মধুসূদন পাত্র

ইংরেজি ও রবীন্দ্রকুন্ঠা

রবীন্দ্রনাথ যখন নোবেল পুরস্কারের সম্মানে ভূষিত হলেন তখনও তাঁকে কোনো অভিনন্দন বার্তা পাঠাননি কবি রবার্ট ব্রিজেস্; অথচ তিনিই বৎসরাধিককাল পরে ১৯১৫-র মার্চের প্রথমার্ধে Gitanjali-র কয়েকটি কবিতা নিজে সংস্কারের আগ্রহ প্রকাশ করলেন। অনুমতি চেয়ে চিঠি লিখলেন রবীন্দ্রনাথকে। অবশ্য এর পূর্বেই ১৯১৪-র ৭ই জুন তিনি অভিনন্দন জানিয়েছেন নোবেলবিজয়ী কবিকে। কিন্তু, সে অভিনন্দনের ভাষা বিচিত্র ধরণের এবং কৌতূহলোদ্দীপক। কবিকৃত অনুবাদ প্রসঙ্গে স্বাভাবিকভাবে এ প্রশ্ন এসে যায় যে শুধু ব্রিজেস্ নন, ডব্লিউ.বি. ইয়েটস্ সহ অন্যরাও রবীন্দ্রকৃত অনুবাদের সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তনে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন কেন? তার কারণ কি রবীন্দ্রনাথ নিজেই ?

রবীন্দ্রনাথের কবিতা, গল্প এবং প্রবন্ধের ইংরেজি অনুবাদ অনেকেই করেছেন যেমন লোকেন্দ্রনাথ পালিত, যদুনাথ সরকার, সুকুমার রায়, আনন্দ কুমারস্বামী, অজিতকুমার চক্রবর্তী, রবি দত্ত, ভগিনী নিবেদিতা, জগদীশচন্দ্র বসু সহ আরও কয়েকজন। এঁদের কারো কারো অনুবাদ The Nation, Modern Review প্রভৃতি পত্রিকায় মাসে মাসেই প্রকাশিত হয়েছে। ১৯১২-র পূর্বেও বিলাতে কবিখ্যাতি প্রচারে পত্রিকাগুলির একটি বিশেষ ভূমিকা ছিল। ১৯১১-র এপ্রিল সংখ্যা Modern Review তে ‘শিশু’ কাব্যগ্রন্থের ‘বিদায়’ কবিতার ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়, যে অনুবাদে রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং কুমারস্বামীকে সাহায্য করেছেন। ঐ বছর ২০শে ফেব্রুয়ারী তারিখে রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়কে লেখা চিঠি থেকে আমরা জানতে পারি অনুবাদের বেলায় অন্যের সাহায্য গ্রহণে তিনি কুণ্ঠিত ছিলেন না। তিনি লেখেন, “কুমারস্বামী আশ্রমে আসিয়াছিলেন– তিনি আমার কতকগুলি কবিতা অনুবাদ করিতে ইচ্ছা করিয়াছিলেন- সেইজন্য তাঁহাকে সাহায্য করিবার উদ্দেশ্যে আমি তাড়াতাড়ি গোটা তিন চার কবিতা নিতান্ত নীরস গদ্যে তর্জমা করিয়া দিয়াছিলাম। কুমারস্বামী যদি সেগুলি অবলম্বন করিয়া লিখিয়া দেন তবে Modern Review পত্রিকায় ছাপাইবেন। তাঁহার হাত দিয়া বাহির হইয়া আসিলে আমার আপত্তির কারণ থাকিবে না। …কিন্তু স্বকৃত তর্জমার বিড়ম্বনাগুলিকে কুমারস্বামী মাজিয়া ঘষিয়া দিলে তাহাতে অনুবাদক বলিয়া আমার নাম সংযোগ করা হইবে না”। শেষাংশে এটা স্পষ্টই প্রতীয়মান হয় যে ইংরেজি অনুবাদে নিজের দুর্বলতা সম্পর্কে কবি সম্পূর্ণ সচেতন ছিলেন প্রথম থেকেই। মেনে নিয়েছেন অন্যের হস্তক্ষেপও।

ইংরেজি গীতাঞ্জলি প্রথম সংস্করণের প্রথম পাতা।

             ১৯১৩-র ৬ই মে লন্ডন থেকে ইন্দিরা দেবী চৌধুরানীকে লেখা চিঠিতে গীতাঞ্জলির ইংরেজি তরজমা সম্পকে কৈফিয়ৎ দিয়ে লিখেছেন —  “আমি যে ইংরেজি লিখতে পারিনে এ কথাটা এমনি সাদা যে এ সম্বন্ধে লজ্জা করবার মত অভিমানটুকুও আমার কোনদিন ছিল না। যদি আমাকে কেউ চা খাবার নিমন্ত্রণ করে ইংরেজিতে চিঠি লিখত তাহলে তার জবাব দিতে আমার ভরসা হত না। তুই ভাবছিস আজকে বুঝি আমার সে মায়া কেটে গেছে— একেবারেই তা নয়-ইংরেজিতে লিখেছি এইটেই আমার মায়া বলে মনে হয়।”  আরও বলেছেন সেই দিনটির কথা যেদিন ৮৬টি কবিতার তর্জমা ভরা খাতাটি বন্ধু রোটেনস্টাইনের হাতে তুলে দেন। সেদিন ছিল ১৭ জুন, ১৯১২। কবি বলেছেন, তিনি (অর্থাৎ রোটেনস্টাইন) যখন কথাপ্রসঙ্গে তাঁর কবিতার নমুনা পাবার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন, তিনি কুণ্ঠিত মনে তাঁর হাতে সেই খাতাটি সমর্পণ করলেন।

       এই কুণ্ঠা কবির ভেতরে বাসা বেঁধে ছিল স্বাভাবিকভাবেই। তিনি জানতেন তিনি একজন বাঙালী। ইংরেজি তাঁর মাতৃভাষা নয়। হয়তো এসব তাঁর অনধিকারচর্চা। এই কুণ্ঠার সঙ্গে মিলেছিল তার স্বভাবসুলভ অহংকারহীন এক নম্রতা। ১০ই জুলাই ট্রোকাডেরো রেস্তরাঁতে India Society আয়োজিত সম্বর্ধনা সভায় সম্বর্ধনার প্রত্যুত্তরে কবি যে নাতিদীর্ঘ অথচ তাৎপর্যপূর্ণ ভাষণ দেন সেই ভাষণের প্রথমেই ছিল নিজের ইংরেজি সম্পর্কে দৈন্যের কথা। নতুন গড়ে-ওঠা বন্ধুগোষ্ঠী এবং অনুরাগীদের কাউকে কাউকে এসব অকপটভাবেই নিবেদন করেছেন কবি।

          ইয়েট্‌স্‌-এর সঙ্গে একত্রে বসে Gitanjali-র পাণ্ডুলিপির টাইপ করা প্রতিলিপিতে সংশোধন সম্মার্জনের কাজ করেছেন কবি। এককথায় একটা গুজবই উঠেছিল যে, Gitanjali নাকি আদ্যোপান্ত পুনরায় লিখেছেন ইয়েট্‌স্‌। ভ্যালেন্তাইন চিরোল নামে এক ধর্মপ্রচারক বাংলাদেশে এ গুজব রটিয়েছিলেন। প্রতিবাদ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ১৯১৫-র ৪ঠা এপ্রিল রোটেনস্টাইনকে লেখা চিঠিতে– “I think Yeats was sparing in his suggestions—moreover I was with him during the revisions.”  আর্নেস্ট রাইস বিস্তৃত পাঠ পর্যালোচনার পর অনেক আগেই জানিয়েছেন এরূপ গুজব ভিত্তিহীন। তিনি লিখছেন – “ …the small manuscript book in which the author made these new English versions when he was on his way here in 1912, is still in the possession of Mr. Will Rothenstein, and anyone who takes the trouble to compare the pocket book with the printed text will find that the variations one of the slightest, while in certain instances the printed reading may be criticized as not improvement on those in the Ms”

         অধ্যাপক সৌরীন্দ্রনাথ মিত্র তাঁর ‘খ্যাতি অখ্যাতির নেপথ্যে’ গ্রন্থে ৮৩টি কবিতার বিশ্লেষণ করে দেখিয়ে দিয়েছেন যে প্রায় ‘পাঁচশোটি বাক্যের মধ্যে কোনো না কোনো ভাবে, পরিবর্তনের স্পর্শমাত্র আছে এমন বাক্যের সংখ্যা তেতাল্লিশটি মাত্র’। 

পরিবর্তনের পরিমাণ কম বা বেশি যাই হোক না কেন রবীন্দ্রনাথ কোনো না কোনো ভাবে ইংল্যান্ডের ভাবুক সমাজের অন্তর্গত বন্ধুদের সাহায্য নিয়েছেন নিজের অনুবাদকে আরও সুন্দর ও নির্ভুল করবার জন্য। শুধু Gitanjali তেই নয় Gitanjali পরবর্তী কাব্যের পাঠসংস্কারের কাজেও ইয়েট্‌স্‌-এর ভূমিকা ছিল। যদিও নানা বিচিত্র কারণে সেই ভূমিকা পরে ক্রমহ্রাসমান হয়েছে। সে প্রসঙ্গ অন্য।  

                The Crescent Moon-এর বেলায় কবিকে সাহায্য করেছেন তরুণ কবি স্টার্জ মুর। The Gardener-এ প্রথম দিকে ইয়েট্‌স্‌ এবং পরে স্টার্জ মুর-এর সাহায্য নিয়েছেন কবি। Sadhana-র পাঠ সংস্কার ও প্রুফরিডিং করেছিলেন আর্নেস্ট রাইস। Chitra-র পাণ্ডুলিপি সংস্কারেও হাত ছিল স্টার্জ মুর-এর। কবীরের ১০০টি দোহা’র অজিত চক্রবর্তী কৃত অনুবাদের ব্যাপক পাঠসংস্কারে রত ছিলেন রবীন্দ্রনাথ । তখনও সাহায্য নিয়েছিলেন শ্রীমতী স্টার্জ মুর-এর। রথীন্দ্রনাথ প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে জানিয়েছেন, “স্টার্জ মুর-এর ছন্দের বোধ ছিল অসাধারণ এবং লাগসই শব্দ নির্বাচনে তার ছিল অদ্ভুত দক্ষতা”। আরও বলেছেন, “ইংরেজি গীতাঞ্জলির পর বাবার আরো যেসব ইংরেজি অনুবাদ পরপর প্রকাশিত হতে থাক, যেসব নির্বাচন করা, বিন্যাস করা নিয়ে বাবার সঙ্গে মুর-এর নিয়মিত আলাপ আলোচনা চলত”। এছাড়া হার্ভার্ডে প্রবন্ধ পাঠের পূর্বে কবি র‍্যাট্রে’র সাহায্য নিয়েছিলেন। আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে সাহায্য নিয়েছিলেন বন্ধুদের। ক্রমান্বয়ে এইসব নির্ভরতা শুধু ব্রিজেস্‌ কেন, অন্যান্যদেরও উৎসাহিত করেছিল রবীন্দ্রনাথের মতো খ্যাতনামা কবির রচনায় খোদকারি করতে।

       ইংরেজি রচনার নিরিখেই রবীন্দ্রনাথ যখন কবিখ্যাতির শিখর সোপানে আরোহণ করেছেন — ১৯১২-১৩ সালে কী ইংল্যান্ডে কী আমেরিকায় তথা সমগ্র পাশ্চাত্যে রবীন্দ্রপ্রতিভার দীপ্ত আলোকে সবাই মুগ্ধ, চমকিত, তখনও কবি নিজে তাঁর ইংরেজি লেখার দক্ষতা সম্পর্কে দোলাচলচিত্তই রয়ে গেছেন। তাঁর কোনো প্রথাবদ্ধ ডিগ্রী নেই—এই ভাবনাতেও কখনো সখনো পীড়িত হয়েছেন।

       ৬ই মে, ১৯১৩-তে ইন্দিরা দেবী চৌধুরানীকে লন্ডন থেকে লেখা চিঠির দিকে পুনর্বার তাকালে দেখতে পাই তিনি নির্দ্বিধায় বলেছেন, “ইংরেজি ভাষায় যে অনেকগুলো অত্যন্ত নড়বড়ে জিনিষ আছে — যেমন ওর article গুলো, ওর Preposition গুলো, ওর shall এবং will—ওগুলো তো সহজ জ্ঞান থেকে যোগান দেওয়া যায় না ওর শিক্ষা থাকা চাই। … সুতরাং আজ পর্যন্ত একথাটা সত্য রয়ে গেল যে আমি ইংরেজি ভাষা জানিনে”। 

       কারণে অকারণে বিভিন্ন সভায় পত্রপত্রিকাতেও এত বেশিবার কবি এ বিষয়ে নিজের দৈন্যের কথা তুলে ধরেছেন যে ইংল্যান্ডের তৎকালীন প্রতিষ্ঠিত কোন কোন কবির ধারণা হয়েছে রবীন্দ্রনাথের লেখা সংস্কার করবার যথেষ্ট যোগ্যতা তাঁদের আছে। যদিও রাইস, অ্যান্ড্রুজ এবং মুর-এর মতো সত্যিকারের গুণগ্রাহীর সংখ্যাও কম ছিল না। কবির প্রকাশ্যে ঘোষিত দুর্বলতা (যদিও বাস্তবে মোটেই সেরকম ছিল না)-কে ব্যবহার করে এবং তাঁর সুনাম বা খ্যাতিকে মূলধন করে কেউ কেউ নিজের সুনাম বৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষাও পোষণ করেছিলেন একথা অনস্বীকার্য।

       নোবেল পুরস্কার বিজয়ের অনেক পূর্বে ১৯০৯-এর ৪ঠা জানুয়ারী নিউইয়র্কের এক ভারতপ্রেমী আইনজীবী Myron H. Phelps-কে রবীন্দ্রনাথ ইংরেজিতে যে চিঠি লিখেছিলেন তা পুরোপুরি অনভ্যস্ত হাতে। প্রশান্তকুমার পাল মহাশয় জানিয়েছেন, “রবীন্দ্রনাথের নিজস্ব ইংরেজি রচনার প্রকাশ হিসেবে এটা প্রথমতম”। প্রায় এক বৎসর পরে সেই চিঠি Modern Review-তে ছাপা হয়। ছাপার পূর্বে চিঠিটির ভাষা, বানান, পাংচুয়েশন সমস্তই দেখে নেওয়ার জন্য কবি অনুরোধ করেছিলেন রামানন্দবাবুকে (রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়- সম্পাদক, ‘প্রবাসী’)। কোনো অংশ পরিত্যাগ বা সংশোধন করতে হলে তিনি যেন নির্মমভাবে তা করেন সেই অনুরোধও ছিল।

                   আর সেবার, ১৯১২-র শেষের দিকে আমেরিকায় গিয়ে যখন তিনি ‘গদ্যের ধারা’ নিয়ে পড়লেন এবং প্রায় প্রতিদিন ইংরেজিতে প্রবন্ধ রচনা ও বিভিন্ন সভায় সেসব পাঠ করতে আরম্ভ করলেন তখন তাঁর মনে আত্মবিশ্বাসের ক্ষেত্রটি ক্রমশ বিস্তৃত ও দৃঢ় হয়েছে বোঝা যায়। ২রা ডিসেম্বর, ১৯১২-তে একথা জানিয়ে অজিত চক্রবতীকে লিখেছেন- “এখানে আমাকে জবরদস্তি করে এই ইংরেজি গদ্য লেখায় প্রবৃত্ত করিয়ে আমার উপকার করেছে – ভয় ভাঙিয়েছে, কতকটা অভ্যাসও হয়ে আসচে।” প্রধানত গদ্য রচনায় নিযুক্ত থাকলেও কবি আর্বানা ও শিকাগোতে থাকাকালীন The Crescent Moon এবং The Gardener-এর অন্তর্ভুক্ত কিছু কবিতা অনুবাদ করেছিলেন।

    

রবীন্দ্রনাথ ও রোটেনস্টাইন। লন্ডন, জুলাই, ১৯১২।

 নোবেল বিজয়ের পরেও কবি তাঁর ইংরেজি রচনা সম্পর্কে নিজ দুর্বলতার কথা বিস্মৃত হননি। ১৯১৪-র ফেব্রুয়ারিতে রোটেনস্টাইনকে লেখা চিঠির মধ্যে পূর্বোক্ত ইন্দিরা দেবীকে লেখা চিঠির কিছু প্রতিধ্বনি শুনতে পাই। ভ্যালেন্তাইন চিরোল-এর অপপ্রচারের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন রবীন্দ্রনাথ। এ ধরনের প্রচার যে ভিত্তিহীন এবং অসম্মানজনক তা জানাতে পিছপা হননি তিনি। কিন্তু পরে যেন কৈফিয়ৎ হিসেবেই হাজির করেছেন—“… your language is not easy for me to use. I know I am apt to make a mess of your preposition and in my blissful ignorance I go on dropping your articles in wrong places or dropping them out altogether. Then I do not know set phrases which greatly economise trouble in sentence making and very often 1 do not know how to write simple matter of fact things in English.”     

        কবিপ্রয়াণের বহুবছর পর ১৯৬৫-র ৩০শে আগস্ট রবীন্দ্রসান্নিধ্যে থাকা আর এক কবি অমিয় চক্রবর্তীর উক্তিতে উক্ত বক্তব্যের সমর্থন মেলে। তিনি জানিয়েছেন –  “[His] English was just as true but it was rather in the grand manner. He never quite grasped the conversational and even colloquial challenge of, for example, James Joyce”। তিনি আরো মন্তব্য করেছেন যে রবীন্দ্রনাথ ‘just missed the modern touch”। 

       ১৯১৩-এর ১৪ই ফেব্রুয়ারি আমেরিকা থেকে রোটেনস্টাইনকে লেখা চিঠিটি অনুধাবন করলে বোঝা যায় তখনো তিনি বন্ধু রোটেনস্টাইনের বিবেচনা ও পছন্দ অপছন্দের ওপর নির্ভর করছেন। ৫২ নম্বর কবিতায় সংশোধনের ব্যাপারে ইয়েট্‌স্‌-এর অনুযোগকেও মেনে নিয়েছেন, আশ্বাসও দিলেন এই বলে – “I have promised him to submit to him proofs of the second Edition of Gitanjali, for him to make necessary restorations.”  বলাবাহুল্য, ম্যাকমিলান সংস্করণে পরিবর্তিত রূপই স্থান পেয়েছে।

এরকম আরও অনেক চিঠি বা ঘটনার উদাহরণ দেওয়া যায় যেখানে কবি রোটেনস্টাইন ও ইয়েট্‌স্‌-সহ বেশ কিছু, বিদ্বজ্জন তথা বন্ধুর মতামতকে গুরুত্ব দিয়েছেন। একমাত্ৰ এজরা পাউন্ডের ক্ষেত্রেই আমরা দেখতে পাই যে রবীন্দ্রনাথ ততটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না তাঁকে। ১৯১৩-র জুলাই সংখ্যা Poetry পত্রিকায় প্রকাশের জন্য যে নয়টি কবিতা তিনি দিয়েছিলেন সেগুলো সম্ভাব্য পরিবর্তন, পরিমার্জনা করবার অধিকার দিয়েছিলেন পাউণ্ডকেই। দেখা যায় ডিসেম্বর, ১৯১২ সংখ্যায় প্রকাশিত ৬টি কবিতার পাঠ মুদ্রিত Gitanjali-র পাঠ থেকে কিছুটা আলাদা। জানা যায়নি, এক্ষেত্রে কবি কোনও অনুমোদন দিয়েছিলেন কি না। তবে কোনও প্রতিবাদও করেননি। পরবর্তীকালে পাউণ্ডকে কবি আর গুরুত্ব দেননি বোধহয় এই কারণেই যে, তিনি মনে করেছেন নব্য ধারার কবি এজরা পাউন্ডের কাব্য কুশলতা বা ভাবগভীরতা তেমন নেই। স্বকৃত ইংরেজি অনুবাদগুলির সংস্কার-সাধনে অন্যদের চেষ্টাকে যথাসম্ভব বাধা দিয়েছেন পরবর্তী সময়ে, দু-চারটি ব্যতিক্রম যে নেই তা অবশ্য নয়। 

(‘গীতাঞ্জলি’র অনুবাদ ও রবার্ট ব্রিজেস্’ – শীর্ষক একটি দীর্ঘ প্রবন্ধের প্রথমাংশ)   

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment