চা খাও, জীবন
যদি ভেবে নাও মহাশূন্যে বসে আছে
চায়ের দোকানী, তবে হাওয়া ভরে যাবে
সুবহ-আড্ডায়, বাঁশবাগানোর মতো
ফুটে উঠবে মানুষের রাঙা কলরব।
আটখানা দীর্ঘদেহী নারকেল গাছ
লম্বা হাত মেলে দেবে তোমার দু’দিকে।
নীচে কলা বন, আর হানার দু’ধারে
ঝোপঝাড়, কয়েকটা বাড়ি কাছে দূরে।
মাঝখানে তুমি, মাটি ছুঁয়ে দাঁড়িয়েছ,
মাটির কটোরা। রবিবার শুক্তো রান্না
সেরে, চান করে চুল শুকোচ্ছে শ্রীমতী।
যদি তুমি শ্রীমতীর কুচি ধরে দাও;
যদি সোম-শনি তাকে বাসস্টপে ছেড়ে
বল’, “সাবধানে যেও”; তবে ঠিক জেনো
মহাশূন্যে উঁকি দেবে কেটলির মুখ,
মাটির কটোরা থেকে উৎসারিত হবে
ভোলগা-গংগা স্রোত, বয়ে যাবে সাগরের
দিকে, গতিপথ যতই পাথুরে হোক।
বরফ সাদায় ভরে যাবে চারপাশ,
অথবা জাগবে ধীরে সবুজ বিপ্লব।
মনে পড়ে যাবে নিয়ান্ডারথাল বেশ,
পাথরের অস্ত্র, লাল হরিণের মাংস—
ডিএনএ রক্তয় রাখে হোমো সেপিয়েন্স।
ওয়ার্নার হার্জগ এসে খুলে গেছে, দেখো,
স্বপ্নিল গুহার বুক; দুর্দান্ত হাতের
ধ্বংস ও সৃষ্টির রেখা, আদিম প্রবাহ
গড়াচ্ছে আর্দেশ থেকে প্রিয় দামোদরে।
দু’পাড়ে বেড়েছে দ্বন্দ্ব, শ্রেণী ও সমাজ
দু’পাড়ে বেড়েছে শস্য, কুন্তী, আকিলিস
খামারে বেড়েছে কুমড়ো শাকের মাচা
শ্মশানে বেড়েছে গল্প, অঙ্গার-পাহাড়
আদমশুমারি তবু লিখে গেছে আয়ু
খিদে, ভিক্ষা, মৃত্যু, শোক লিখেছে লবণ।
বেড়েছে চাকার স্বর, দিওয়ালি বাম্পার
বেড়েছে প্রবাসে ভিড়, মাথাপিছু আয়।
ভিটের কুকুর তবু মুখ চেয়ে আছে,
বেড়ালটা বসে আছে কানকোর লোভে।
বুড়ি থুড়থুড়ি নিম গাছ মরে গেলে
ফিরে এসো অশ্রু হয়ে নাড়ির বাঁধনে,
মশারির দড়ি খোঁজো, বিছানা নামাও;
ফিরে এসো, গল্প কর’, চা খাও, জীবন…
১৭/৬/২০২১
পাহাড়িয়া
পাথরে চেতনা নাই, পাহাড়ের প্রাণ-মন নাই
পাহাড়-সংগীতে তবু বেজেছে অনাদি
পাথরতরঙ্গে মিশে আছে ফা-হিয়েন।
তোমার চেতনা তুমি দিয়েছ পাথরে?
অনুভব করেছ কি পাহাড়স্পন্দন?
পাতা উল্টে পড়েছ কি পাহাড়িয়া পুঁথি?
রিসর্টে গভীর রাত্রি নেমে এলে, শোনো,
কার মনোবীণা ব্যালাডের মতো বাজে
কাদের পায়ের স্বর যেন বৈশম্পায়নের পাঠ।
যে সর্পিল পথ তুমি পেরিয়ে এসেছ, খুঁজে দেখো,
তার আশেপাশে ভাঙা রথ, হলদেটে গীতা,
হতভাগ্য পড়ে আছে কি না।
দু’ তারিখ কালকা মেলে বাড়ি ফিরে এলে
তোমাকে শুধোতে যাব কী কথা লিখলে তুমি
মোমবাতি জ্বেলে।
৭/৮/২০২১
কলিংবেল
মনের বাদল থেকে
আকাশের মুক্তি ঝরে পড়ে
চরাচর ছাতা রেখে
ভিজে ডাব হয়ে গান ধরে
চুপ করে চেয়ে থাকে বাড়িটা আমার
বেজে ওঠে কলিংবেল
বলে উঠি, যাই!
প্রভু,
কী যে ব্যাধি এনে দিলে ফলপ্রসূ,
খালি মনে হয়, বাইরে দণ্ডায়মান
স্যার জগদীশ বসু!
২/১২/২০২০
সুন্দর
মুখরিত হুক্কাহুয়া থেকে বহু দূরবর্তী তুমি
অথচ শেয়াল জন্মে লাভ হচ্ছে বাহবা-কয়েন
সুখের প্লাস্টিকে মনোদীঘি ভরে গেছে
বিম্বিত আকাশ নেই, চাঁদের ধনুক
হারিয়েছে লক্ষ্যভেদ। এখন উপায়?
অনুপায় খুঁজে পেল তোমাকে সুন্দর—
ঢোলা জামা, একদিকে হাফ-হাতা, অন্য দিকে ফুল
তিনরঙা ঢিলে প্যান্ট, আগুপিছু জোড়াতালি মারা
এক হাতে কুকুরের লাঠি, অন্য হাতে মস্ত বস্তা;
কাঁচাপাকা চুলদাড়ি, উলঙ্গ চরণ ধুলোময়…
এবার আকাশ যদি চাঁদের ধনুক ফিরে পায়,
সুখী প্লাস্টিকের বুকে পুরে দেব মাটির বিষাদ;
পুঁতে দেব তাতে নীল অপরাজিতার বীজ, ছায়াপথচারী
১১/৮/২০২১
বাড়ি
বাড়ি কি শুধুই বাড়ি?
ওই যে তিনটে আলো জ্বলে আছে তিনদিকে, তারা
কী কথা বলছে তমসাকে?
চলছে অনেক গল্প, অনেকের স্বরে-সুরে গড়ে-ওঠা কথা ও কাহিনি—
কত মাটি-ইঁট-বালি-রোদ-জল-সিমেন্ট-পাথর
রেখেছে তাদের জীবনের ওঠানামা;
কত কত শ্রমিকের পদছাপ, মিস্ত্রির সংলাপ
মিশে গেছে হাড়ে ও পাঁজরে;
বেজেছে রঙিন চুড়ি, স্বপ্নালু নূপুর আর আঙুলে আঙুল;
ঝগড়াঝাটির ফাঁকে কত লেবুফুল ফুটে গেছে,
ঝরে গেছে শিউলির গেরুয়া ও সাদা;
বেজেছে ছাদের আড্ডা, খোলা মতান্তরে
বৃক্ষের অন্তর থেকে হাওয়ার ফকির এসে গান গেয়ে গেছে—
আমি রামকৃষ্ণ জানি, মিশন জানি না…
বাড়ি কি শুধুই বাড়ি? না কি কথা-কওয়া পান্না-হিরে-চুনি?
ওই যে তিনটে আলো জ্বলে আছে তিনদিকে, তারা
কি কিছু বলছে আমাদের? চলো কান পেতে শুনি।
১৩/৯/২০২১