণকমল

দুই দিকে কার্তিক ও গণেশের দুধ খোঁজা ঠোঁট
এক-স্তনী প্রতিমার স্তনবৃন্ত চিরে দু’ভাগ করছে অবাক পটুয়া

 

 

 

 

মৃত গ্যাসবেলুনের আত্মা

 

মৃত গ্যাসবেলুনের আত্মার মধ্যে ঢুকে পড়েছিলাম একদিন সন্ধেবেলায়। উলম্ব ছুঁচের চুমু বেলুনের ত্বক ফুঁড়ে গেলে চুপসানো বেলুনের মধ্যে, অর্থাৎ বেলুনের মৃত্যুর পর এক ভ্যাকুয়মে আমার জন্ম হয়েছিল। ‘নেচার অ্যভয়েডস ভ্যাকুয়ম’ – এই খতরনাক আপ্তবাক্যটি উৎসবে বিলাসে ব্যসনে রাজদ্বার থেকে শুরু করে শ্মশানে চুল্লুর-ঠেকে খোঁড়া কুকুরের মতো ঘুরেই চলেছে। ব্রাউনিশ কর্নেটোর থেকে দূরে বেলুনওয়ালার পাশে স্থির দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি পালসার, একটু পরেই যেন সে আমাকে সুদ্ধু এই মৃতবেলুনের আত্মাকে পিলিয়নে নিয়ে বেড়াতে বেরুবে। আপাতত যতদূর দেখতে পাচ্ছি সরলরেখার মতো নদী…মাটি ছুঁয়ে দু’পারের গৌরাঙ্গবাতি চিনতে চিনতে বয়ে যাচ্ছে জলের প্রবাহ…মাঝে মাঝে নড়ে উঠছে ভিড় দুলে উঠছে এই মৃত গ্যাসবেলুন থেকে শুরু করে পালসার আইসক্রিম-পার্লার…কিন্তু এই জান-পহেচান ছেড়ে সব কোথায় চলেছে? তা হলে কোথাও কি আজও অচেনা শূন্য পড়ে আছে, মৃত বেলুনের মত একা আর এই স্রোত আত্মহত্যাকামী!

 

 

 

জালিকা-বিভ্রম

 

জ্যাকেট-পরানো নাসপাতি, ধাক্কা দিয়ে ঘুম থেকে তোলো। উল্কি ও উল্কার মধ্যে দ্রবীভূত থাম, প্রতিটি ফলস্‌-সিলিঙের গায়ে ধোঁকা-দেওয়া তারার শরীর, প্রতিটি অক্সিলারি-থাম মুহূর্ত-ম্যাজিকে মায়াতন্ত্র বুকে ধরে আছে…জলবাতাসের হাওয়া দিচ্ছে, একে একে জ্বলে উঠছে অসহ্য অস্বচ্ছ কাচের হাতছানি; জ্যাকেট-জালিকা ফুঁড়ে উঁকি দেয় নাসপাতিটির নিটোল আদল। নিটোল আদল, ধাক্কা দাও…ঘুম থেকে তোলো। জালিকা-বিভ্রমের সুতো ছিঁড়ে খাচ্ছে রাতজাগা শূককীট

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment