ছায়াহরিণের বন
১.
মাঠ ভেঙে জল ভেঙে পুরোনো সঞ্চয় ভেঙে এতটা এসেছ
এবার জিরোও তবে, স্নান সেরে এসো
নধর ফুলের মাংস নিভু আঁচে উনুনে বসিয়ে
নিজের ছায়ার সঙ্গে জুয়া খেলো কিছুক্ষণ
বিড়ি টানো, কাশো
ছায়াহরিণের বনে অস্ত্র হাতে কখনো যেয়ো না
হোক না বেসুরো, গান ধরো
শরীরে লুকোনো আলো দিয়ে
রাত্রির ঠোঁটের ধার ছেঁটে দাও যত্নসহকারে
২.
নিপুণ সেলাই থেকে, কেকা থেকে
কী কৌশলে নিজেকেই সরিয়ে নিয়েছ
যেন দরজা ছিল, আর নেই
আঘাতের বিপ্রতীপে রক্তমাখা বাতিদান ঝোলে
ঘোরালো হাওয়ার স্তন কী দিয়েছে মুঠো মুঠো
শুকনো পাতা ছাড়া
ধিকধিকে আগুন জাগে…
লাল হয়ে ফেটে পড়ে গলাকাটা মাটির ময়ূর
৩.
যাকে অন্ধকার ভাবো সে তোমারই ছায়া
মৃদু হাসি, দাঁত নেই যার
তাকে আরও ঘষে-মেজে উজ্জ্বল করেছ
তোমার-আমার কারুকাজে এত অস্ত্রদাগ লালনের ক্ষত
মুঠো থেকে খসে গেছে মাত্রাছাড়া জলের লাগাম
চমকে চমকে ওঠো ঘুমে
শ্বাসের কাঠামো থেকে ঝাপসা কবুতর ঝরে পড়ে
৪.
বেশরম মাংসখণ্ড কুহু অব্দি গড়াতে দিচ্ছে না
আগুনে চাপাও তবে, সুগন্ধী মশলার মতো
একে একে যোগ করো লোকমুখে ছড়ানো কাহিনি
সন্তর্পণে দ্যাখো নেড়েচেড়ে —
কাটা স্তন, মরা জ্যোৎস্না, নিষ্করুণ মুঠো…
কীভাবে নিজের জন্য কান্নার ক্ষমতা তুমি হারিয়ে ফেলেছ
৫.
রক্তপাত সুনিশ্চিত জেনেই তো লোভে লোভে
জড়ো হয় অনিঃশেষ তুলোর পুতুল
এসব শূন্যতা স্রেফ তুড়ি মেরে রপ্ত করো আর
আঘাত নিঝুম হয়ে আসে
যেটুকু খাতির আজও রয়ে গেছে তা শুধু তর্কের
প্রেম নয়, স্বপ্ন নয়, তোমাকে বাঁচিয়ে রাখে দ্বিধা
আমাদের ছোঁয়া রিক্ত, বিস্মরণ অশ্বখুরাকৃতি
৬.
বিফল মাংসের চাপা হাসিগুলো স্পিরিটে চোবানো
কারুকার্যখচিত বোয়াম
ফরসেপের দাঁত থেকে লাফিয়ে স্ট্রেচারে নামছে
ভেজা বিড়ালের প্রতিধ্বনি
যেন ইচ্ছে বুকে শুয়ে ভেসে যাবে যতদূর ব্যথা
টুঁশব্দ করছ না তুমি
মরা সংলাপের গায়ে ঠেস দিয়ে রুগ্ন চুল আঁচড়েই চলেছ
আমার নিয়তি শুধু আয়না সোজা করে ধরে রাখা
৭.
অনর্গল খোয়ারির হাঁটুজল ভেঙে ফের উঠিয়ে এনেছ
সংশয় জরিপ করছে সিঁড়ি
ভয়ে ভয়ে ছুঁয়ে দেখছ
মাংসের তোরঙ্গ থেকে ঝরে পড়া কবরের মাটি
নকশাতোলা ঠোঁটের সেলাই
আমি তাকিয়েই আছি—
দেয়ালে টাঙানো হাসি খালি বিছানার দিকে যেভাবে তাকায়
দু-পায়ে জড়ানো সাপ
তছনছ করে দেয় লাল-নীল মাছের কেয়ারি