দীপ্তিপ্রকাশ দে

দীপ্তিপ্রকাশ দে’র কবিতা গুচ্ছ

বন্দেমাতরম্‌

কথা ছিল আজানের শব্দে ঘুম ভাঙবে
অথচ উঠে বসলাম সমবেত হাম্বারবে

তারপর মাংসের দাম বেড়ে গেল
তারপর হাওয়া অফিস
বলে বলে মিলিয়ে দিল সমস্ত পূর্বাভাস

সঞ্চয়প্রকল্প চেটে বেঁচেছিল যারা
তারা সব ছোট হতে হতে রক্তহীন পতাকা মাড়িয়ে
অ্যামিবার দলে ভিড়ে গেল

পাঁচকান করিনি তবু

প্যান্টের চেন খুলে এই দ্যাখো-
দ্বিধাহীন লিখে যাচ্ছি বন্দেমাতরম্‌

কুমোরটুলি

প্রতিদিন খেতে বসার পর দেখি
মায়ের মুখ একটু একটু করে শুকিয়ে যাচ্ছে
অথচ রোদ নেই সারাদিন

ব্লো-ল্যাম্পের সাদা আলোয়
ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে ঠাকুরঘর
তার ভেতরে গুমরে গুমরে উঠছে বাতিল যত দেবতা
আর বাইরে

হাসি-হাসি মুখ নিয়ে রামজন্মভূমি

দৃশ্যদূষণ

খইনি ডলতে ডলতে
গলিতে পেচ্ছাপ করছে একটা লোক
তার পিছনে, ধু-ধু সনাতন ভারতবর্ষ

ফুটপাতজুড়ে কথা বলা পাখি ও সাধক

হাঁটতে হাঁটতে চটি ছিঁড়ে গেছে কখন
খেয়ালই করিনি
কিন্তু লোকটাকে খেয়ালে রেখেছি
এবং তার লিঙ্গসুষমা

খাড়া হতে গিয়ে
ব্যর্থ রাষ্ট্রের মতো যে

বেবাক ঝুঁকে পড়েছে অন্যের দেওয়ালে

লভ জিহাদ

শরীর হত্যা করো, প্রেম বেঁচে থাক

আর সেই অজুহাতে
ঈর্ষাও বেঁচে থাক ইতিহাস হয়ে

এ-জীবন নশ্বর

তাকে নিয়ে খেলা করে যারা
তুমিও খেলার ছলে
তাদের হেঁশেলে ঢুকে যাও

তারপর

কেরোসিন দিয়ে শুধু পোড়াও পোড়াও

গোরুর রচনা

আজ স্বপ্নের মধ্যে ফিরে এসেছে
ছোটবেলার একটি গোরু

গোরুটি আমার
সমস্ত রসিদ আছে তার
শুধু স্বপ্ন আমার কিনা, আমি জানি না

এই সংশয়ের ভেতর
জবরদখল হয়ে যাচ্ছে ভোররাতের ঘুম
কাগজপত্রহীন আমি খেয়ালই করিনি
ঘুমতে ঘুমতে মরে গেছি কখন

মৃত্যু সত্যি
কিন্তু আমিই যে মরেছি

কীভাবে সেকথা লিখে প্রমাণ করব আজ!

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment