হিন্দোল গাঙ্গুলী

আফ্রিকার কবিতা


আফ্রিকার কবিতা। অনুবাদ: হিন্দোল গাঙ্গুলী

আকপা আরিঞ্জ (বা আরিঞ্জচুকিউ) একজন নাইজিরিয়ান কবি, চিত্রগ্রাহক এবং ক্যুইয়ার অধিকারের স্বপক্ষে লড়াই করা এক সামাজিক কর্মী। চ্যাপম্যান ইউনিভার্সিটিতে তিনি ইংরেজি ভাষাসাহিত্যের স্নাতক। ২০২৩ সালে তিনি অক্সবেলি রাইটিং এর রিট্রিট ফেলো হন, এবং ২০২১ সালের পোয়েট্রি আর্কাইভ ওয়ার্ল্ডওয়াইড পুরস্কার প্রাপক। তাঁর কাজ কেনিয়ন রিভিউ, ট্রানজিশন, প্রেইরি স্কুনার, দ্য নেশন এবং অন্যত্র প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর নতুন বই ‘সিটি ডুয়েলার্স’, ধর্ম, সংস্কার এবং নাইজেরিয়ান যৌনবোধের প্রতিচ্ছেদ নিয়ে কথা বলে।

 

 

আত্মহত্যার পর
আকপা আরিঞ্জ

তুমি মারা যাওয়ার পর, মা তোমার বিছানা সরিয়ে দিয়েছিল
সেই জায়গাটা নিয়েছিলাম আমি

‘কিপিং আপ উইথ দ্য কার্দাশিয়ান’ থেকে ‘ব্ল্যাক-ইশ’
টিভি চ্যানেল বদল করায় অসুবিধা ছিল না কোনো

রাত্রে যখন তোমার কুকুরটা ডাকতেই থাকত
আমরা ভাবতাম ও বোধহয় তাপ সহ্য করা শিখছে

আমরা খুশি চেয়েছিলাম, আর তুমি ফুল –
যখন ক্রিসেনথেমাম ফুটে উঠল

তুমি জিগ্যেস করেছিলে আমি কখনও কাউকে হারানোর ভয় পেয়েছি কিনা
আমি ‘না’ বলেছিলাম, কারণ অস্বীকার ব্যথাকে সহজ করে

একবার আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম আমার পিংপং বল
যা পাওয়া গিয়েছিল তোমার বুকে

আমরা যা পাব না, তাইই সবসময় আমরা চেয়ে যাই

এই কবিতায়, নিজেকে তুমি বলে ভান করছি কারণ একবার আমি জুডিথের সঙ্গে নাচতে চেয়েছিলাম
যে আমার দিকে কখনও তাকায়ও নি

সে রাতে আমি তোমার নাম প্রথমে লিখলাম
তারপর, সারা পাতা জুড়ে লিখলাম, “আমি পারব না…”

তোমাকে কখনও আমার ভেতর খুঁজে পাওয়া যাবে না
এই ভেবে পাতা ঝরে

গলে, পচে – মিশে যায় মাটিতে

 

১৯৬৭

আমাদের মধ্যে অনেকেই
মৃত্যুকে এত কাছ থেকে দেখে নি
বিনোদনের পর, আমাদের শোক আমরা তাই সাজিয়ে নিলাম

অন্তত শুধু একবারের জন্য একটু খুশি পেতে চেয়ে
এই জীবন এবং পরবর্তীতে

কিন্তু দরজার সামনে
মৃত সেনাদের হিমশীতল প্রশ্বাস
কাউকে শান্তিতে মরতে দেবে না

তাই আমরা জড়ো হয়েছি কেবল

অবসর ছাড়া
আশার ভেতর
বেঁচে থাকার জন্য থাকবে না আর বেশিদিন

 

বিরতি

পুলিশ যখন তোমার মৃতদেহ নামিয়ে আনল
মা হেসে উঠেছিল

আমি বেহালা বাজাচ্ছিলাম
কাজটা সহজই..

নকল করে যাও, যতক্ষণ না সেটা তোমায় মেরে ফেলে
অ্যাপ্রিকটকে বৃত্ত বানাতে থাকো

আমাদের চিরায়তকে খোদাই করে আসার জায়গায়
আমি তোমার নাম বলেছিলাম, তিনবার

শাশ্বত উত্তর দিয়েছিল
আমি বলতে পারিনা এই প্রেত আমার

 

থাটো চুমা (Angel Thato Chuma) বৎসোয়না নিবাসী একজন লেখক, কবি, গায়িকা এবং স্থানীয় কৃষ্টির প্রচারক। বৎসোয়না জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি মার্কেটিং এর ওপর ডিগ্রী অর্জন করেছেন। তাঁর ছোটগল্প ও কবিতা নাইজেরিয়ার সারাবা (Saraba) পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশ পেতে শুরু করে। আমেরিকান প্রকাশনা সংস্থা স্ট্রিঞ্জ হরাইজন বর্তমানে ওঁর সঙ্গে কাজ করছে। লোকাল স্লাইস নামক এক সংস্থার তিনি প্রতিষ্ঠাত্রী ও কর্ণধার, যা স্থানীয় দ্রব্য এবং সংস্কৃতি বিক্রিতে নব উদ্যোগপতিদের সহায়তা করে।

 

এক লম্বা আকাশ
থাটো চুমা

“মেয়েরা যদি তাদের ব্যথা বুনতে পারত
তা আকাশের চেয়েও বড় হয়ে যেত”
তিনি শুরু করলেন

আমার মা বলত
মুখের ভেতর সূর্য ভরে রাখতে
সেসব অতি অন্ধকার দিনের জন্য যা কাটানো দুষ্কর
যেসব দিন যা বিলাপের মত শুনতে লাগে

তিনি বলছিলেন
নিজের বুকের ভেতর
নিজের জন্য একটা বাসা বানাতে
যে উপাসনালয় থেকে
আমার আত্মা একটু গলা ভিজিয়ে নিতে পারবে

“বাছা মোর
সত্য তোমার জিভের নীচে অবস্থান করে
তা উচ্চারণ করতে শেখো”

আমরা টিকে আছি
কারণ আমাদের মায়েরা বেঁচেছিলেন

 

আমার জন্য ভালোবাসা

আমার জন্য এক ভালোবাসা রাখা আছে
যা প্রাচীন প্রার্থনায় মোড়া
একটা ভালোবাসা আমার ফুসফুসে শ্বাসের মত আটকে আছে

আমাকে টেনে আনা হয়েছিল এক ভালোবাসা থেকে
গল্পের ধুলোয়
খুশির হাওয়ায়
একটা চতুর গান যা নিকষতম রাত্রিকে ভোরের দিকে নিয়ে যায়

ভালোবাসা
আমার জিভকে ঘিরে ধরে
নতুন ভাষা বোনে
নিজেকে আরেকটি নতুন দিনের সুগন্ধের দিকে নিয়ে যায়

 

নিকা কর্নেল একজন দক্ষিণ আফ্রিকান লেখিকা যিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আফ্রিকান স্টাডিজের ওপর স্নাতকোত্তর অর্জন করেছেন। বর্তমানে স্বামী ও পোষ্য বেড়ালের সঙ্গে লন্ডন নিবাসী এই কবি ১৪ বছর বয়স থেকে সংবাদপত্রে কলাম লেখা শুরু করেন। এছাড়াও নিয়মিত লেখেন বহু ব্লগ এবং আর্টিকল। ২০২৩ সালে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর প্রথম কবিতার বই, ‘দ্য স্কাই ইজ ফলিং’। আফ্রিকা ছাড়াও ইংল্যান্ড এবং আয়ার্ল্যান্ডে তাঁর কাজ প্রকাশিত হয়েছে

 

 

তেরোতম
নিকা কর্নেল

পরেরবার একটু আস্তে যেও
তুমি আমার ভেতরে থাকো
আমি ভঙ্গুর, কাচে বোনা এক হরিণী
আমাকে ছোঁও এমন
যেমন মমতায় শিশুর চুল বেঁধে দিতে হয়

তোমার আঙুলগুলো বড়
আমার তন্তুরা ক্ষীণ
যখন ভিজে যাই
কাগজের মত, আমায় ছিঁড়ে ফেলা যায়

 

মনোবিদের অপেক্ষালয়ে সদস্যরা
১. একজন কিশোরী যার চোখ তার থাইয়ের চেয়েও আয়ত
২. একজন যুবক যে সবার মাঝে মুখ ঢেকে রাখে সবসময়
৩. একজন মহিলা যিনি ব্যাগে এনেছেন বেগুনি কম্বল, যার নীচে তিনি রাত কাটান
৪. একজনও, পুরুষ নেই

 

তৃষ্ণা
আমি খরার দেশে থেকেছি
কঠিন, কঠোর

বিমাতার চুলের প্রসাধন সরিয়ে নিও না
তার চুল জলে ভেজা
আর তোমার বাবার ভালোবাসায়
তাঁর ত্বক ঘষা হয় নি
তার ফোটানো গোলাপ
সুন্দর, লোভী ও বিদেশীয়

তুমি ছোট্ট, অপরিচ্ছন্ন, শক্ত
এক ঔপনিবেশিক ওলন্দাজ
এই ভাঙা জমির মানচিত্রই তোমাকে মানায়

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment