ঋতুপর্ণা খাটুয়া

ঋতুপর্ণা খাটুয়ার কবিতাগুচ্ছ

মনোলগ ও গুচ্ছ কবিতা

(১)
ওই পথটি খুঁজে পেয়েছি। কালচে সবুজ পাথরের পিঠে,
প্রিয় দার্জিলিং একেই এতদিন লুকিয়ে রেখেছিল,
হাঁটতে তো ইচ্ছে করেই, অপেক্ষার রাস্তা কথা বলে।
কিন্তু একটু ভয় ও ইতস্তত বোধ ছড়িয়ে আছে
রাস্তায় পড়ে থাকা রোদে—
কেউ কি হেঁটেছেন এখানে
গেলে কেমন হয় এসব জানতে আগ্রহ বাড়ে
এমন দোনোমোনো কিছু একটা নিয়ে
তারুণ্য থেকে যৌবনে হেঁটেছিলাম

(২)
আজকাল কেউ লেখে না, একটি রঙিন দিনের গল্প।
অ্যাকোরিয়ামে সাজাপ্রাপ্ত মাছেদের জীবনীগ্রন্থ —
এলেম আছে কিনা প্রমাণ দাও, লেখো তো দেখি।
শরীর খেকো গরমে ডাবের জলের মতো উপশম
কিংবা নিদেনপক্ষে একটি তরমুজ কেনার আশা
ছেড়ে দিতে হয়। আমার তো ছবি এঁকে বেড়ানো
ছাড়া তেমন কোনও কাজ নেই, তোমার চাকরিটা
চলে গেলে কী হবে ভাবি! একটি দেশি মুর্গির ফার্ম
খোলা যেতে পারে, কিংবা মাছ চাষ, তারপর ভাঙা
গড়ার বাজারে ধীরে ধীরে বড় হবে নিরলস প্রচেষ্টা।
তোমার আমার দুর্ভাবনার কথা ছেড়ে আমরা কি
কোনও সুখীভাবের কবিতা নিজেদেরকে
উপহার হিসেবে দিতে পারি না!

(৩)
মস্করা নয়, চলো আমরা উপত্যকায় চাষ করি বেগুনি কুমড়ো।
কেউ কখনও দেখেনি, এমন জিনিস, সেক্ষেত্রে আমরা প্রথম
জিনিয়াস হব, যারা উপত্যকার বুকে ফুলের বাগান করে
ভেতরে ল্যাণ্ডমাইন না বিছিয়ে বেগুনি কুমড়ো দিয়ে সাজিয়ে
তুলেছে। আমরা ঘোষণা করব, এ দিয়ে বশ করা যায় বুনো
জন্তুর থাবা, এবং রুখা শুখা উপত্যকার দিকে নদীর মোড়
ফিরিয়ে আনা যায়। এই খবরটি যদি বিস্ফোরণের মতো
ছড়াতে পারি তবে আর আগামী দিনের শত্রুর দিকে তাকিয়ে
কোনও ল্যাণ্ডমাইন বিস্ফোরণের প্রয়োজন হবে না।

(৪)
কেউ কি বিশ্বাস করবে, ট্রেকিঙের সেসব দিনে
আমি সম্পূর্ণ সজ্জন ছিলাম। মদ গচ্ছিত রেখে
পাথুরে নদীর জলে মন দিতে পারত বন্ধুরা।
সন্দেহ করত সাইকেলে গাদা বন্দুক নিয়ে হেঁটে
যাওয়া কয়লা শ্রমিকদের! কিন্তু আমার খপ্পরে
মদ গচ্ছিত রেখে, দূরে ঝোপের পাশে ওরা
সিগারেট খেতে যেত।
সন্ধ্যার অন্ধকারে, আমার হাতে তখন
স্বেচ্ছার নেশা। অত পোড় খাইনি যদিও,
তবুও পেটে মদ ঢেলে বেউড়া হওয়ার শখও হয়নি!
একটি অন্য নেশা আমাকে ততদিনে খেয়ে ফেলেছে।
ঘিষ নদীর ঝিরিঝিরে জলের ভেতর সামান্য
একটি পাথরে বসে, ভিডিওকলে পুটুর
ছোট ছোট হাত পা নাড়া দেখে চলেছি।
এই সময়গুলোতে ঝর্ণার জল এসে মিশে
নার্ভের ভেতর ফিনকি দিয়ে নেশা ছোটাচ্ছে

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment