দীপ্তেন্দু জানা

দীপ্তেন্দু জানা’র কবিতাগুচ্ছ

বাকিটা অস্পষ্ট থাক

১)

আমারই রচিত রহস্যে আমিই ফেঁসে গেছি

জাল ফেলে বসে আছে
জেলেরা এত সুর কোথা থেকে
আসে ভেবেছো কি তোমাদের বলছি
শোনো প্রিয় সন্তান মহামস্তিষ্ককে
প্রণাম কর

সোজাসাপটা বলছি শোনো প্রিয় সন্তান

সব উত্তর জানতে নেই

২)

প্রশ্ন একটা পথ

উত্তর তাকে সমাপ্ত করে

আমাদের ভেতর অপেক্ষা
আর অপেক্ষার ভেতর আমরা হেঁটে
বেড়াই রহস্য একটা পথ রহস্য
তাকে লম্বা করে

উদযাপন কর

এই রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য নয়

৩)

মহাসমারোহে হাঁটো

হাঁটতে হাঁটতে নিজের সাথে
দেখা হয়ে যাবে ঠিক নিজেকে আর ব্যাখ্যাতীত
মনে হয় না খুঁজে পেয়েছি মেধাফুলকি আমারই
তৈরি অন্ধকার কারখানায় আমি
আলো তৈরি করি

আয়নায় কিছুটা স্পষ্ট

বাকিটা অস্পষ্ট থাক

৪)

স্পষ্টতার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে দাঁড়িয়ে ওপারে তাকাই

হিমসাগর দিন পিছু
ডাকে গোলাপখাস দিন পিছু
ডাকে পিছু ডাকে কুয়ো
থেকে উঠে আসা মেলোডি জানি
ওপারে নোম্যান্সল্যান্ড

সমারোহের ভেতর আমি দাঁড়িয়ে থাকি

আর আমার ডি এন এ দুহাত বাড়িয়ে থাকে

অনন্ত কালের দিকে

৫)

এই যে সাধের দেহ–

বড়ো আঞ্চলিকতাদোষে দুষ্ট সে

দেহের ভেতর এত
রক্ত এত জল ডুব নিয়ে তলিয়ে
যাই দেখা হয় মনের সাথে
মনের ভেতর রেড উড গাছের জঙ্গল মৃদুস্বরের
হাওয়া একা একা গুনগুন করে জানালায়
মহিষ ছালের পর্দা সরালেই মেঝেতে
রোদ এসে পড়ে

একটা ব্রহ্মাণ্ড কল্পনা করার আগেই আমাদের চোখ ঝরে যায়

অথচ

মন আঞ্চলিক নয়

সে নিজেই এক অনন্ত

৬)

আমি হাঁটছি ভবিষ্যতের দিকে

আমার আয়ু হাঁটছে অতীতের দিকে

নিরক্ষীয় অঞ্চলে এমনটাই হয়

এই মহাসমারোহ তুমিই যেমন আয়োজন
করেছ তেমনি তুমিই
অস্তিত্বের ওপর আরোপ
করেছ নিয়তি বেঁচে থাকা আর কিছু
নয় নিয়তিতাড়িত
এই জীবনে নিয়তির বিরুদ্ধে দ্রোহ

দ্যাখো কিভাবে

সব পথ অনন্তে গিয়ে মেশে

সব পথিক অনন্তে গিয়ে মেশে

হয়তো এটাও নিয়তি

৭)

শব্দের সাথে শব্দের বিক্রিয়ায় জল
তৈরি করতে পারে ক’জন হাওয়া তৈরি
করতে পারে ক’জন ক’জনই বা রোদ
তৈরি করতে পারে

দুটি লাইনের ফাঁকে
ফাঁকে আমি বৃক্ষরোপণ
করি এপথে এলে কোন পথিক
সে যেন শীতলতা পায়

আমার কাছে আমি অল্পই চাই

আমার রচনা পৃথিবী হোক

যেন সে বাসযোগ্য হয়

৮)

পরিধিতে আমার কৌলিন্যহীন বাড়ি

কেন্দ্রবিন্দুতে ঠাঁই নেই

চৈত্রের হাওয়া
শিমুল তুলোর মতো ছড়িয়ে
দাও আমার আগুনবীজ মহাবৃত্তের
আনাচেকানাচে

নিত্যদিন ছাই হতে হতে এই বেঁচে থাকা
তবে তো স্বার্থক

৯)

রক্তের রং
কেমন নানান মানুষের
রক্তের রং নানারকম রাস্তা
অনেক কিন্তু সব মানুষের
গন্তব্য একটাই

সবাই বাঘ হতে চায়

যারা পারেনা আমার মত

তারা জেব্রা হয়ে ঘুরে বেড়ায়

ঘাস খায়

১০)

কোনদিন
কোরাস হতে চাইনি উড়ন্ত পাখিদের
মাঝে তাই বেমানান কোনদিন মিছিল হতে
চাইনি তাই পিঁপড়েরা আমায় অহংকারী
ভাবে কোনদিন নেতা হতে
চাইনি তাই চারপাশে শ্যাওলার
ভিড় নেই

সব গিঁট খুলে দিয়েছি

আমি একটি ফুলের দুঃখের মতো একা

চারপাশে একটি মেয়ে

জলের পরিখা হয়ে ঘিরে আছে

নইলে

যেকোন মুহূর্তে হিংস্র ভালুকেরা ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে

১১)

নমস্কার পৃথিবী

আমি মহাশূন্যের পথিক

সুসজ্জিত সংসারে এত ঝঞ্ঝা জল
ছুঁয়ে চাঁদা মাছ হয়ে যাচ্ছি এই
কি তবে মৎস্য অবতার প্রলয়
কি শুরু হয়ে গেল তবে
এক ভাগ স্থল কি ডুবে যাবে
তিন ভাগ জলে তলিয়ে যাবে তাবৎ
জীবকূল

আমি তবে কী করব এখন

মহাপ্রলয় থেমে গেলে

গনকবরের ওপর

পুনরায় বপন করব বন্ধুবীজ

১২)

পর্দা আর হাওয়ার খুনসুটির ভেতর

পেতেছি সংসার

আর
দরজাকে দরজা
বলবো না বলবো
অভ্যর্থনা আর মৃত্যুকে
মৃত্যু বলবো না বলবো
প্রস্থান

নৈঃশব্দের মাঝে এত সুর

গর্তের ভেতর কাহারবা বেজে ওঠে

১৩)

আমার গাছটি বৃক্ষ

কিন্তু বোধিবৃক্ষ নয়

রোজই কিছু ময়লা জীবাণু
কিছু হাতে লেগে যায় সাবান
দিয়ে ঘষে ঘষে চিন্তাকে ধুয়ে যাই একে
কি সাধনা বলে বলুন গৌতম তুচ্ছতা
কুড়িয়ে বাড়িয়ে হবে না একটা
দ্বিতীয় জন্ম

ধ্বংস ও সৃষ্টির সূত্র আমি জানি তাই

যে বন্দুক আমার নেই

আমি তার নল ঠেকিয়ে রেখেছি

নিজেরই কপালে

১৪)

কিছু নেই
বোলোনা কোন এক
ময়রা রহস্যের গামালায়
ডুবিয়ে রেখেছে
পৃথিবীকে

চাইনা জাতিস্মর হতে

এই ভালো

অনন্ত রহস্যের টানে

আমরা হেঁটে যাব অনন্তকাল

১৫)

বেঁচে থাকতে গেলে কিছু সাসপেন্স প্রয়োজন

যত দূর
রহস্যের আয়ু তত দূর
সুন্দর তুমি সুন্দর তারপর
সব জলসা যত দূর রহস্যের
আয়ু তত দূর পথিক তুমি
পথিক তারপর পথ
নেই আর

মহাসমারোহের ভেতর

সে জানে

যে হেঁটে যায়

এই সাসপেন্স মন্দ নয়

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment