অক্ষয়তৃতীয়া
কৃতজ্ঞতা জানাবার ভাষা দিয়ে তাম্রপত্র সাজালাম।
কৃতজ্ঞতা জানাবার ভাষা গণেশের পায়ের কাছে রাখি তবে, আরম্ভ !
গাঙ্গেয় উপকূলে জন্ম হয়েছিল, শোক ও সন্তাপ অতিক্রম করে যাওয়াই
পরিক্রমার লক্ষ্য । ভিতরের আলো কখনো কন্ঠস্বর , কখনো শ্রবণ।
মাকে ডাকতে ডাকতে এই শুভারম্ভ …
অন্নের অক্ষরে এখন অন্নপূর্ণার হাসি , যেন আর অভাব কোথাও
নেই, ভগীরথ। ক্ষয় নেই — গঙ্গা হয়ে নেমে আসব আবার।
শুধু কৃতজ্ঞতা জানাবার ভাষা। চোখে জল। মহাকাব্যের সুদূরবিস্তারি প্রভাব
ছেয়ে আছে ভূমন্ডল, আকাশের থেকে শাড়ি নেমে আসে ক্রমাগত
একমনে ডাকি — বিপদভঞ্জন, লজ্জা ঢেকে দিও …
পাঠকজন্ম
এ বুঝি পাঠকজন্ম
এই জন্ম পাঠে কেটে যায়
পদ্মপাতায় লিখিত যা যা
যা লেখা রয়েছে ভাগ্যে
চোখের ভাষায় …
গুহাগাত্রে , প্যাপিরাসে ,
অশনিসংকেতে , রঙে ,
দেওয়ালের গায়ে ––
পাঠ করি
সবই তোমার হাসি
সমস্তই চিঠি
প্রেমের কারণ অকারণ ।
দেখি , তুমিও লিখছ রাত জেগে
ঘোরের ভিতরে
ছন্দ থেকে মায়া খুলে
কাঁথার মতন
জড়িয়ে দিয়েছ
চির রহস্যকুয়াশা
ব্রাহ্মমুহূর্তের গায়ে
সূর্যোদয়
নতুন পৃষ্ঠার ইতিহাস বই থেকে ছড়িয়ে যেতেই ,
দেখি, দিগন্ত গ্রন্থই। খুলে যাওয়া নতুন পৃষ্ঠা… নীল পাহাড়ের
ছবি আঁকা, পাহাড়ের কোল ঘেঁষে আঁকা মাস্টারদা সূর্য সেন।
বাতাস সংগ্রামী। কামান গর্জনের শব্দকে নিমেষে এনেছে তুলে
তরুণ কলমে। কলমেরা কারো ভাই, কারো বন্ধু , অস্ত্রাগার লুন্ঠনের
দিনে; দিগন্তের গায় রোজ রাত্রি শেষে মাস্টারদার নামে জয়ধ্বনি তুলছে।
মঙ্গলবার
পাঁজিতত্ত্ব দেখে বুঝি
অলাবু ভক্ষণরীতি !
মলমাসে কোথা হতে
ভেসে আসে বসন্তবাতাস ?
তিলতত্ত্ব ফলে থাকে
বাহুডোরে
শীতকালে হিমগাছে
ডেকেছেন কোকিলা হঠাৎ
অতীব মঙ্গল যদি
শুভদৃষ্টিকালে
চারিচক্ষু এক হয়ে যায়
শনিবার বারবেলা
যেন তুমি যেও না কোথাও
বেণীমাধব শীলের
স্মৃতি ও বিস্মৃতিময়
ফুলপঞ্জিকায় আছে লেখা
চিবুকের তিলে
ভ্রমর বসলে কেন
কনেদেখা আলো ফোটে
শ্রাবণ বেলায়
আশ্চর্য
খোলা চোখে যতদূর দেখা যায়
চোখবন্ধ দেখা যায়
তারও অনেক বেশি দূর –
এই কি আশ্চর্য ?
এই কি কৌতুক ?
আয়না আমাকে জানে না কিছুই
আমি বা নিজেকে কেন খুঁজি
কিছুদূর হেঁটে ওই থেমে যান সহদেব
আকাশের বুকে
পার্শ্বতীর চোখের কাজল
লেগে থাকে
ভাগ্য কি কেবল পরিহাস ?–
আমিও রচিত হই
কবিতার হাতে ––
চোখবন্ধ করে দেখি
মাতৃগর্ভে অন্ধকার , তবু
তোমাকে দেখতে পাচ্ছি
তিনি ও গীতবিতান
কাশ্মীর ভুখন্ড যেভাবে অস্থির , বহুদিন
সেই ভাবে রাতকাটে নিদ্রাহীন , ত্রাসে
আকাশ কি প্রতিবিম্ব নয় … কপিশবর্ণের ?
মুঘলসেনার বেদরদ হাসি আর রক্তচক্ষু পুরোহিতগণ ,
বিশ্বাস করুন – তিনি অন্য , সীমানা খন্ডনকারী ,
এক কণা খুদে তিনি তুষ্টনারায়ণ
অতি , অতি সাধারণ দাসীপুত্র ,
দাসীকন্যা , ত্যাজ্য ,
আমি নরগণ , মেষলগ্ন , বৃষরাশি ।
বন্যায় ক্ষরায় দেশভাগে কালো কালো
ছায়া ছায়া ছুটে গেছি ত্রাণশিবিরের দিকে
গীতবিতানের দিকে –– যেন বা অখন্ড দেশ
বুকের ভিতরে রাজধানী ইন্দ্রপ্রস্থ ।