আচ্ছে দিন
চাক-ভাঙা সন্দেহ ছড়িয়ে পড়ছে ব্যারিকেডের ওপর। সবকিছুই দৃশ্যত পরিষ্কার; তবুও লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যেতে হয় ভিড়ের মধ্যে। ঝকঝকে দিনের গায়ে স্ট্যাম্প ফেলো, ঠেলে দাও আন্ডারগ্রাউন্ডে। কুয়োর ভেতর ছটফটিয়ে মরুক পিঁপড়ের দল। আমারও তো বাড়ি আছে— ছেঁড়া পর্দা, আধপাকা বিড়াল আর নড়বড়ে বিছানা…
আলো নিভিয়ে অনেকক্ষণ বসে আছি রাস্তার ওপর। গায়ে এখন রংওঠা রদ্দি গেঞ্জি। কোনো ঢং নেই; পৃথিবী গভীর হলে এখানে সবাই স্বাধীন (?)। সবাই স্বপ্ন দেখতে ব্যস্ত। স্বপ্নের গায়ে একটা লাল ওড়না ওড়ে। স্বচ্ছ, অথচ স্নিগ্ধ। ঠিক যেমন আমার সামনে পড়ে আছে। চারটে কাক তাকিয়ে আছে সেদিকে। ওরা আজকাল ঘুমোতে ভুলে যায় খুব। গন্ধ পেয়ে গেছ মাংসের? ভেবে নিচ্ছ আড়াল? সদর দফতর কি জেগে উঠবে না চাট আর খোঁয়াড়ের গল্পে?
সাইরেন বেজে গেছে বহুক্ষণ।
বাড়িতে বাড়িতে কমে যাচ্ছে জানলার সংখ্যা। বৃষ্টি হয়নি; তবুও পৃথিবী সতত পরিষ্কার! রোদচশমা চোখে খুঁটে খাচ্ছি ভাত। সোয়াদের চোটে ভুলে যাচ্ছি পচা গন্ধের কথা। মানুষেরা দড়ি খোঁজে; গাছে গাছে ঝুলে পড়ে মিষ্টি কামরাঙা…
মিছিল এগিয়ে আসে। উলঙ্গ আমি, বেল্ট খুলে এগিয়ে যাই তাহাদের দিকে। পায়ে পায়ে লোটাতে থাকে লাল ওড়না। কোঁচকানো, আহত; এবং স্পষ্ট।
নিরুদ্দেশ সংবাদ
‘মালতি দেবী ফিরেছেন?’
ইন্দিরার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল অজিতেশ। উত্তর নেই। গলার মালাটা ঠোঁটে সেঁটে গেছে ইন্দিরার। ঘাম পড়ছে— রংচটা, উদ্বায়ী একটা ঘটনা…
অজিতেশ কর গোনে। একেক ডান এগোয়; আর কোদালের ঘা উপড়ে আনে মাটি। মালতি দেবী কী ভাবছেন এখন? বেওয়ারিশ টিউবে জল খেতে কেমন লাগছে? ওঁর মেয়ে কি এখনও ছেঁড়া টায়ার নিয়ে দৌড়য়? ইন্দিরা মাটি খান। মন্ত্রীর আস্তিনেও দু’ছটাক লাগে। মন্ত্রী হাসেন; দাগ গাঢ় হয়।
ইন্দিরা হাসেন। দাগ আরও গাঢ় হয়।
মালতি দেবীর নম্বর ডায়াল করে অজিতেশ। ওপাশে পুরুষকণ্ঠ হাঁপিয়ে উঠছে মহিলা সুরের নিচে। মনে পড়ে, ওঁর কোনো মোবাইল ছিল না। অথচ নম্বর ছিল। অজিতেশ এখন আপনাকে কল করছে।
আপনারা দুজনেই পরস্পরের হাঁপানির শব্দ শুনতে পাচ্ছেন। আর শুনছেন মালতি দেবীর কান্না। লিফলেট হাসছে, বেরিয়ে যাচ্ছে কালো এসইউভি…
আপনি কোথায়? অজিতেশ? ইন্দিরা?
কিছু লোক হাত মুঠো করে চলে যাচ্ছে লালবাড়ির দিকে। আর কোনদিন ফিরতে পারব না।
মালতি দেবী ফিরেছেন?
গুয়ের্নিকা
হাত থেকে ছোরাটা পড়ে গেল।
তোমার পাঁজর এখন
দুটো কুকুরের মুখের অন্ন হয়ে ঘুরছে
দেখছ
ঘোড়াদের ডাক শুনতে পেয়েছ অনেকক্ষণ
ছাদে রাখা হাত
ছোটো চোখ
আর, থপথপ আওয়াজ
তুমি একটু একটু করে ট্রফি খুলে রাখছ
দেখছ
কীভাবে লাইন ধরে মারামারি লেগে যায়
কাবাবের দোকানে
মহল্লায় ওড়ে
হলুদ-সবুজ-নীল সব পতাকা
ছয় অঙ্কের নম্বর
সুন্দর পোশাক পরে একটি শিশু
ভেসে এল নদীর ওপর
মুখে গোঁজা রুমাল; নখের ভেতর
সদ্যোজাত নাভির টুকরো
শিশুটিকে টোকা মারে দুটো সিগাল
একবার
দুবার
চা র বা র
তারপর দরদাম করে
দেহ কিনে চলে যায় ওরা
দেয়ালের ওপাশে গর্ত করে
এসব দেখেছিল উইল এবং তার বন্ধুরা
পালা করে দেখেছিল
শিশুটির কামিজের নিচে চাকা চাকা মাটি
আর মাটির নিচে
ছয় অঙ্কের নম্বর
একটি জোচ্চুরি কবিতা
খোকা, উলঙ্গ চাদর পরে বসে আছি
এইখানে এই মণ্ডপে
বড়ো কঠিন প্রতিমা আমাকে মেলাতে আসে
ওদের বজ্জাত বলে দাও খোকা আমি
চাদর হামাগুড়ি দিয়ে বসে আছি
জানি এইসব নকলের কারবার। চোলাই থেকে ফিরে
বিছানায় দেখে নিই
কতটা ধন এল— ছেঁড়াখোঁড়া ক্লান্ত সিঁড়ি থেকে
ঠিক কত দানা পড়ল
পাতা ফাতা ছিঁড়ে ফেলে, এখানে
আর কিচ্ছুটি রাখব না
খোকা, এখন শুধু
দশটা-পাঁচটার খেলা চলবে
এই দেখো, চামড়াটুকু কেটে কত মসৃণ
উলঙ্গ আমি
এসে থাকছি— কবিতা শালা এতদিন
জোচ্চুরি করে নামিয়েছি
আজ রাতে পাড়ার ফাংশানে
গিজার চলবে
কবিতা চলবে
আমি উলঙ্গ চাদরে দেখব
বিছানায় কত ধন, কঠিন পাণ্ডুলিপি
খোকা (দুর্ভাগা মম দেশ)
এসো, দু’ছিপি খুলে একে অন্যের
মন্ত্র জ্বালাই