বিকল্প
১
নিজেকে দেখার চেয়ে বড় খেলা পৃথিবীতে নেই
আমি কী কী পারি আর কতটা পারি না
কতটা ক্ষমতা আর কীভাবে বৃত্তের শেষে পরিধি পেরোই,
কীভাবে জলের পাশে বেজে ওঠে ড্রাম, বিউগল
স্তব্ধতার বুক চিরে কীভাবে ছিটকে ওঠে কান্নার ফোয়ারা,
তাই দেখি, তাই দেখি, সেভাবেই খেলা জমে ওঠে…
২
ছিঁড়ি ছিঁড়ি ভাব করি, ধুয়ো তুলি এই ছিঁড়লাম
ধাবিত রক্তের পাশে ফেলে রাখি মরচে-ধরা ব্লেড
মাথার ভেতর খুঁজি গলি-ঘুঁজি, পর্দা তুলে নামি
পরবর্তী পর্দা খুলে যায়, মজার খেলা রে ভাই,
হাওয়ার রেখায় আর কালের রেখায়
আলো সরে সরে যেতে থাকে, নিভে যায়…
যন্তরমন্তরে যত মজা লুটে যাই!
৩
যে লেখা লিখতে চাই, একদিন দেখি এসে দাঁড়িয়েছি তারই পাশটিতে
কলকাতা জিতে গেছে, আমাদেরও আধপোড়া ঘরে
চাঁদ এসে উঁকি মারছে বালাপোষে, তক্তার গায়ে
হীরের কুচির মতো চাঁদ …
যে লেখা লিখতে চাই, দেখি, সর-পড়া সেই পাত্রের তলায়
অধঃক্ষেপে আটকে আছি তুমি, আমি, জ্বলন্ত সময়
কলকাতা জিতে গেছে, যেভাবে লেখারা জিতে যায়
৪
সাপের ছোবলে আজ ঘুম ভাঙলো সকালে আমার
কাটারির এক কোপে মা দিয়েছে দু’টুকরো করে
ঠান্ডা সেই লেজের আঘাত ছ্যাঁত করে এসে পড়তেই
চেঁচিয়েছি আমি… ঘুমের নৈহার গেল ছুটে…
বাবুল, বাবুল ডাকি, অচেনা ভাষার অভিঘাতে
বাবাও তো চুপ মেরে থাকে…
একা কোন অন্ধকারে বিপদসঙ্কুল ফেলে
ভোরবেলা পাড়ি দিচ্ছে জগতসংসার!
৫
আমাকে কখনো কেউ বলেনি নতুন কিছু লেখো
যত ঘিষা-পিটা তাই, লিখে যাই তার বকলমে
সরেস বন্দুক আনি, তাক করে গুলি ছুড়ি দূরে
ঝুর-ঝুর করে মাটি ঝরে পড়ে, উঠোনে আমার
ওমা! দেখি আরও দূরে, ওই সরু নালাটির পাশে
মুখ গুঁজে পড়ে আছে পেতে-চাওয়া ডাব,
পরীক্ষার হলগুলি দেখছে দাঁড়িয়ে ঠায়, খাতা
জমা দিয়ে ওই কার চোখ ঘুরে ঘুরে ঘুরে গেছে
অভিভাবকের বন্ধ দরজার ওধারে…
৬
বিরহ গাছের মতো। নদীর সোনালি পাড় ভাঙে…
৭
ল্যাদে ও আরামে বসে কেটে যাচ্ছে বিমূর্ত সময়
রোদে শীতকাল লেগে বিড়ালের চোখ বুজে আসে
ভয়ঙ্কর শান্ত দিন, তাড়া খেয়ে কবি ও কবিতা
ত্রস্ত পায়ে উঠে আসে –– কাঁটা নিয়ে টানাটানি করে,
রক্তাক্ত কাঁটায় ছিন্ন মূর্ত মুখ
বিমূর্ত সময় খুঁটে খায়।
৮
আমি খাচ্ছি, খাবি খাচ্ছি রোজ
আমি ফেলছি ভেঙে ফেলছি ডানা
দূরের রোদের গায়ে জেগে থাকছে আমার ঠিকানা
কোন মন্ত্রবলে যেন ভূমি উঠছে শূন্যের উপর
আমি জানি, আমি বসছি সর্বাঙ্গসুন্দর
কী উপায়ে, মধুভান্ড খালি করে বিষ
উগরে দিচ্ছি ক্রমে, অহর্নিশ
ভ্রমে ন্যুব্জ, গ্রন্থভারে পায়ে পায়ে শ্লথ শুক্রকীট…
এমন ভাষায় লিখি পাণ্ডুলিপি,
আসলে মিসফিট যত কারিকুরি––
গল্প বলি, ছিঁড়ে নিই দাঁতে নখে জিভের প্রান্তর
অতি জীর্ণ শব্দে গাঁথি কবিতার ভগ্ন কলেবর
রক্তাক্ত কাঁটায় ছিন্ন মূর্ত মুখ — তাকেই হারিয়ে ফেলতে ফেলতে খুঁজে বেড়ানোর এক প্রলাপগাথা যেন এই স্তবকগুলি। কবিতার কাছে তো এমন প্রলাপই শুনতে চাই আমরা।