সব ডুবে যাচ্ছে, প্রিয়ে
করলডেঙা কতো দূর?
গরুর গলায় ছুরি
গাছের আগায় আগুন
করলডেঙা কত দূর?
পেটে আসে না পুত্র
রাজা ফিরিয়েছে জায়া
মেধসমুনিকে স্বপ্নদর্শন!
দুর্গতিনাশিনী দেবী
তারই দ্বারে কৃতদার
আরতিতে জাগছে আশ্রম
‘কোথায় কৈলাশ মাগো
সন্ধানে আমি জ্যান্ত লাশ
দেখা দাও ফুল দেবো’
পাতা কুড়োচ্ছে দশভূজা
তিন প্যাঁচে পরিধেয় তার
লোহিত ছুটছে ত্রিনয়ন!
ঘৃতমুখি নারীদের জটলা
বচসা লেগেছে রমণে
কার পান্ডা কতোটা সবল!
তারই মাঝে সুফি এক
‘সত্যরে দেখেছি আমি
দেখাবো ভক্তিসম্মিলনে’
তারপর জোছনা বালিকা
মালিকা গাঁথছে নুড়িতে
বসনে তার বাসন্তী চীবর
পেট ফুলে গেল তার
স্ফীত বুক ও নধর
বলো জন্ম হচ্ছে কার!
মুনির দেখা নেই আর
সাধনে ঘুমিয়ে সাধু
এক মাস তিন দিন গেল
মন্ত্র ফুঁকেছে বুড়ি মঘিনি
মুখে রোসাঙ্গের ফেনা
তবু তার সমুদ্র অচেনা
তারপর কে যেন বলল—
সব ডুবে যাচ্ছে, প্রিয়ে
সোনামুখ মঠের দূরে
নদী বয়ে যায়
যেন বয়ে যায়
হাজার বছরের অস্থিমজ্জা
পূর্বপুরুষের—
তার নাম হয় ইরাবতী
কিম্ভূত হাসি ছড়ায়
বহুদূরের পাহাড়ে
কে যেন খুলে ফেলছে
সোনায় রূপায় মোড়া
আম্রপালির বক্ষবন্ধন!
প্রিয়ে, আজ দুপুরে
অন্ন বলতে বকুলফুল
ভিক্ষুণীর অসুখ শরীরে
চীবর ধুতে গিয়ে
কুয়োয় ডুবেছে শ্রমণ!
প্রিয়ে, ঘরের চালায়
লাউডগা থিরথির
নরম যেন গর্ভকেশর
ছিঁড়ে নেবো সেটুকু?
মীনাক্ষী নামের মেয়ে
নদীজলে নাইতে এসে
মাছ হয়ে গেছে!
আনন্দ, আমি দেখেছি
এমন দৃশ্য গেল রাতে
কতো রাত ছিল?
নিশুতি আর ঠান্ডা
এক ঘর ঢুকে পড়ে
আরেক ঘরে খিল দেয়!
তারপর একটি মাছের
খাবার লাগিয়ে বড়শি
ডুবে যাচ্ছে, ডুবে যাচ্ছে
মেয়েটির বাহু বিঁধে!
শ্রমণার জোড়াতালির সংসারে
হাতি এসেছিল নেমে
মাড়িয়ে গেছে কলাক্ষেত
ওই ছিল যক্ষের ধন—
‘আমার কিছু থাকলো না
কি-রূপে দিন যাবে গুরু’
পাহাড়ও কাঁদে বিলাপে
শ্রমণার সংসারে জোড়াতালি
যেহেতু দীক্ষাপ্রাপ্ত নারী
তার থাকতে নেই পুরুষ
কিন্তু শরীর কি আর কথা শোনে?
একরাতে ঘর আলো নক্ষত্রে
আঙুল থেকে চুলের ডগা
গভীর আকাঙ্খা ডেকেছিল বান
তার সুতীব্র স্রোতের তোড়ে
স্নাত, উম্মোচিত পয়োধরা
ধুয়ে মুছে নিয়ে গেছে সমস্ত গ্লানি
জীবনের, কামের ও সস্নেহ
অন্তরালে গেল সে এক শাপগ্রস্থা!
শুশ্রুষা দেবে কে?
অঙ্গুলিমালের কথা বলুন, ভন্তে
একদা বিকেলে যে বারনারী
তথাগতকে ডেকে লুটিয়েছিল পায়ে
তারই-বা সৌষ্ঠবে কমতি কি ছিল?
খুলে বলুন থির হতে আর কি লাগে!
কেবলই শুশ্রুষা কাটাতে পারে কি নিশা?
বলুন ভন্তে, এই কঠিন আচ্ছাদনে
মন কতোটা ঢাকা যেতে পারে?
ফোরাচেঙ্গির তলে স্বর্ণপাহাড়
হস্তিগাঁওয়ে আলো জ্বলে
জোনাক ফোটে নারীদের থানে
যুদ্ধ করা মোটেই অনুচিত
বলেছিল চন্দ্রবংশীয় শেষ সূত
তিন সহস্র বছরেরও আগে
মগধে ফেরার পথে সিদ্ধার্থ
রেখেছিল শাম ও বর্মার স্মৃতি
তারই করোজ্জ্বল গাঁথুনিতে
ওপরের দিকে আরও ওপরে
মাথা তুলেছিল এক বিহার
শ্রুত ছিল ফোরাচেঙ্গি নামে
তারই তলে স্বর্ণপাহাড়ের খোঁজে
স্বপ্নাদিষ্ট যুবা অচৈতন্যবেশে
কলস পাহারা দিল সর্পের রূপে…
তারপর নাগেরা সাঁতার কাটল
বলা ভলো
এমন রাতে
ঢকঢক তেচুয়ানি গড়ে তোলে বিষ্ময়বিশ্ব
ফেরত জাহাজের পতাকা ভেজে কুয়াশায়
বন্ধুর মুখ
সুতনু ছোঁয়ায়
কাঁদে ফের হাসে হো হো ব্যথা চিনচিন
যেন রাজনাট্যাগুরু মেতেছে ঠাট্টা-মস্করায়!
কাস্তে হাতে
হাঁটে ভন্তে
কাঁকনচাল ফুটে উঠবে কার্তিক গেলে জুমে
স্বপ্নে ভর করা সেই দিন সব লীন দরিয়ায়…
দূরের বন্দর
পাথর পেরোলে
ফুঁসে-ফুঁসে ফুলে ওঠে গহীন-গুপ্ত আকীর্ণপথ
বলা ভালো, এমন রাতে বক্ষিণী মরেন তিয়াসায়!
আলোকসামান্যার দেখা
অবেলায়
শীতের হাওয়া
চৈতস্তূপ থেকে জ্বরঘোলা কার চোখ
চাপকলে ধুয়ে নেয় গোপন নজর
তখন মধ্যরাতে
বিয়ের নাচনে
আঁখিপাতে লালচে আভার বিভ্রম ছুড়ে
হরিদ্রা কিশোরী বুঝে উঠছে কাম-সংকীর্তন!
সেকথা বলা যায়
আড্ডায়, বন্ধুমহলে
যতোটা বেহেড হলে ক্লাইভের শৌচাগারে
বেতচেয়ার হয়ে আসে প্রপঞ্চক নিদ্রাসন!
এমন ভ্রম আসে
ভ্রমর সকাশে আর
ঘিন-ঘিন দূরত্ব কোনও মতে পেরিয়ে গেলে
বারোহাত জড়িয়ে বেড়ে ওঠে একটি হৃদয়!
ওম নমঃ জলজ্যন্তজীবন
তটিনী বয়ে যায়
দূরে-দূরান্তরে জেগে ওঠে চরাচর
নিশুতি রাতে গল্পও জেগে ওঠে
মোহনার জ্যা
অতোটা বোঝে না পুরুষ যতোটা নারী
ত্রি-ভঙ্গে তার তুলে ধরে জোয়ার-ভাটা
ফুলে-ফুঁসে ওঠে
কার আকাশে দেখা যাবে চাঁদ, আর
পূর্ণ না হতেই ক্ষয়ে যাবে নোনাতটে
খড়গের নিচে
সন্তরণ ফেরত নিজেকে তর্পন করি
খড়গের নিচে
ফুটে ওঠে আরক্তিম জবা
বিন্দুপ্রবাহিনী পাহাড়
ভুলে যাবো বহুবাসনার পরে!
হে আমার গলা
কতো সুরে উঠেছিলে ফুলে
বনভোলানিয়া পাখি
যেতে যেতে ঊর্ধ্বাকাশে
ম্লান হয়ে আসে মায়ার ভূমিকা…