আজকাল নিপাট ভ্রূযুক্ত মানুষদের ভন্ড বলে মনে হয় চঞ্চলার। কথা বলতে গিয়ে মানুষের ভ্রূ দেখতে থাকে সে। আসল কথা কানে বা মাথায় ঢোকে না। মানুষের ভ্রূ দেখে মানুষকে যাচাই করতে থাকে চঞ্চলা। আর দেখে কীভাবে সত্যি সত্যি নিপাট ভ্রূযুক্ত মানুষেরা ভন্ডামি করে চঞ্চলার সাথে। ভন্ডামির শিকার হতে হতে চঞ্চলা গাছে জল দেয়, সমস্ত বিধ্বংসী খবর উপেক্ষা করে শব্দছক সমাধান করে খবরের কাগজের পাতায়। চঞ্চলার স্বামী গলা তুলে বলে “এক কাপ চা হবে না কি,” চঞ্চলারা নিঃসন্তান। ঘরে আসবাবপত্রের বাহুল্য নেই তাই। কোথাও কোনো উৎপাতের চিহ্নমাত্র নেই। দেওয়ালে রংপেন্সিলের অত্যাচার নেই।…
Read MoreDay: July 16, 2019
মৎস্যপুরাণ
গলির মোড়েই একটা ফুলের দোকান। রোজ সকালে সিধুদা নৈহাটি থেকে আসে ডাউনের ট্রেনে চড়ে। মাথার বোঝাটা নামাতে বেশ কষ্ট হয়। ট্রেনে ওঠার সময় কেউ কেউ ঝাঁকাটা ধরে তুলে দেয়। আবার কখনও লোক পাওয়া যায় না৷ এত দোপাটি, গোলাপ আর রজনীগন্ধার ভার বয়ে চলে সিধুদা। শুধু বুধবার ওর ছুটি। ঐদিন গাঁদা, গোলাপেরও ছুটির দিন। পাড়ার গৃহস্থ বাড়ির নিত্যপুজোর ফুল সেদিন মোল্লার হাট থেকে কিনে আনতে হয়। “মোল্লার হাট” নামটা বহুকাল ধরেই চলে আসছে, তাতে মোল্লা হোক বা মালাকর কারোরই কিছু আসে যায় না। তিন্নির জ্যামিতি বক্সে একটা মাছের ছবি আঁকা। অনেকটা…
Read Moreসোহম দাস ভয় পায়নি
“আমাদের বাড়িতে মাঝেমধ্যেই একজন আসেন। তাকে আমি চিনি। কিন্তু তার পরিচয় আমি জানি না।” এই অবধি বলেই থেমে গেল সোহম। ইদানীং আরও একটু মোটা হয়েছে সে। নিয়মিত চুল-দাড়িও কাটে না। কেমন একটা অন্যমনস্ক হয়ে থাকে, কী যেন ভাবছে সারাদিন! লক্ষ্য করেছে শুভদীপ। সোহমের বন্ধু। দাদাও। হাতে ধরা রাখা সিগারেটের দিকে মাথাটা ঝুলিয়ে সোহমকে বসে থাকতে দেখে শুভদীপের একটু চিন্তা হলো। কিন্তু বিষয়টাকে হালকা করে নেওয়ার জন্য সোহমকে বললো, “আমার মনে হয় তোকে ভূতে ধরেছে। সেটা তুই বুঝতে পারছিস না। তাই তোকে মাঝেমাঝে জানান দিতে আসে, এই দ্যাখো আমি এসেছি।” বলেই…
Read Moreইউরেকা!
জাফরির ফাঁকে তখন দুপুরের আলোখেলা। জানলা দিয়ে সোজা তাকালে তখন আশেপাশের চুনকাম করা হাল্কা রঙের বাড়িগুলোয় পাকারঙ লাগতে শুরু করেছে। আহিরা সেদিকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু আহিরা সেদিকে দেখছিল না। তার সমস্ত ইন্দ্রিয় তখন ঘড়ির কাপড় কাচার শব্দে আস্তে আস্তে বুঁদ হয়ে আসছিল। ঘাড় ফিরিয়ে যে ঘড়িটার দিকে তাকাবে, সে শক্তিও প্রায় ছিল না। তবু সে একসময় ঘাড় থেকে প্রায় পাথর সরানোর মতো শক্তি প্রয়োগ করে ঘুরে তাকায় আস্তে করে ঘড়িটার দিকে। তার আস্ত শরীর তখন নিজেই নিজেকে ছেড়ে দিচ্ছে। কোনওমতে ও দেখল, মানে দেখতে পেল– ওর সমান্তরাল দুই হাত মিনিট…
Read Moreপৃথিবীর শেষ লেখা
গাছেরা এখন প্রতিশোধ নিচ্ছে। চমকে যাবেন না। আপনি যদি আমার লেখার খাতাটা হাতে পেয়ে থাকেন, আমার ভাষা যদি আপনার বোধগম্য হয়, তাহলে এই লেখা একটা মর্মান্তিক ইতিহাসের বিরাট দলিল হয়ে থাকবে। গুছিয়ে রাখবেন। আপনাদের নতুন পৃথিবীতে এই লেখাটার ধর্মগ্রন্থের মতো ঘরে ঘরে বিরাজ করা উচিৎ। যাতে আপনারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে পারেন। আমাদের ভুল যেন আপনাদের না হয়। আপনারা যদি গাছের বিকল্প বানিয়ে ফেলে থাকেন, তাহলেও এই দলিল আপনাদের বারংবার আত্মতুষ্টি থেকে বিরত রাখবে। আর গাছেদের যদি আপনারা আবার দমন করে ফেলতে সক্ষম হন, তাহলেও আমার লেখা অভিজ্ঞতা আপনাদের…
Read Moreমোহনা
কী সুন্দর নাম স্টেশনটার! কুন্তীঘাট! একটা নদী বয়ে যাচ্ছে গা ঘেঁষে। নদীতে ঘাট, ঘাটে বাঁধা নৌকো। এখানে নেমে পড়লে হয়। কিন্তু ইচ্ছে করলেই কি পৃথিবীর সব স্টেশনে নেমে পড়া যায়? সৃষ্টিধর যাচ্ছে এখন সমুদ্রগড়। পিসতুতো ভাইয়ের বাড়ি। সেখান থেকে নবদ্বীপ যাবে। ভাঙ্গা রাস দেখতে। ট্রেন চলতে শুরু করল। সৃষ্টিধরের হঠাৎ কী যে হল, একে ধাক্কা দিয়ে, ওকে গুঁতিয়ে সে নেমেই পড়ল কুন্তীঘাট। তার যদিও যাওয়ার কথা সমুদ্রগড়। সেখান থেকে নবদ্বীপ গিয়ে ভাঙ্গা রাস দেখবে, কিন্তু তার বয়সী একটা লোক ভাঙ্গা রাস দেখতে ভায়ের বাড়ি যাচ্ছে- এটা কেউ ভালভাবে নেবে না।…
Read More