নবব্রত ঘোষাল

নিউটন-২

 কিংস স্কুল ও ক্লার্কের বাড়ি

সতের শতকের গ্রান্থাম ছোট ছোট সবুজ টিলায় ঘেরা অতি মনোরম এক টাউন এলাকা তবে সবকিছু ছাপিয়ে প্রথমেই নজর টানে চারশ বছরেরও বেশি প্রাচীন গথিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত সুউচ্চ সেন্ট উলফ্রাম চার্চটিলিংকনশায়ারের এই আধাশহর ও আধাগ্রামীণ অঞ্চলটিতে উল ইন্ডাস্ট্রি থাকায় এখানকার মানুষজনের সমৃদ্ধি চোখে পড়ার মতো বড়জোর দু-আড়াই হাজার লোকের বাস। গ্রান্থামের বাজারে ছুতোর মিস্ত্রির দোকান, কামারশালা, কসাইখানা, বেকারি, পানশালা ছাড়াও কিছু পান্থনিবাসও আছেইংল্যান্ডের উত্তর-দক্ষিণে চলাচলের প্রধান সড়কের মধ্যে পড়ে গ্রান্থাম। তাই অনেক পথচারীই রাত্রি যাপন করে এখানে।         

সপ্তাহের প্রতি শনিবার হাট বসেকাছাকাছি যেসব গ্রাম – বার্‌ক্সটন, গানর্‌বি, স্টোক-রচফোর্ড, কোলস্‌টারওরথ্‌, উলস্‌থর্প, সেখান থেকে মানুষজন ঘোড়ার পিঠে তাদের ক্ষেতের ফসল চাপিয়ে হাটে আসে। বেচা-কেনা হয়। গ্রান্থামের বাজার চত্বরে  সেদিন ভিড় জমে।   

ফি-বছর পাঁচটি মেলা হয় এই গ্রান্থামেইসেকারণে আশেপাশের মানুষজনের কাছে গ্রান্থাম টাউনের বিশেষ একটা আকর্ষণ আছে গ্রান্থাম তাদের বড় ভরসারও  জায়গাএখানেই রয়েছে এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের একমাত্র হাসপাতালটি। স্পিটল্‌গেট হসপিটাল  

চার্চের ঠিক উত্তরে প্রায় তিন শতাব্দী প্রাচীন, রাজা ষষ্ঠ এডওয়ার্ডের যে ফ্রি গ্রামার স্কুল, সেখানেই ভর্তি করা হয়েছে আইজাককে গোটা ইংল্যান্ডে এই স্কুলের যথেষ্ট সুনাম একশ বছরের কিছু আগে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব উইলিয়াম সেসিল ছিলেন এই স্কুলের ছাত্র। এখানেই পড়েছেন দার্শনিক হেনরি মোর, যাঁর লেখা বই কেম্ব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে পড়তে হবে আইজাককে এবং যাঁর সঙ্গে প্রত্যক্ষ আলাপ হবে কেম্ব্রিজে 

সেই সময় কিংস গ্রামার স্কুলের যিনি হেড টিচার, সেই হেনরি স্টোক্স-এর সুখ্যাতি শুনতে পাওয়া যায় গ্রান্থামের সর্বত্র। স্কুলে কঠোর নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলা হয়। প্রতিদিন স্কুল বসার ঠিক আগেই হয় প্রার্থনা সঙ্গীত প্রতি শনিবার থাকে ক্যাটেকিস্‌ম ক্লাস। ওইদিন চার্চে নিয়ে যাওয়া হয় সকল ছাত্রদের। ধর্ম বিষয়ক প্রশ্নোত্তরের মধ্য দিয়ে চলে শিক্ষাদান। রবিবার ‘লর্ডস ডে’। ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা পূরণের দিন নয়। দিনটি ঈশ্বর উপাসনার জন্য নির্ধারিতশনিবার চার্চে যে সকল ধর্মোপদেশ বা নীতিকথা (সারমন) শিক্ষার্থীরা লিখেছে, রবিবার স্কুলে এসে তা পড়ে শোনাতে হয় তাদের বোঝাই যায়, একেবারে পিউরিটান ভাবধারার অনুশাসনে বাঁধা আইজাকের নতুন স্কুলটি               

গ্রান্থামের হাই-স্ট্রিটের বেশ অবস্থাপন্ন এক ওষুধ ব্যবসায়ী, উইলিয়াম ক্লার্ক-এর  বাড়ির চিলেকোঠার ছোট ঘরখানায় থাকার ব্যবস্থা হল আইজাকের মিস্টার ক্লার্ক গ্রান্থাম টাউনের অত্যন্ত প্রভাবশালী একজন পার্লামেন্টারিয়ান পরপর দুবার তিনি  এই টাউনের অলড্যার্‌ম্যান অর্থাৎ মেয়রের সমমর্যাদার পদে নির্বাচিত হয়েছেন। গৃহযুদ্ধের বছর গুলোতে গ্রান্থাম বহুবার অশান্ত হয়ে উঠেছিলকখনো রয়্যালিস্টরা ক্ষমতায় এসেছে, তো কখনো তাদের হটিয়ে পার্লামেন্টারিয়ানরা। আইজাক যখন আসে, গ্রান্থাম তখন পার্লামেন্টারিয়ানদের হাতে। রাজনৈতিক অস্থিরতা অনেকখানি থিতিয়ে পড়েছে। মিস্টার ক্লার্ক খুবই ব্যস্ত মানুষ। আইজাকের সঙ্গে তাঁর দেখা-সাক্ষাৎ বড় একটা হয়না।           

হান্নার ছেলেবেলার বান্ধবী, ক্যাথরিন, উইলিয়াম ক্লার্কের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। সেই সুবাদেই আইজাকের এ-বাড়িতে আসা। ক্লার্কের বাড়িখানাও যেমন বড়সড়, সদস্য সংখ্যাও নেহাত কম নয়। ক্লার্ক ও ক্যাথরিনের তিন সন্তান। এছাড়া আছে ক্লার্কের আগের পক্ষের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। ক্যাথরিনেরও এটা দ্বিতীয় বিবাহ। তাঁর রয়েছে আগের পক্ষের দুই ছেলে ও এক মেয়ে এই সব পুত্র-কন্যাদের নিয়ে ক্যাথরিন ও ক্লার্কের যে বিরাট পরিবার, সেখানে নতুন আর এক সদস্যের আগমন ঘটল। ক্লার্কের বাড়ির সকলে তাকে আইজাক বলেই ডাকে।   

ভারী অদ্ভুত চরিত্র এই বালকটির! বড় একটা মিশতে চায় না সে কারও সাথে। যা কিছু দেখে, পাখি, জন্তু-জানোয়ার, গাছপালা, জাহাজ, মানুষ সেসবেরই প্রতিকৃতি কালো চারকোলে ফুটিয়ে তোলে সারা ঘরময়  তারমধ্যে নানা জ্যামিতিক চিত্রও রয়েছে – বৃত্ত, ত্রিভুজ, বহুভুজ চিলেকোঠার ঘরের চার দেওয়াল আর সিলিং হয়ে ওঠে আইজাকের ছবি আঁকার ক্যানভাস।  

গ্রান্থামে আসার পর প্রথম কটা বছর আইজাকের মোটেও ভাল কাটেনি চারপাশে বড় হই-হট্টগোল। শান্ত উলস্‌থর্প-এর সঙ্গে মেলানো যায় না। পরীক্ষায় শেষের দিকে স্থান হয় মনের মতো সঙ্গী-সাথীও কেউ নেই। সমবয়সী ছেলেরা আইজাককে বিশেষ পছন্দ করেনা। তাদের কেবলই মনে হয় – ছেলেটি বড্ড বেশি বুদ্ধিমান!   

ক্রমওয়েলের যেদিন মৃত্যু হয় সেদিন ইংল্যান্ডের ওপর দিয়ে খুব বড় একটি ঝড় বয়েছিল আইজাকের তখন পনের বছর বয়স। সেদিন সে ওই ঝড়ের তীব্রতা মেপেছিলপ্রথমে হাওয়ার গতির অভিমুখে একবার লাফিয়ে দেখল, এক লাফে কতটা দূরত্ব সে গেল। এরপর গতির বিপরীতে লাফ দিয়ে মাপল দূরত্বঝড় শান্ত হলে সে আবার একটি লাফ দেয়। তারপর খেলার সঙ্গীদের ডেকে তার লাফের মার্ক দেখিয়ে বলে, “ঝড়টি এক ফুট অধিক শক্তিধর ছিল!” আইজাকের কথা শুনে ছেলের দল তো হাঁ!    

জীবন সায়াহ্নে, স্যর আইজাক নিউটন লন্ডনের যে বিলাসবহুল বাড়িটিতে বাস করতেন সেখানে তাঁর সঙ্গে থাকতেন ভাগ্নি ক্যাথেরিনসৎ-বোনের এই মেয়েটিকে তিনি অত্যন্ত স্নেহ করতেন। ক্যাথেরিনের স্বামী, জন কনদ্যুইত, ঝড়ের তীব্রতা মাপার ঘটনাটি জানিয়েছেন। তাঁর মতে, এটিই ছিল আইজাক নিউটনের প্রথম ‘এক্সপেরিমেন্ট’!     

নিউটনের স্কুলজীবনের বিভিন্ন ঘটনা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়, উলস্‌থর্পের নিঃসঙ্গ বালকটির একাকীত্ব গ্রান্থামেও ঘোচেনি।            

ক্লার্কের বাড়ির চিলেকোঠার ঘরটাই তখন আইজাকের দুনিয়া। সারা দুপুর বিচিত্র সব কাঠের খেলনা আর যন্ত্রের মডেল বানায় সে হাতুড়ি ঠোকার খুট-খাট আওয়াজ ভেসে আসে চিলে কোঠার ঘর থেকে। লেখাপড়ার খরচ চালানোর জন্য, মা যে অর্থ পাঠান তার কিছু অংশ বাঁচিয়ে, গ্রান্থামের বাজার থেকে মেকানিকের প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি কিনে আনে আইজাক তার টুল-বক্সে ছোট করাত, হাতুড়ি, বাটালি, উকো, কী নেই! আস্ত একখানা যন্ত্রের দোকান বললেই চলে! 

জন বেট-এর ‘দ্য মিস্ট্রিজ অব নেচার অ্যান্ড আর্ট’ বইটি আইজাকের সংগ্রহে ছিল। নানা রকম যন্ত্র বানানোর কৌশল, রঙ প্রস্তুত প্রণালী, গিল্ড করা, কাচ কাটার পদ্ধতি, ইত্যাদির বর্ণনা আছে এই বইয়ে। একটি ছোট নোটবুকে আইজাক লিখে রাখে সেসব নোটবুকটি গ্রান্থামের বাজার থেকে আড়াই পেন্স দিয়ে কিনেছে সে। এই সময়ের একটি মজার ঘটনা জানা যায়। বেট-এর বই পড়ে আইজাক একবার  একটি কালো রঙের ঘুড়ি তৈরি করে এবং ঘুড়ির লেজে একটি লন্ঠন জুড়ে রাত্রিবেলা অন্ধকার আকাশে সেটা উড়িয়ে আশপাশের মানুষজনকে ভয় পাইয়ে দেয় রদিন গ্রান্থামের বাজারে এই ‘ভুতুড়ে’ আলোর কথা লোকজনকে বলাবলি করতে নাকি শোনা গিয়েছিল।           

‘দ্য মিস্ট্রিজ অব নেচার অ্যান্ড আর্ট’ বইটি থেকে চার-চাকার কাঠের গাড়ি,  জলঘড়ি, সানডায়াল এসব যন্ত্র বানিয়ে গ্রান্থামবাসীদের অবাক করে দেয় আইজাক।  তাঁদের দৃঢ় বিশ্বাস জন্মায়, বড় হয়ে এই ছেলে নির্ঘাত একজন ‘ভাল মিস্ত্রি’ হবে!  

সানডায়ালের নাভিতে আটকানো কাঠের গজালে সূর্য রশ্মি পড়ে ডায়ালে যে ছায়া ফেলে তা দেখে দিনের সময়ের আন্দাজ মেলে। আইজাকের সানডায়াল তো রীতিমত জনপ্রিয় হল ক্লার্কের বাড়ির ছাদে ও দেওয়ালে এরকম বেশ কয়েকটি সানডায়াল সময় জানিয়ে দিত ক্লার্কের বাড়ির লোকজন ও পাড়া-পড়শিদের। এই সানডায়ালকে ‘আইজাকের ডায়াল’ বলতেন তাঁরা।   

জীবনের শেষপ্রান্তে এসেও, সময় জানার জন্য স্যর আইজাক নিউটন, অনেক সময়ই ঘড়ি না দেখে, ঘরের মেঝেতে লুটিয়ে পরা সূর্যালোকের ছায়া দেখে সময় বোঝার চেষ্টা করতেন। ছেলেবেলার অভ্যাসটা ভুলতে পারেননি তিনি 

সূর্যের গতি, উত্তরায়ণ, দক্ষিণায়ন এবং পৃথিবীর বুকে সময়ের নিয়মিত আচরণ,  অল্প বয়সেই ধরা দিয়েছিল আইজাককে। স্বর্গ-মর্ত যে এক অমোঘ নিয়মে বাঁধা,  বালকটি বুঝে গিয়েছিল তখনই

কেম্ব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে আইজাক নিউটনের জুনিয়র, প্রায় বন্ধুস্থানীয় এক চিকিৎসক, উইলিয়াম স্টাক্লি, নিউটনের একটি বায়োগ্রাফি, ‘মেময়েরস্‌ অব স্যর আইজাক নিউটন’, লিখেছিলেন। স্টাক্লি তাঁর অবসর জীবন গ্রান্থামেই কাটান। আইজাক নিউটনের বেশ কয়েকজন ছেলেবেলার সঙ্গী-সাথীদের সঙ্গে কথা বলে বেশ কয়েকটি ‘অ্যানিকডোটস্‌’ সংগ্রহ করেন স্টাক্লিতার মধ্যে কয়েকটি আকর্ষণীয় ঘটনা স্টাক্লির গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে এবং সেগুলি তিনি তাঁর বইতে লিপিবদ্ধ করেছেন। এই বইটি থেকেই নিউটনের স্কুল জীবনের কথা কিছু জানা যায়।   

গ্রান্থামের অদূরে একটি উইন্ডমিল অর্থাৎ বায়ুচালিত কল গড়া হচ্ছিল সেসময় লিংকনশায়ারের এই ভ্যালি অধ্যুষিত ভূখন্ডে নদী বা ঝরনা ধারার অভাব নেই। তাই ওয়াটারমিল বা জলচক্রচালিত কল দেখেঅভ্যস্ত গ্রান্থামবাসী অনেকেই জানে-না উইন্ডমিল বস্তুটি ঠিক কি। এমন একখানা আজব যন্ত্র দেখতে তারা ভিড় জমায় সেই ভিড়ে মিশে থাকে আইজাকও। এমন একটি নতুন যন্ত্র চোখের সামনে গড়ে উঠতে দেখে তার ভিতরের আগুন যেন দপ করে জ্বলে ওঠে প্রতিদিন স্কুলের ছুটির পর সে হাজির হয় সেখানে। নিবিষ্ট মনে লক্ষ্য করে ঠিক কিভাবে কর্মীরা ধাপে ধাপে তৈরি করছে যন্ত্রটি। ক্লার্কের বাড়ির চিলেকোঠার ঘরটি থেকে আবার কদিন খুব হাতুড়ি ঠোকার শব্দ শুনতে পাওয়া গেল। তারপর দেখা গেল, উইন্ডমিলের একটি ‘পারফেক্ট’ মডেল বানিয়েছে আইজাক

উইলিয়াম স্টাক্লির সংগৃহীত তথ্য থেকে জানা যায়, গ্রান্থামে ক্লার্কের বাড়িতে থাকাকালীন আইজাক ভারী সুন্দর সব কাঠের পুতুল, পুতুলের আসবাবপত্র, এসব নিখুঁতভাবে বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিত খেলার সঙ্গীসাথীদের   

ক্যাথরিনের আগের পক্ষের কন্যা, ক্যাথরিন স্টোরার-এর সঙ্গে ছিল আইজাকের প্রথম এবং একমাত্র প্রেম। তেমনটাই অভিমত স্টাক্লি সাহেবের। স্টোরার, যিনি পরবর্তী কালে বৈবাহিক সূত্রে মিসেস ভিন্সেট, তাঁর সঙ্গে দেখা করেন স্টাক্লি। মিসেস ভিন্সেট তখন ৮২ বছরের বৃদ্ধা গ্রান্থামেই থাকেন। স্টাক্লিকে তিনি বললেন, “আইজাক অত্যন্ত ভদ্র, আর শান্ত স্বভাবের ছিল। আর সর্বদাই যেন কী গভীর ভাবনায় মগ্ন থাকত!”    

স্টাক্লি লক্ষ্য করলেন, মাঝারি উচ্চতার ভদ্রমহিলার দু’চোখ এতটা বয়সেও বেশ    উজ্জ্বল একসময় যে সুন্দরী ছিলেন মিসেস ভিন্সেট, সেটা বোঝা যায়  

৮৪ বছরের দীর্ঘ জীবনকালে অপর কোনো নারীর সঙ্গে আইজাক নিউটনের প্রণয় গড়ে ওঠেনি। চিরকুমার ছিলেন এই বিজ্ঞানতাপস      

ক্লার্কের ওষুধ তৈরির ল্যাবরেটরিতে আইজাককে মাঝে মধ্যেই ঘোরাফেরা করতে দেখা যেতকোন রাসায়নিক পদার্থের সঙ্গে কী মিশিয়ে ওষুধ বানানো হচ্ছে তাতে তার ছিল গভীর আগ্রহ।   

সতের শতকের ইংল্যান্ডে ক্লার্কের মতো ওষুধ প্রস্তুতকারী ও বিক্রেতাদের বলা হত অ্যাপথেক্যারি। বিভিন্ন রাসায়নিক উপকরণ ও গাছ-গাছড়া থেকে ওষুধ প্রস্তুত করতেন তাঁরা। শুধুমাত্র ওষুধ নয়পিগমেন্ট, রঙ, সুগন্ধি এসব তৈরির ফর্মুলাও জানতে হত তাদের অনেক ক্ষেত্রে অ্যাপথেক্যারিদের নিজস্ব ফর্মুলাও থাকত। এই ধরণের ওষুধ বিক্রির দোকানগুলির সাজসজ্জাও খুব জমকালো হত। পথচারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সিরামিক অথবা কাঁচের বয়াম ও শিশিতে নানা রঙের তরল পদার্থ থর দিয়ে সাজিয়ে রাখত। পারদ ও অ্যান্টিমনির মত বিষাক্ত দ্রব্যও ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করতেন অ্যাপথেক্যারিরা। ক্লার্কের দোকানের মালপত্রের যে তালিকা পাওয়া গেছে, সেখানে ‘কুইক- সিলভার’-এর উল্লেখ রয়েছে। মার্কারি বা পারদই আসলে   ‘কুইক-সিলভার’   

অ্যাপথেক্যারিদের কাছে পারদের মতো অ্যান্টিমনিও ছিল একটা খুব জোরাল দাওয়াই। অ্যান্টিমনির পেয়ালায় অ্যালকোহল ঢেলে রেখে দেওয়া হত এবং পরে তা পান করানো হত রোগীকে বমি করানোর জন্য। অ্যান্টিমনি বিষাক্ত পদার্থ পাত্রের ধাতব অ্যান্টিমনির ছোট ছোট কৃস্টাল তরলের মধ্যে সহজেই মিশে যায় এবং বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। অ্যাপথেক্যারিদের ব্যাখ্যা অবশ্য অন্যরকম ছিল। ‘লিও নক্ষত্রমণ্ডল’-এর উজ্জ্বলতম নক্ষত্রের সঙ্গে এই ধাতব অ্যান্টিমনির রয়েছে নাকি নিবিড় সম্পর্ক! অ্যাপথেক্যারিরা বিশ্বাস করতেন, নক্ষত্রের দৃষ্টিপাতে ওই পাত্রে রাখা তরলে গর্ভের সঞ্চার হয়, আর সৃষ্টি হয় গ্রহ-নক্ষত্রাদি প্রভাবিত শক্তিশালী ওষুধ! ধরে নেওয়া যায়, আইজাকের জ্যোতির্বিদ্যার হাতেখড়ি হয়েছিল ক্লার্কের বাড়িতেই। সেই সঙ্গে আইজাকের কিশোর মনে পারদ এবং অ্যান্টিমনি এই ধাতু দুটি গভীর বিস্ময়ের উদ্রেক ঘটিয়েছিল। পরবর্তী বৈজ্ঞানিক জীবনে এই দুটি ধাতু নিয়ে নানারকম রাসায়নিক গবেষণা চালিয়েছিলেন আইজাক নিউটন। ট্রিনিটি কলেজে যে নোটবুক ব্যবহার করতেন সেখানে রয়েছে এর উল্লেখ 

আইজাকের, বোটানির গাছ-গাছড়া চেনা, তাদের গুণাগুণ অর্থাৎ, বনৌষধির জ্ঞানলাভ হয় ক্লার্কের ‘পাঠশালাতেই’ আইজাকের ‘বোটানিস্ট’ হয়ে ওঠার কথা মিসেস ভিনসেন্ট জানিয়েছিলেন স্টাক্লিকে। আইজাক যে ভাল ছবি আঁকত সেকথাও ভিনসেন্ট বলেন স্টাক্লিকে ক্লার্কের বাড়িতে থাকার সময় রাজা প্রথম চার্লস এবং স্কুল মাস্টার হেনরি স্টোক্স-এর কালার পোট্রেট আঁকে আইজাক উলস্‌থর্পের বাড়ির দেওয়ালে আইজাকের আঁকা গ্রান্থামের চার্চের একটি স্কেচ এখনো দেখতে পাওয়া যায়।    

স্কুল নির্ধারিত পাঠে আগ্রহ জন্মানোটা আইজাকের কিছুটা যেন আকস্মিকভাবেই হল। পরবর্তীকালে আইজাক নিউটন, তাঁর ভাগ্নি, কনদ্যুইত-এর কাছে ছেলেবেলার  গল্প করতেন। তিনি নিজেই গ্রান্থামের স্কুল জীবনের সেই ঘটনাটির কথা জানিয়েছিলেন ঘটনাটি এরকম – 

একেবারে কাকভোরে ঘুম থেকে উঠে সকলে স্কুল যেত দলবেঁধে। সেরকমই একদিন স্কুল যাওয়ার পথে, এক সহপাঠী আইজাকের পেটে জোরসে এক লাথি কষায়। আপাতশান্ত ছেলেটি যে অসম্ভব জেদী সে কী আর ছেলেটি জানত! সহজে ছেড়ে দেওয়ার বান্দা আইজাক নয়। তাছাড়া লাথিখানা যত-না দেহে লাগল তার বহুগুণ বেশী মনে আঘাত করল স্কুল ছুটির ঠিক পরই ছেলেটিকে লড়াই-এ আহ্বান জানাল আইজাক। ঠিক হল, চার্চের মাঠে হবে ‘ফাইট’ অন্য সব বালকেরাও উৎসাহ নিয়ে জমায়েত হল সেখানে। স্কুল মাস্টারের ছেলে আইজাকের পিঠ চাপড়ে দিল। আইজাকের রোগা পাতলা চেহারা। ছোটখাটো গড়ণ। কিন্তু তা হলে কী হয়, অসম্ভব মনের জোরে লড়াই চালায় আইজাক। শেষপর্যন্ত ছেলেটিকে হারিয়ে মাঠ ছাড়ে আইজাক। স্কুল মাস্টারের ছেলে পরাজিত ছেলেটির ঘাড় ধরে নাক ঘষে দিল চার্চের দেওয়ালে 

কেবল শারীরিক দক্ষতায় হারিয়ে দিয়েই আইজাকের মন কী শান্ত হয়! স্কুলে সেই ছেলেটির রেজাল্ট যে তার চেয়ে ভাল! আইজাক দিনরাত এক করে পড়তে থাকে পরীক্ষায় দেখা গেল আইজাকের অনেক উন্নতি হয়েছে এবং এক সময় কিংস স্কুলের ‘হেডবয়’-এর নাম হল আইজাক নিউটন। শিষ্টাচার ও পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে যে সেরা সে-ই হয় ‘হেডবয়’। 

রেজাল্টের উন্নতির সাথে-সাথে আইজাক প্রায় সমস্ত বেঞ্চে নিজের নাম খোদাই করে। কিংস স্কুলের পাথরের জানালায় এখনও আইজাক নিউটনের নিজের হাতে লেখা নাম দেখতে পাওয়া যায়   

সপ্তদশ শতাব্দীর ইংলিশ গ্রামার স্কুলে লাতিন ভাষা চর্চার ওপরই জোর দেওয়া হত। সেই সময় লাতিন ছিল ইউরোপের শিক্ষিত সমাজের ‘লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা’ এই ভাষার হাত ধরেই বিশ্ব সাহিত্যের সংস্পর্শে আসা যাবে। গ্রান্থামের গ্রামার স্কুলের শিক্ষক, হেনরি স্টোকস্‌, অবশ্য লাতিন ছাড়াও, গ্রীক, হিব্রু ভাষা এবং সেইসঙ্গে সংখ্যা গণনা ও জ্যামিতির প্রাথমিক পাঠও দিতেন। প্রয়োজনের অতিরিক্তই শিখিয়ে দেন তিনি প্রিয় ছাত্রদের। কিভাবে বৃত্তের মধ্যে সুষম বহুভুজ আঁকতে হয় সেই বহুভুজের একটি বাহুর দৈর্ঘ্যই-বা কত – তার গণনা আর্কিমিডিস যে প্রণালীতে পাই-এর মান নির্ণয় করেছিলেন, সেই পদ্ধতিই অনুসরণ করেন স্টোকস্‌ স্কুল মাস্টার স্টোকস্‌-এর এই পাঠদান ক্লাসের সকলেই শোনে। কেবল একটি ছাত্রের মনোজগতে যে আশ্চর্য রাসায়নিক ক্রিয়া ঘটে চলে কেউ তা টেরও পায় না গণিতের অতি বিস্ময়কর জগতের সঙ্গে সদ্য পরিচিত হচ্ছে ছাত্রটি। পৌরহিত্যের কাজটি করলেন হেনরি স্টোকস্‌।        

১৬৫৯ সাল অল্পদিনের মধ্যেই আইজাক সতেরোয় পা দেবে আইজাকের প্রতিভার বিকাশ ঘটতে শুরু করেছে সবে উলস্‌থর্পের এস্টেট দেখা-শোনার জন্য আইজাককে ডেকে পাঠালেন হান্না হয়তো তিনি ভেবেছিলেন, যথেষ্ট লেখাপড়া হয়েছে, এবার ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসো, আর এস্টেটের চাষবাস দেখভাল কর 

মায়ের কথামত আইজাক গ্রান্থাম ছেড়ে, স্কুল ছেড়ে, ফিরে এল উলস্‌থর্পের খামার বাড়িতে। 

ম্যানর-এ চাষের কাজ দেখাশোনা, বাজারে ফসল বেচতে যাওয়া, ভেড়া ও শুয়োরের পাল নিয়ে মাঠে যাওয়া – এখন থেকে এই হল আইজাকের দৈনিক কাজের রুটিন। কিন্তু এসব কাজে এতটুকু সাড়া মেলে না মনের। আইজাকের মেজাজ সর্বক্ষণই বিগড়ে থাকে। বাড়িতে বদরাগী ও জেদী আচার-আচরণ প্রকাশ পায়। হান্না যদি টের পেতেন, কী সাংঘাতিক মানসিক যন্ত্রণায় আছে তাঁর এই পুত্রটি!   

কেম্ব্রিজে পড়ার সময় তাঁর ‘পাপ কাজ‘-এর যে তালিকাটি বানিয়েছিলেন নিউটন, তাতে উল্লেখিত ওই সময়ের কয়েকটি ঘটনা থেকে তরুণ নিউটনের মনে যে অশান্তি চলেছিল তার কিছুটা আভাস পাওয়া যায়তালিকায় ছিল, ‘চাকরদের সঙ্গে ঝগড়া করা’, ‘একাধিক ব্যক্তিকে পেটানো’, ‘বোনকে ঘুষি মারা’, ‘মা ডেকেছিলেন, কিন্তু সেই ডাকে সাড়া না দিয়ে কাছে যেতে রাজি না হওয়া’, ইত্যাদি। 

খামারের কাজ শিখিয়ে-পড়িয়ে আইজাককে তৈরি করে নেওয়ার জন্য হান্না একজন দক্ষ চাকরকে দায়িত্ব দিলেন। কিন্তু সেই ব্যক্তিকে হাত করে নিতে বুদ্ধিমান আইজাকের এতটুকু অসুবিধা হল না। কাজ-কারবার তার কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে কোনো একটা গাছের নিচে বই নিয়ে বসে পড়ে বই-এর মধ্যে ডুবে থেকে কেটে যেত সারা বেলা। আবার কোনো কোনো দিন আইজাক নিজের ছুরি-বাটালি দিয়ে কাঠের মডেল তৈরিতে ব্যস্ত থাকে চাকরটি একা আর কত দিক সামলায়! কোনদিন ভেড়ার দল অন্যের জিনিসপত্র ভেঙ্গে দেয়, তো কোনদিন নিউটনদের শুয়োরের পাল অন্যের ক্ষেতে ঢুকে পড়ে ফসল নষ্ট করে। কোলস্‌টারওরথ্‌-এর ম্যানর কোর্টের ১৬৫৯ সালের রেকর্ড বুকে এজন্য আইজাক নিউটনের নামে অন্তত তিনবার জরিমানা ধার্য হয়েছে, এমন উল্লেখ রয়েছে

প্রতি শনিবার হাট বসে গ্রান্থামে। আশপাশের অঞ্চল থেকে কৃষকরা তাদের ক্ষেতের ফসল নিয়ে হাজির হয়। ঘোড়ার পিঠে ফসলের বোঝা চাপিয়ে আইজাককেও আসতে হয় গ্রান্থামের হাটে। গ্রান্থামে এসে আইজাক বাজারের দিকে না গিয়ে ছোটে ক্লার্কের বাড়ি। সেখানে যে আলমারি ভরা বই অপেক্ষা করছে তার জন্য! ব্যবসার কাজ সামলাতে হয় সঙ্গে থাকা চাকরটিকেই। এজন্য অবশ্য ভালরকম উৎকোচ বরাদ্দ থাকে। 

আইজাকের অন্যমনস্ক স্বভাব নিয়ে দুটি চমকপ্রদ অ্যানিকডোটস্‌ উল্লেখ করেছেন   স্টাক্লি গ্রান্থাম থেকে উলস্‌থর্পে ফিরে আসার পথে স্পিটল্‌গেট টিলায় চড়তে হয় এবং তখন ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে পড়াই দস্তুর। ঘোড়াটি সহজে চড়াই পথে উঠতে পারে। কিন্তু একদিন আইজাক এমনই চিন্তায় বিভোর যে টিলায় চড়ার সময় ঘোড়ার পিঠ থেকে নামতেই গেল ভুলেআর একদিন, হাটের শেষে গ্রান্থাম থেকে উলস্‌থর্প আসার পথে ঘোড়াটা কখন যে তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে আগেই বাড়ি ফিরে গেছে, আইজাক তা খেয়ালই করেনি। সন্ধ্যেবেলা বাড়ি ফেরার পর দেখা গেল, কেবল ঘোড়ার লাগামখানা আইজাকের হাতে ঝুলছে। উলস্‌থর্পের ম্যানর হাউসের চাকরদের নিশ্চিত ধারণা জন্মাল – এ-ছেলে বোকার-হদ্দবোকা! চাষবাস অথবা ব্যবসার কাজ, কোনওটাই এর দ্বারা হবে না!  

এই সময় দুজন সহৃদয় ব্যক্তির আগমন ঘটল

প্রথমজন, আইজাকের মামা উইলিয়াম আইস্‌কফ। যিনি কেম্ব্রিজ ইউনিভার্সিটির ট্রিনিটি কলেজ থেকে ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন। ভাগ্নের পড়াশোনা প্রীতি তাঁর নজর এড়ায় নি। তিনি হান্নাকে বোঝালেন যাতে আইজাককে পুনরায় স্কুলে পাঠানো হয়। ওখানের পাঠ সেরে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে হবে আইজাককে।  

আর একজনের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। তিনি মিস্টার স্টোক্স, গ্রান্থামের কিংস স্কুলের শিক্ষক। বলতে গেলে, হান্নার ওপর তিনি ক্ষেপে আগুন! হান্নাকে বকাবকি করলেন – এভাবে খামারের কাজে ছেলেটিকে আটকে রাখা এক চরম ক্ষতি। প্রতিভার অপমৃত্যু ঘটানো ছাড়া আর কিছু না। মিস্টার স্টোক্স হান্নাকে এক প্রস্তাব দিলেন। গ্রান্থামের বাইরে থেকে পড়তে আসা ছাত্রদের স্কুলে যে অতিরিক্ত চল্লিশ সিলিং টিউশন ফি দিতে হয়, আইজাকের ক্ষেত্রে তা তিনি মকুব করে দেবেন 

শেষমেশ হান্না রাজি হলেন। 

কল্পনা করা যায়, সেই শুভক্ষণে আকাশ থেকে তাঁর উপর সহস্র পুষ্প বর্ষিত হয়েছিল! 

১৬৬০-এর সেপ্টেম্বর মাসে গ্রান্থামের কিংস স্কুলে ফিরে আসে আইজাক। 

প্রিয় ছাত্রটিকে এবার নিজের বাড়িতে এনে রাখলেন মিস্টার স্টোক্স সেখান থেকেই দ্বিতীয় দফায় স্কুলে লেখাপড়ার কাজ চলল আইজাকের এমন একটি নিশ্চিত আশ্রয়ের জন্যই তো আইজাকের মন তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠেছিল স্টোক্স তাঁর ছাত্রের থেকে যা প্রত্যাশা করেন, দেখা যায় তার চেয়ে অনেক দ্রুত পাঠ রপ্ত করে নিচ্ছে সে এই সময় একটি গ্রিক অভিধান, আর নিউ টেস্টামেন্টের একখানা টিকা সংকলন কিনে নেয় আইজাক কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির প্রবেশিকার প্রস্তুতির জন্য এই বই দুটি বিশেষ প্রয়োজন তার  

১৬৬১-র জুন মাসস্কুল থেকে আইজাকের বিদায়ের দিন উপস্থিত সাত বছর কেটেছে তার এখানে এবার ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যাবে আইজাক। কিংস গ্রামার স্কুলের ‘সর্বশ্রেষ্ঠ’ ছাত্রটিকে স্কুলের সকলের সামনে হাজির করলেন মিস্টার স্টোক্স। ছাত্রদের চোখ আর্দ্র। মাস্টারমশাইয়ের চোখ আর্দ্র। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখলেন তিনি। অবশ্যই আইজাকের গুণের কথা সেদিন শোনালেন উপস্থিত ছাত্রদের। বললেন – “আইজাকের মতো হওয়ার চেষ্টা করো তোমরা।”    

আর উলস্‌থর্প-এর চাকর-বাকররা? এই খবর শুনে রীতিমত খুশিই হল। ‘হাবা-গোবা’ ছেলেটি যে আবারো ফিরে আসছে না, এতে যেন নিশ্চিন্ত বোধ করল তারা। বলল, “কোনো কাজের উপযুক্ত নয়ওর জন্য ‘ভার্সিটি’ই সঠিক জায়গা!”     

জুন মাসের একেবারে গোড়ারদিকে, গ্রেট-নর্থ-রোড ধরে কেম্ব্রিজের উদ্দেশ্যে ছুটে চলল একটি ঘোড়ায় টানা গাড়ি সওয়ারি, আঠার-উনিশ বছরের এক আত্মমগ্ন যুবক।

 

সূত্রনির্দেশ 

  1. E. Turnor, Collections for the History of the Town and Soke of Grantham, W Bulmer, London, 1806 
  2. নিউইয়র্কের মর্গ্যান লাইব্রেরি এবং মিউজিয়াম সংরক্ষিত নোটবুক (MA 318)
  3. A. M. Roos, Newton and the Apothecary, International Journal of Regional and Local History,

Vol. 10, No. 1, May, 2015, pp. 18–31 

  1. R. S. Westfall, Never at rest, Cambridge University Press, New York, 1980
  2. R. Iliffe, Priest of Nature, Oxford University Press, New York, 2017  

(চলবে)

অলঙ্করণঃ সৌহার্দ্য চক্রবর্তী

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment