না ঘুমোলেই হত।
এখন মরে গিয়ে মনে হচ্ছে, না ঘুমোলেই হত। জেগে থাকলে টের পাওয়া যেত, হয়তো, মরছি। তাতের লাভের লাভ এই হত যে, হ্যাঁ, এটা তো ঠিক যে গোছগাছের তো কিছু থাকে না; কিন্তু ওই, ঘুমনোর আগে পাখাটা চালিয়ে দিয়ে যাওয়ার সময়ে ঝুনুবউকে একটু ডেকে বসানো যেত। যদি এরকমটা হত, তাহলে খুরশেদ ঘুমের মধ্যে নয়, ঝুনুবউকে দেখতে দেখতেই মরত। কী এমন হত আর একটা বেলা না ঘুমোলে। না ঘুমোলেই হত।
এখন মরে যাওয়ার পর, ঝুনুবউকে ভাবলে, মনে হচ্ছে, অনিডা কিংবা সন্তোষের শাদা-কালো পোর্টেবল টিভিতে দেখা ছেলেবেলার রোদ যেন। দেখছি উজ্জ্বল; কিন্তু না, তবু তার তাপ পুড়িয়ে দিচ্ছে না এই মৃত্যু-উত্তীর্ণ পিঠ। মরার ঠিক আগের মুহূর্তটায় মানুষ যদি বুঝতে পারে, সে এবার সত্যি সত্যিই মরতে চলেছে, মানে, মৃত্যু যদি তাকে এটা বুঝতে দেওয়ার কৃপাটুকু করে এবং তাকে জীবন ছাড়া আর যেকোনও কিছু চাইতে বলা হয়, চিরকেলে ঘাড় ব্যাঁকা মানুষ তবু জীবনটাই চাইবে। সে পাবে না। তবু চাইবে। নিজের জীবনের মধ্যে দিয়ে না হোক, অন্য কারুর জীবনে অন্তত রুমালের মতো মুখ গুঁজে আতরের খুশবু শোঁকার ইচ্ছেটুকু তার হয়। এখন যেমন খুরশেদ চাইছে, ঝুনুবউ তার কথা ভাবুক। আর খুরশেদের মরা নাকে এসে লাগুক ঝুনুবউয়ের ভাবনার ভুরভুর করা গন্ধ।
কিন্তু ভরদুপুরে মোষের মতো ভসভস করে ঘুমোনোর লোভ সামলানো গেল না বলে ঝুনুবউকে শেষবার ভালো করে দেখা হল না খুরশেদের। শেষবার কখন সে ঝুনুবউকে ভালো করে দেখেছিল ভাবতে গিয়ে মনে এল হাসপাতাল। মেল ওয়ার্ডে খুরশেদের বিছানার পাশে একটা পুটুলির মতো বসে ছিল ঝুনুবউ। হাঁ করে গিলছিল পাশের বেডের রুগি আর তাদের বাড়ির লোকেদের গল্প। কীর্তন গাইতে যাবার পথে একটা লোক টোটো থেকে পড়ে মাথা ফাটিয়েছে। এখন হাসপাতালে শুয়ে ভাবছে, আমি তো তোমার নাম গাইতেই যাচ্ছিলাম গোপাল। আর তুমিই আমায় রাস্তায় ফেলে মাথা ফাটিয়ে দিলে? লোকটার সাগরেদ এসেছে দেখা করতে। সাগরেদকে এই দুর্ঘটনার একটা যুৎসই ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছে লোকটা। আসলে সব ব্যাখ্যাই ব্যাখ্যাদাতার ঠিকানায় ফেরত আসা চিঠি। মাথার ব্যান্ডেজে হাত বুলিয়ে লোকটা বলছে, শনি লেগেছে কপালে।
সাগরেদ – তা-লে গোপাল তাকে সরাচ্ছে না কেন?
লোকটা – সবই গোপালের ইচ্ছা
সাগরেদ – গোপালের ইচ্ছা? গোপাল চায় না তুমি তার নাম করো?
লোকটা – কী জানি। তবে গোপালের ইচ্ছা সবই। এখানে যেমন নার্সরা এসে ছুঁচ ফোটাচ্ছে। ওষুধ দিচ্ছে তো? এরা কি নিজেরা এগুলো করছে? করছে তো ডাক্তারের কথা মতো। ডাক্তার যেমন যেমন বলে গেছে, সেই মতো করছে। নার্সরা যেমন ডাক্তারের ইচ্ছামতো সবকিছু পরিচালনা করছে, শনিও তেমনি।
খুরশেদ বাম পাশ ফিরে শোয়। ডানদিকে থাকা স্যালাইনে টান পড়ে। পাশ ফেরে। কারণ, ঝুনুবউকে একটু দেখা যাবে, তাই।
(২)
তালিকা, যেকোনও তালিকাই একটা শিরদাঁড়ার মতো দেখতে। টিউবিউলার বান্ডিল। যার ভেতরে থাকা প্রতিটি নাম, বস্তুই এক-একটি নার্ভাস টিসু ও সাপোর্ট সেল। এদেরই সম্মিলিত সংযোগে গড়ে ওঠে সিএনএস। সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম। মৃত্যুর পরেই পাটাকামারি প্রাইমারি স্কুলের প্রাক্তন হেড মাস্টার খুরশেদ মিয়াঁ তার প্রশ্নের তালিকা তৈরি করতে বসে। হাতে সময় বেশি নেই খুরশেদ মিয়াঁর। সময় শুধু উত্তর লেখার জন্যই বাঁধা থাকে তা নয়। প্রশ্ন করারও সময় ফুরিয়ে আসতে পারে। জানাযার চার তকবিরের নমাজ শুরু হবে একটু পরেই। মুসুল্লিরা সব এসে গেছে। ইমামের অপেক্ষা এখন। খুরশেদকে গোসল করানো হল। বরই পাতার ফেনা দিয়ে ধুয়ে দিল খুরশেদের মাথা, দাড়ি। খুরশেদ মিয়াঁ তার প্রশ্নের তালিকায় মন দেয়। কোথা থেকে শুরু করা যায় মিয়াঁ? দাফন হওয়ার আগে মুসুল্লিদের কয়েকজনের সঙ্গে সে শেষ আলাপ সেরে নিতে চায়। বাসা থেকে গোরস্থান, এইটুকু রাস্তা তার সময়। সামান্য দু-চারটে প্রশ্নের উত্তর সঙ্গে নিয়ে দাফন হোক সে। এটুকুই খুরশেদ চায়। কিন্তু খুরশেদ প্রশ্নই খুঁজে পায় না। খুরশেদের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে ইমাম সূরা ফাতিহা পড়ছেন। এরপর দরূদ শরীফ। তারপর দোয়া। আমাদের মধ্যে যাহাদিগকে তুমি জীবিত রাখ তাহাদিগকে মৃত্যুমুখে পতিত করো। খুরশেদের মনে হয়, ইমামকে বলে, ওরে থাম ব্যাটা। সময় তো আমার শেষ হয়ে গেল। খুরশেদ জানে, ওর কোনও কথাই এরা শুনতে পাবে না। মানুষের মৃত্যু হলে জীবিতের শ্রবণশক্তি চলে যায়। একমাত্র যদি সঠিক প্রশ্নটা খুরশেদ খুঁজে পায়, যদি খুঁজে বের করতে পারে, শুধু তখনই শুনতে পাবে এরা। তা-ও সেই প্রশ্ন করতে হবে দাফন হওয়ার আগেই। খুরশেদ তার সারা জীবনে প্রাইমারি স্কুলে বাচ্চাদের পরীক্ষার জন্য বানানো প্রশ্নের স্তূপ ঘেঁটে প্রশ্ন খোঁজে। আর এইটা করতে গিয়ে এক মস্ত জিনিস সে টের পায়। এতদিন ইশকুলে সে প্রশ্ন বানিয়েছে। প্রশ্ন করেনি। এখন, এতদিনে সে প্রশ্ন করতে বসেছে। আর প্রশ্ন করতে বসে বানানো প্রশ্নের স্তূপে সেই প্রশ্ন খুঁজছে। ঝুনুবউকে সে আদর করত। ঝুনুবউ কি সে আদর বানাতো? এখন খুরশেদের মনে যে ভাবনাটা আসছে সেটাকে না ভেবে বরং প্রশ্ন খোঁজাতেই তার মন দেওয়া উচিত, এটা সে খুব ভালো করেই জানে। কিন্তু তবু ভাবনাটা মাথায় গোত্তা মারতেই থাকে। তার বানানো প্রশ্নে তাহলে কি বাচ্চারাও উত্তর বানিয়েছে? নাকি তারা উত্তর করেছে? আর জানা যাবে না। খুরশেদ তার ছেলের ক্লাস এইটের ভূগোল, ইতিহাস, জীববিজ্ঞান, ভৌতবিজ্ঞান বইয়ের পাতা খসখস করে উলটে প্রশ্ন খোঁজে। মরে গিয়েও খুরশেদ বোঝে, সময় ফুরিয়ে আসছে। মরে গেলে সময় ফুরোয় না, এ বড়ো ভুল ধারণা ছিল তার। ফ্যালফ্যাল করে ইমামের থুতনির দাড়িটার দিকে চেয়ে থাকে খুরশেদ। জমিদারকে হাওয়া করতে করতে ঘুম পেয়ে যাওয়া পাঙ্খাওয়ালার পাখার মতো দরূদ শরীফ পড়তে পড়তে ইমামের দাড়ি তখন অল্প অল্প দুলছে। ইমামের কি ঘুম পাচ্ছে? এক কাতারে দাঁড়িয়ে থাকা মুসুল্লিরা, তাদেরও ঘুম পাচ্ছে বুঝি? খুব?
খাটিয়া নড়ে ওঠে। খুরশেদকে দাফন করতে নিয়ে যাওয়া হবে এবার গোরস্থানে। জানাযা কাঁধে নিয়ে দশ কদম পরপর মুসুল্লিরা খাটিয়ার পায়া বদল করছে। চল্লিশ কদম দূরে খুরশেদের গোর। খুরশেদের মনে আর প্রশ্ন আসে না। কী জানতে চাওয়া যায় গোরস্থানগামী এই মানুষগুলোর কাছে! সামনে চল্লিশ কদম। কী ভালো হত এটুকু রাস্তা এদের সঙ্গে একটু খোশগল্প করতে পারলে। সামনেই হরেন মণ্ডলের চায়ের দোকান। মরে গিয়েও খুরশেদের নতুন কিছু মনে হচ্ছে না। খুব কাছেরই কোনও স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে যেন সে এখানে এসেছে। মরেও যে এত কাছেই থাকা যায়, জানা ছিল না। ভালোই হল। গোরে শুয়ে থাকতে থাকতে পিঠটা ধরে এলে, কখনও উঠে এসে স্কুলে গিয়ে বসে থাকা যাবে। বসার কথা ভাবতেই খুরশেদের মনে হল, আহ্, কতক্ষণ একটু উঠে বসা হয় না। না ঘুমিয়ে এভাবে মটকা মেরে কাঁহাতক শুয়ে থাকা যায়। ভাবতে ভাবতেই আড়মোড়া ভেঙে খাটিয়ার উপর উঠে বসল খুরশেদ। নীচে মুসুল্লিরা কি টের পেল কিছু? খাটিয়া নড়ল নাকি? খাটিয়ায় বসে খুরশেদ দেখে, ওর বাড়ির পিছনের জমিটার ধারে নিয়ে এসেছে ওকে। আরে? কাশেম প্রধানের ছোট ছেলে না ওটা? হামিদুল না কী যেন নাম। শালা বিড়ি ফুকছে হাইড্রেনের ধারে বসে। এই জায়গাটার নাম হালের মাথা। এলাকার লোকের খুব দুঃখ, কাউকে জায়গার নাম বললে সে প্রথমেই শোনে বালের মাথা। এলাকার উঠতি ছেলেমেয়েরা তাদের নতুন বন্ধু, বান্ধবীদের জায়গাটার নাম বলতে গিয়ে লজ্জাতেই পড়ে। পাড়ার ব্যবসায়ীরা তাই রবীন্দ্রনাথকে ধরেছিল। চাঁদা-ফাঁদা তুলে রবীন্দ্রনাথের একটা বড়ো মূর্তি বসিয়েছিল রেলিং দিয়ে ঘিরে। রেলিংয়ের গেটে আবার তালা চাবি লাগানোর ব্যবস্থাও আছে। কবির মাথায় ছাদ, যাতে জায়গাটার নাম পখীহাগা না হয়ে যায়। চেষ্টা হয়েছিল রবীন্দ্রপল্লি, রবীন্দ্রনগর দুটো নামই চালু করার। কোনওটাই হয়নি। থেকে গেছে হালের মাথা। সেই হালের মাথার চৌপথিতে হাইড্রেনের ধারে বসে বিড়ি ফুকছে হামিদুল। হালের মাথার মোড়ে যে রবীন্দ্রনাথ দাঁড়িয়ে, সেটা দেখতেই পাচ্ছে না সে। খুরশেদ দেখতে পায়। এদিকে বিড়ির গন্ধ নাকে লাগতেই মনটা চঞ্চলও হয় খুরশেদের। খাটিয়ায় বসে থাকতে আর ইচ্ছে করে না। কোনও কিছুতে প্রচণ্ড উৎসাহী হলে মানুষ ভুলে যায় সে বেঁচে নেই, মরে গেছে। খুরশেদ ঝটপট নেমে পড়ে খাটিয়া থেকে। নেমে, নিজের খাটিয়াটাকে দেখে। খুরশেদহীন খাটিয়া চলেছে মুসুল্লিদের কাঁধে চেপে। নিজের জানাযা কাঁধে নেবার লোভ হয় খুরশেদের। ওদিকে হামিদুল চলে গেলে বিড়িটাও খাওয়া হবে না। রবীন্দ্রনাথের কাছে দুটো কবিতা পাওয়া যেতে পারে, বিড়ি নিশ্চয়ই থাকবে না বুড়োর জোব্বায়। ওটা হামিদুলই দিতে পারে। কিছুক্ষণ বিড়ির লোভ ছেড়ে খুরশেদ নিজের জানাযাই কাঁধে নেয়। দশ কদম খাটিয়ার পায়া এক কাঁধে নিয়ে চলে। ভারী মজা পায়। তবে আরও কিছু মজা বাকি ছিল তার। শোকে কাতর একদল মানুষ কীভাবে সব শোক আল্লার জিম্মায় রেখে সব ফেলে পালাতে পারে, জানা ছিল না খুরশেদের। জানা হল, যখন খুরশেদের গোরের কাছাকাছি জানাযা আসতেই বৃষ্টি নামল তোড়ে। খাটিয়া ফেলে মুসুল্লিরা দৌড়ল হরেনের দোকানের দিকে। খাটিয়া রইল পড়ে। তার পাশে খুরশেদ হাগতে বসার মতো একা বসে রইল নিজের জানাযা সামলে। পিছন ঘুরে দেখে হামিদুল মিয়াঁও নাই। বৃষ্টি নামায় মুসুল্লিরা খাটিয়া ফেলে গেছে। হামিদুলও যদি বিড়ি-শলাই ফেলে যায়, ভেবে উঠে পড়ে খুরশেদ। বিড়ি পাবার আশায় মনটা চনমন করে। হাইড্রেনের কাছে এসে দেখে, কিছুই নাই। একটু আগে হালের মাথায় দাঁড়িয়ে থাকা রবীন্দ্রনাথও নাই। খুরশেদই যেন এইখানে এই মুহূর্তে একমাত্র জীবিত ব্যক্তি। গোর ফেলে, খাটিয়া ফেলে, রবীন্দ্রনাথকে ফেলে, হালের মাথা ফেলে খুরশেদ নিজের পুরনো ইশকুল বাড়িটার দিকে হাঁটা দেয়। সবে তো দুপুর হয়েছে। ইশকুলে ছেলেমেয়েরা আছে তাহলে এখনও। নাকি প্রাক্তন হেডমাস্টার মরেছে বলে ছুটি হয়ে গেছে? খুরশেদের ইশকুলের চাল ফুটো। বর্ষায় কতদিন থৈ থৈ করেছে ঘর। সাপ, ব্যাং, কেঁচো, কচি বাচ্চা আর বুড়ো মাস্টাররা একসাথে থেকেছে।
বৃষ্টির রাস্তায় আশপাশে কেউ নেই দেখে খুরশেদের সামনে আসি আমি। কথা বলে বুঝতে পারি খুরশেদের একটা চাপা রাগ ছিল। বা রাগ আছে এই গল্পের লেখক, মানে আমার উপর। কারণ, তার ধারণা, আমি তাকে আমার লেখক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য আমার মর্জি মাফিক ব্যবহার করেছি। কথাটা ভুল নয়। কাজটা অন্যায়ও নয়। আমরা, লেখকরা তো এটা করেই থাকি। কিন্তু খুরশেদের বক্তব্য, আমি নাকি তার মগজের ভিতর সিসিটিভি ক্যামেরার মতো মাইক্রো চিপ বসিয়ে তার মনের সব কথা জেনে নিতে চাইছি। জেনে নিতে চাইছি সে কী ভাবছে। নইলে নাকি আমি লিখতে পারতাম না খুরশেদ এই ভাবল, খুরশেদ ওই ভাবল। আড়াল থেকে এইভাবে সুতোর টানে ওকে খেলাচ্ছি বলে ও ইচ্ছে মতো কিছুই করতে পারেনি, ওর অভিযোগ। ঝুনুবউকে ভালো করে না দেখে ওকে মরতে হয়েছে, সেটাও আমার জন্যেই, ওর বক্তব্য। এরপর খুরশেদের বক্তব্য আরও মারাত্মক। তার কথায়, এটা কর্পোরেট আচরণ। নজরদারি রাষ্ট্রের মতো কাজ। গল্পের স্বার্থেই খুরশেদের সব অভিযোগ মেনে নিই। ‘দেখেন মিয়াঁ’, তাকে বলি, ‘আপনার অভিযোগ সত্য। খুবই অন্যায় হয়েছে আপনার সঙ্গে। তা যা হবার তো হয়েই গেছে। তবে আপনি স্বাধীন। আপনি চাইলে ভূত কিংবা মানুষের মধ্যে ইচ্ছামতো ক্যাওড়ামো করতে পারেন। আবার চাইলে মৃত্যুকে সীমারেখা ধরে নিয়ে তার দুই পারের রহস্যটা ঘেঁটে দিতে পারেন ফকিরের মতো। যেটা আপনার ইচ্ছা,’ বলে, একটা মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের দিকে ব্যাপারটাকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করি। ‘ও আল্লা,’ আমার প্রস্তাব শুনে খুরশেদ বলল, ‘আমারে দুই খান বিষের শিশি ধরাইয়া কন যে দুইটার মধ্যে কোনটা আমার পছন্দ? শালা চুদিরভাই চমচম বাল বেশি তার ধোন কম।’
এই কথা বলে খুরশেদ ফের হাঁটা দেয়। সেইভাবে, যেভাবে লেখককে ছেড়ে চলে যায়, যেতে পারে তার চরিত্রেরা। বৃষ্টির ভিতর দিয়ে খুরশেদ নয়, খুরশেদের ভূত নয়, খুরশেদের ভূতজন্ম হেঁটে যায়। ভূতেদের তো রাজা হয়। কোথায় থাকে সেই রাজা, খুরশেদ এখনও জানে না। ভূতদের নিয়ম-কানুন কী আছে সেটাও তার জানা দরকার। এখনও কোনও ভূতের দেখাও সে পায়নি। ভয় দেখাতে না পারলে ভূতের রাজ্যে খুরশেদের কোনও দামই থাকবে না। যাক গে, মরুক গে যাক।
এখন আর খুরশেদের মনের কোনও খবর পাব না আমি। তবে কিছুক্ষণ তার পিছু নেওয়া যায়। ইশকুলের পাশের কাঁঠাল গাছটা বেয়ে বেয়ে ওঠে পাটাকামারি প্রাইমারি স্কুলের পুরাতন হেডমাস্টার খুরশেদ মিয়াঁ। তারপর একলাফে টিনের চালে। দেরি করে না। গা থেকে কাফনটা খুলে টিনের ফুটিফাটা ঝাঁঝরা জায়গাটায় পাতে। শুয়ে পড়ে তার উপর।