আকাশ রায়

আকাশ রায়ের কবিতাগুচ্ছ

মাস্টারমশাই

যত না লিখি তার চেয়ে কাটাকুটি খেলি বেশি
ঘুমাবো এবার,না কাটলে শূণ্য পাবো কীভাবে!
ধুতির কোঁচড়ে মাস্টারমশাইয়ের ব্যর্থতা উঁকি দেয়
প্রণামের অছিলায় দেখেছি কয়েকবার
সত্যি বলছি স্যার-আমি কেটে গেছি
শূণ্যে ভরিয়ে দিন আমায়
তারপর সাদা খাতায় ফুটে উঠুক-
এক অস্থির বালিকা
যে প্রতিদিন জল দেয়,ছায়া দেয়,মাথায় মাখিয়ে দেয় পাহাড়িয়া ঝুরো মাটি

সফলতা কি এতো সহজ মাস্টারমশাই?
ভেবে দেখুন তো,পুণ্যের অহংকার বেশী নাকি শূণ্যের…

 

সার্কাস

শরীরে অজানা জ্বর, ভেবে দেখো আজ মিলিত হবে কিনা। বাতাস বেয়ে নেমে আসছে ধূসর সার্কাস।ট্রাপিজের দুপাশে তুমি আর আমি। আমাকে নির্বস্ত্র করে নাচাও তুমি। যেভাবে পুতুল নাচে, নিজের অভিমানে। ঘামের মহামারী, তারা আজ সবান্ধব উপস্থিত। ভাসাও আমাকে, আদিমতা দাও।

 

মেঘলা দিনের রুটি

(১)
মায়ের চোখের সাথে ভোর আসে শরীরে
আলো এসে পড়ে যেন পাখিদের খেতে দেওয়া বীজধান
টুকরো রোদের প্রান্তে জেগে ওঠে আমাদের পাড়া।
দূরে ধর্মের কাঁটাতারে একপাশে বাজে আজানের সূর
অন্যদিকে ফুলচন্দনের সাক্ষাতে আশ্রমিক গান।
আমি পুজো বুঝি না।ভক্তি তো কেবল শুনেছি সঙ্গীতে
রাস্তার ঘুম ভাঙায় নিরাকার পথচারী
বাজারের থলে হাতে ছুটে যায় ব্যস্ত নকশীকাঁথা।

(২)

প্রান্তে অভিভাবকের গাম্ভীর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে বাইপাশ
মাঝে তার কবিতা লেখার নির্জন দানা হাতে বসে থাকে স্টেডিয়াম
মেঘেদের ছুটি দিয়ে গাছেরা তাসের আড্ডা জমায়
বাতিল চায়ের পাতা রাজনীতি ছিবড়ে হয়ে যায়,সন্ধে নামে।
মিহি ফল খেতে খেতে সময়ের বয়স বাড়ে
জন্মদিনের হিসেব লেখে আহত পিচ রাস্তা
কে জানে,কোন উষ্ণ দিবাস্বপ্ন ছুঁড়েছে তাকে
ব্যর্থ প্রেমিক হতে চেয়ে সে আজ সিঁদুর ছুঁড়েছে-
পুরোনো শামিয়ানায়

(৩)

মফঃস্বলের রাত নামে ক্লান্ত ব্যাটসম্যানের খুলে রাখা প্যাডের মতো
জানে কঠিন খুলে রাখা তবু চলতে হয়।
কত যে নিষ্পাপ অক্ষর জন্ম হয় প্রতিদিন,
পাঠশালা ভেদ করে চিৎকার আসে নবীন ক্যালিগ্রাফির মতো
বাতাসে ঘুমোট নামে,ভারী হয়ে আসে বাগানের সিনারি।
বিচ্ছেদ? সে তো মানবিক কান্না
আমাদের মফঃস্বলে ভালোবাসা বড় হয় রোজ-
মেঘলা দিনের রুটির ভাগ পাবে বলে

 

আধুলি

কুটো বয়ে এনে জমা করা ছায়ার প্রলাপ
পকেটের আধুলি ছুঁড়ে মারি বাতাসে
আর কেউ না জানুক,
সে তো জানে-
আমি আসলেই ফুরিয়ে যাচ্ছি

কিন্তু যাচ্ছি কোথায়?
আমার স্ববিরোধী পাড়া,
বাড়ির পাশে সদ্য কিশোরীজন্মা হরিণী,
নাভি বেয়ে নেমে আসা আত্মীয়তা
এসব ফেলে আমি যাচ্ছি কোথায়?

যাওয়ার আগের রাতে আমার
বাঁশি হাতে সম্মোহিত করছে কে?
পিছুটানের খোরাক হাতে কে খাইয়ে দিচ্ছে পারিবারিক পায়েস!
আমাকে দূর্বল করো না কেউ,দুর্লভ করে দাও।
পারো যদি

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment