অভিষেক নন্দী

অভিষেক নন্দী’র কবিতাগুচ্ছ

 

 

কালি দিয়ে আঁকা চাঁদ

এভাবে পিছু ডাকতে নেই
শরীরের অনেক ভেতর ঘুমিয়ে থাকা
সমস্ত রাখালের মাথা তোমার দিকে
হেলে পড়ছে— যেন লোকাল ট্রেনের আশ্চর্য মায়া!
চোখের টকটকে লাল দেখে,
নিজমাংসে আয়োজিত পিকনিক ফেলে এসে
অস্ত্রব্যবসায়ী, তার মূল্যবান সময় নষ্ট করবে গলির মোড়ে
যেখানে দাঁড়িয়ে অস্বীকার করেছি প্রেমকে, আর
ফেরার পথে আমারই শরীর থেকে ছায়া সরে এসে
সে এক আস্ত পুরুষকে ভালোবেসেছে ঠিক তোমার মতো!

 

ছুটে বেড়াচ্ছি এক ঘর থেকে অন্য ঘর
দরজার সামনে নিজেকে উলঙ্গ দেখি
এই বারান্দায় গোলগোল ভূতের বসবাস—
কেবল শুনি, মুকুটের চূড়া থেকে লাফ মেরে,
আমাদের স্বপ্নের বাড়ির পরিচারিকার
আত্মহত্যার টুকরোটাকরা কথা…

 

যুদ্ধ থামিয়ে রেখে, আপাতত বিরতিতে
ভেসে আসছে তোমার হিসেব-বহির্ভূত অভিমান
এই বসন্তকাল অত্যাচারিত
জড়িবুটি হারিয়েছে তার সমস্ত অধিকার
গম উৎপাদকের সুদীর্ঘ চাকায় কাটা পড়ে গেছে
পাউরুটি-কলা দিয়ে পুষে রাখা, আমাদের
ব্যক্তিগত জাদুকরের তৃতীয় চোখ
গাইয়ে পাখিদের মুখভার,
তোমার মতো তাদের ভোটাধিকার নেই বলে
উড়তে না-পারা পাখিরা আনন্দে,
যুদ্ধ শেষে আজ দুজনেই হেরে যাব বলে
মূর্ছা যাই, বারেবারে মূর্ছা যাই আমি—
আর আমার বাল্যকাল,
গণিত বই ব্যাগে নিতে ভুলে যাচ্ছে এখনও…

 

ভালোবাসতে বলছি না ফের
কেবল অনুরোধ, দূরে যেও না বেশি—

ভাস্কর চক্রবর্তী; লোকটার বয়স হয়েছে তো নাকি!
কতদূরই বা পরিশ্রম করে গিয়ে,
গভীর রাত্রে একই কবিতা লিখে আসবেন
দুজনার এই স্যাঁতসেঁতে হৃদয়ে

 

নিমকাঠও পচনশীল; বরফ আর লবণে কতদিন?
যুদ্ধের-ঘোষণা আয়না বিক্রি করতে উৎসাহ দেয়
ফের ছুটে চলে যাব অন্ধ রাখালের উর্বর হাসিতে
বাঘ মারতে, যেন এক গোলাপি নরম হাত
এগিয়ে দেবে বন্দুক

শরীর শোকাহত,
আর মাংসগুচ্ছ থেকে সমস্ত নাবিকদের ছুটি
কেন্নোর গতি নিয়ে ঢুকে আসছে টলমল জাহাজটি
বিয়ের অ্যালবামের চকচকে সিঁথিতে
রঙিন মাছের খিদে রেখে চষে ফেলে,
সুখী মানুষদের গোপন করে রাখা কান্না—
এতকিছুর পরও আহত করতে চাও আমায়?
জন্মদিনে, শান্তির দূত এসে মাথায় ফুঁ বুলিয়ে দেবে
আর স্মৃতিশক্তি ফিরে পেতেই মনে পড়ে যাবে
ফোন কানে দিয়ে, চুপ করে আছি কয়েক ঘণ্টা

 

আমার দুঃখরা ভাগ হয়ে গেছে দুটি দলে
আমি লড়াই করে বাঁচি, চাইছে একদল
আরেকদল হাতে দড়ি নিয়ে বলছে, ঝুলে পড়তে
জটাধারীর নিষিদ্ধ-প্রাণ খোঁড়া শেষ;
সূঁচের ছিদ্রতে মাথা গলিয়ে, সন্তানসম্ভবা স্বপ্ন
ছিন্নভিন্ন আলো জড়ো করে নিতেই
ব্যাকরণ ভেঙে মাঠে নেমেছেন এক উন্মাদ ডারউইন

সিঁড়ি কি এভাবেই বাড়িয়ে চলবে আমাদের ক্ষয়রোগ?
রুলটানা খাতার ওপর ঘূর্ণমান ওষ্ঠ টের পায়
ফুলেশ্বরীর পাশে, মরা কচ্ছপের মতো শান্ত এ শরীর—
স্নান সেরে, তাঁতকলে শুইয়ে, বুকে আঁকিয়ে নিচ্ছি
ইয়াব্বড় জুয়ার বোর্ড!

Facebook Comments

Related posts

One Thought to “অভিষেক নন্দী’র কবিতাগুচ্ছ”

  1. অত্রি ভট্টাচার্য্য

    যতটুকু স্পষ্টতা, ততোধিক ভাষাগত নগ্নতা, যা যে কোন ভাল লেখাকে মিয়ার বক্তব্যপ্রধান, একমুখীন করে তুলতে পারে। প্রকাশ প্রকাশ্যকে ছাড়ালে তবে কবিতায় উত্তরণের কাছাকাছি কিছু একটা ঘটে। উল্টোটা নয়।

Leave a Comment