বিধান সাহা

বিধান সাহার কবিতা

অব্যক্ত সন্ধির দিকে

০১.
বেদনার ভাষা দেখো প্রিয়মুখে কীভাবে মিলায়!
এই যে কামনালাপ পথে পথে নিত্য বরিষণ
কর্ষণ বিনে কি বলো পাওয়া যাবে বিকল্প লবণ?
শৈশবের পাতাঝরা দিন প্রতিদিন বেদনায়
হাওয়ায় মিলায় আর কত কথা ব্যথাতুর মনে
ক্ষণে ক্ষণে জেগে ওঠে সদ্য বিধবা নারীর মতো!
তবু নয় বেঁচে থাকা মানে মেনে নেয়া সব, স-ব—
যেভাবে আহত বাঘ আরো বেশি হিংস্র হয়ে ওঠে
কামনার ছায়াপথে তার থেকে থেকে জেগে ওঠে
দূরতম নক্ষত্রের বীজ যাতনার অনুযোগে—
পত্রযোগে বিলোড়িত এই বার্তা তাহাদের দেশে
হঠাৎ পৌঁছে গেলে মেঘে মেঘে নেমে আসে রামধনু।
কে বলে রে, পরাভবে জেগে ওঠে মৌনতার চর?
আজ তাই মাঝরাতে ছেড়ে দেব জালালি কৈতর।

 

০২.
যে ভাবে নীরব আছ – পাথরের মতো—বহুদিন—
উদাসীন একইভাবে—বদরাগে— রাত্রি জাগরণে—
স্রেফ হয়ে গেছি একা। জানি— পুরনো মলিন বড়!
আপন ঠিকানা ভুলে—ফুলে ফুলে নতুন আবাস
গড়ে তুমি নিয়েছ সঠিক। বেঠিক পথের পাড়ে—
এখনো যে আড়ে-ঠারে চাই। আর সেই পথ জুড়ে
শোকের নীলচে রঙে আমাকে আঁকাই… সুখী হও।

পুজো শেষ হয়ে গেছে কুয়াশা পড়ছে রোজ মাঠে
তুমি কি এমন দিনে চিনচিনে ব্যথা পাও টের?
অথবা, আদা-চা খেতে খেতে সিনে-ম্যাগাজিনে রাখো
চোখ? পুলক পুলক কোন আভা ভেসে ওঠে চোখে?

সহস্র স্মৃতির পথে মনে মনে হেঁটে যাই রোজ
তোমারও কি পথ হলো? এখনও কি আঁকো ফুল পাখি?

যে গেছে ভুলের দেশে—যাক— আমি প্রাণ খুলে রাখি!

 

০৩.
না-বুঝে স্রোতের গতি জলে তুমি দিও না সাঁতার

এইদিকে ময়ূরাক্ষী, ক্লান্ত সাপ, ব্যথার সোপান!
জানো না তো, কেন সেই শ্যামচুড়ি কখনও কিনি নি
আজও কেন যৌনধ্যান সমাপনে ডরাই অযথা?
মলিন বায়ুস্তম্ভের নিচে আছে কথার গিমিক—
ধুলিসম্ভার, অযোনিগান… শোনো, ব্রহ্মবাগানের
দিকে ওত পেতে আছে প্রকাণ্ড বাকরাক্ষস।
শান্ত হও, আরেকটু শান্ত হও, ওগো তীর্থবক—
ভেবো না, সমুখে শান্ত জলাধার পাবে তুমি
জাদুর পাথর পাবে, আর পাবে আয়নামহল
চিন্তাহীন ছুটে চলো, নগরান্ধের নিকটে যাও
তাকে শোনাও, ময়নাসুন্দরীর তাবৎ আখ্যান
শাল বাগানের কথা, সেই সেই সব কলরব!

স্থির হও, স্থির হও, হও আরো রূপালি নীরব!

 

নিয়তি

অভেদ আগুন যেন, যেন উড়ন্ত মিথুন শূন্যে
উড়ছে উড়ছে হাওয়া আর জলের ভেতর দিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে—

ক্রমাগত উথাল-পাথাল, ধুম অন্ধকার
শাখায় রচিত কুয়াশার ফুল যেন—

হারোনো পথের বাঁকে, শিঙায় ফুঁ দিয়ে, নিমিষে সে
আত্মমগ্ন হলো, হলো ধ্যানী—

স্মৃতিময় আরশিতে, কখন যে, দেখেছে সে নিজের নিয়তি!

 

গান শুরু হোক

ডাইনি, তোমার দেহের শিকল আজকে বাজাও—
জন্ম থেকেই দেখছো তো এই অবাক করা পুকুর ঘাটে মাছের হিড়িক,
জল-জোছনা। সামান্য এই সন্ধ্যাবেলা
ডাকছে কে ও? ওই সুদূরে? ধূম্রে-আঁকা ইচ্ছামতী?
সেও কি বলো উড়তে পারে?
তোমার মতোন ইচ্ছেমাফিক বুকের ভেতর আসতে পারে?
আবার ফিরে যেতে পারে?

রাত হলো ঢের। আজকে তোমার পদ্মপুকুর পূর্ণ হবে?

একটা আলোর মখমলে আজ হাত রেখেছি—
একটা নদীর জল ধরে আজ মাছ ছেড়েছি—

গোল-টমেটো— কল্পিত তা; ধরতে গিয়ে ট্রেন ধরেছি।
অসুর এবং সুরের তালে ছাতার উপর হাত রেখেছি
মেহগনির বুকের উপর শুকিয়ে যাওয়া লেখার মতোন।
পাতা এবং পাত্রী যেমন, তাও হলো না; রাত্রি এলো।

উড়তে উড়তে আবার যখন আসবে ফিরে
আবার এনো লালরঙা ফুল
কিংবা ভীষণ মেঘ করা সেই বৃষ্টি এনো দেহের ভেতর

এই যে দেখো, আমি আবার সাপ ধরেছি! সাপ ধরেছি!
ঘুমের ভেতর।

গান শুরু হোক—
ডাইনি, তোমার দেহের শিকল আবার বাজাও।

 

নৈশ শোক

একটি টিস্যুপেপার অবহেলায় পড়ে আছে
অ্যাস্ট্রেতে একাধিক আধপোড়া সিগারেট, ছাইসহ ধোঁয়া উড়ছে।
কাঙ্ক্ষিত একটা স্টিল ইমেজ মনিটরে ভাসছে।

এখন মধ্যরাত। অনুশূন্য। সুনসান।

ফিরে দেখুক—
আমি কোন সুখ নিয়ে আছি।

 

সোনাই-মাধব

এইদিকে বৃষ্টি হচ্ছে, রেহনুমা।
ইশারায় আজ আমিও কত কথা যে কই!
ধরো, শিস দিতে দিতে হারিয়ে যাওয়া মানুষ
গানের অনুরাগে ফিরে এলো।

পাশাপাশি শুয়ে তাকে বলো
বৃষ্টি হলে তুমিও রবীন্দ্রগীত!

তোমার সংসার কেমন আছে?
গায়ত্রী-গদাধর?

দুপুরে চৈতালী-রোদ পড়েছিলো ভীষণ!
আর আমি একটি আমের পাতায়
ভুল করে নিজের নাম লিখেছিলাম— সোনাই-মাধব!

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment