বিকাশ গণ চৌধুরী

রঞ্জক

লেওঁ গোঁত্রঁ দামাস

অনুবাদ : বিকাশ গণ চৌধুরী

___________

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফরাসি উপনিবেশ গিয়্যেনার কায়েন-এ ১৯১২ সালে এক মুলোট্টা পরিবারে লেওঁ গোঁত্রঁ দামাস-এর জন্ম, যাঁর মধ্যেসংমিশ্রণ ঘটেছিল রেড ইন্ডিয়ান, ইয়ুরোপীয়এবং ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান রক্তের । দামাসের পড়াশোনা মার্তিনিকের এক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে;পরে তিনি প্যারিসে গিয়ে আইন পড়া শুরু করেন । এরপর পারিবারিক মাসোহারা বন্ধ হয়ে গেলে নানানরকমের কাজ করে তাঁকে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় । ছিলেন নেগ্রিচ্যুড কাব্য আন্দোলনের অন্যতম হোতা, তাঁর প্রথম বই ‘রঞ্জক’, যাকে কবিতায় লেখা নেগ্রিচ্যুডের ইস্তাহারও বলা হয়; এখানে রইল সেই বইয়ের পাঁচটি কবিতা।

ওরা আজ সন্ধ্যায় এসেছিল
লেওপোলদ্‌ সেদার সেঙ্ঘরের জন্য

ওরা আজ সন্ধ্যায় এসেছিল যখন
দ্রিমি
দ্রিমি
পাক
খায়
ছন্দ
থেকে
ছন্দে
মত্ততা
চোখের
মত্ততা হাতের
মত্ততা
মূর্তির পায়ের
তখন থেকেই
কত আমি আমি আমি
মরে গেছে
তখনই
আজ সন্ধ্যায় ওরা এসেছিল
দ্রিমি
দ্রিমি
পাক
খায়
ছন্দ
থেকে
ছন্দে
মত্ততা
চোখের
মত্ততা
হাতের
মত্ততা
মূর্তির পায়ের

তোষামোদ

তার উদাস পথে
আমার পাশ দিয়ে চলে যাওয়া মহিলার
হালকা সুগন্ধ
আমাকে ফিরিয়ে আনে আমাদের ভুলের সকালে

স্বপ্নের আভাসের পেছনে ছুটে চলা
বিস্মৃতিপ্রবণ নির্বাক জাদুমন্ত্রের
হলরেখা
অনুরণন তোলে
একটি দিনের বিষণ্ণতা যা রোখা যাব না
আরও একটু ক্লান্তি
আমাদের মৃত্যুর
ঘন্টাধ্বনি

ভূত তাড়ানো জীবদেহ
খোদাই করে
ক্ষইয়ে দেয়
আর খায়
প্রত্যেকটা স্বপ্নের আভাসের পাশে
দাঁড়িয়ে থাকা
পুনরুজ্জীবিত
স্মৃতি

আর আমার উদ্দীপনার বিছানায়
তোমার মতোই আর্দ্র
তার উদাস পথে
আমার পাশ দিয়ে চলে যাওয়া
হালকা সুগন্ধের মহিলা
আমাকে উত্তর দেয়
পরিতৃপ্ত চেতনার এক প্রচন্ড হট্টগোলের মধ্যে

জি.এম.-এর স্মরণে

যেখান থেকে আমাদের কাছে বিক্ষিপ্তভাবে অবাধ্য
সব সৌরভ আসে
সেইসব পুরনো অতৃপ্তির উপর ঠেস দিয়ে আছি
তখন ভাঁটা চলছিল
কোন গৌরব ছাড়াই চলছিল সারসদের উড়ান
আর অনেক দূরে বাতিঘরের কন্ঠস্বর
ম্যানগ্রোভ অরণ্যের
গোধূলির আগুনের থেকেও
জোরালো

অনেক দিন ধরে
অনেক দিন ধরে তোমার হাত চিৎকার করে ভেঙে
ফেলবে
সময়ের সব হিসেব
সেই সব সময় যার শেষে
দুটো নিংড়ানো লেবু
ছিলাম আমরা

অত্যুক্তির বিপরীতে
বালির ক্রীতদাসসুলভতার
উপসাগরের বাদামগাছের
মশাদের
সামুদ্রিক ব্যাঙেদের
জোনাকীদের যারা বুঝতে পারে না
বিক্ষোভের সেই প্রদর্শন
যেখানে রয়েছে আমার বহুবছরের উদ্যম
সমস্ত আইফেল টাওয়ারের
খাড়া গভীরতা

আবেশ

একটা রক্তের স্বাদ আমার কাছে আসে
একটা রক্তের স্বাদ আমার ভিতর বেড়ে ওঠে
আমার নাক জ্বালা করে
আমার গলা
আমার চোখ

একটা রক্তের স্বাদ আমার কাছে আসে
একটা রক্তের স্বাদ আমাকে পূর্ণ করে
আমার নাক
আমার গলা
আমার চোখ

একটা রক্তের স্বাদ আমার কাছে আসে
ঝাঁঝালোভাবে খাড়া
ধুনুচির
পৌত্তলিক আবেশের
মতো

কয়েকটা রাত
আলহো কার্পেন্তিয়েরের জন্য

কয়েকটা নামহীন রাত
কয়েকটা জ্যোৎস্নাহীন রাত
যখন চ্যাটচ্যাটে দমবন্ধতার
শেষ বিন্দুতে পৌঁছয়
রক্তের উগ্র গন্ধ
প্রত্যেকটা বোবা ট্রামপেট থেকে
ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে
আমাকে পেড়ে ফেলে

কয়েকটা নামহীন রাত
কয়েকটা জ্যোৎস্নাহীন রাত
আমার ভিতরে থাকা বেদনা
আমায় ধর্ষণ করে
আমার ভিতরে থাকা বেদনা
আমার শ্বাসরোধ করে

কয়েকটা নামহীন রাত
কয়েকটা জ্যোৎস্নাহীন রাত
যখন বিবমিষার মতো অন্ধকারাচ্ছন্ন আমি
পালাবার প্রয়োজনে
সংশয়হীন
থাকতে চাই

নামহীন
জ্যোৎস্নাহীন
জ্যোৎস্নাহীন
নামহীন
জ্যোৎস্নাহীন রাত
নামহীন গোত্রহীন
যখন বিতৃষ্ণা আমার ভিতর নোঙর ফেলে
এক সুন্দর মালয়ী খঞ্জরের মতো গভীরে

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment