দেবব্রত কর বিশ্বাস

সোহম দাস ভয় পায়নি

“আমাদের বাড়িতে মাঝেমধ্যেই একজন আসেন। তাকে আমি চিনি। কিন্তু তার পরিচয় আমি জানি না।” এই অবধি বলেই থেমে গেল সোহম। ইদানীং আরও একটু মোটা হয়েছে সে। নিয়মিত চুল-দাড়িও কাটে না। কেমন একটা অন্যমনস্ক হয়ে থাকে, কী যেন ভাবছে সারাদিন! লক্ষ্য করেছে শুভদীপ। সোহমের বন্ধু। দাদাও। হাতে ধরা রাখা সিগারেটের দিকে মাথাটা ঝুলিয়ে সোহমকে বসে থাকতে দেখে শুভদীপের একটু চিন্তা হলো। কিন্তু বিষয়টাকে হালকা করে নেওয়ার জন্য সোহমকে বললো, “আমার মনে হয় তোকে ভূতে ধরেছে। সেটা তুই বুঝতে পারছিস না। তাই তোকে মাঝেমাঝে জানান দিতে আসে, এই দ্যাখো আমি এসেছি।” বলেই হাতের অঙ্গভঙ্গিতে অভিনয় করে দেখালো শুভদীপ। তাতে লাভ হলো না বিশেষ। সোহমের মুখে কোনও আলো জ্বলল না। আর আলো না জ্বললে পরিবেশ হাসিখুশি হয় না। একটু হতাশই হলো শুভদীপ। চুপ করে গেল। সিগারেটের শেষ টান মেরে সোহম মাথা তুলে বলল, “ঠিকই বলেছ শুভদা। সেটা আমিও গেজ করেছি। ভূত। তাইই হবে।” ওর কথায় এমন কিছু একটা ছিল, তাই ঘাঁটাতে সাহস পেল না শুভদীপ। ঘন জিনিস বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করতে নেই, নিজেকে ছাড়াতে পারা কঠিন হয়। তাই শুভদীপ সোহমের পিঠে চাপড় মেরে বলল, “চল, ওঠা যাক। ফিরতে হবে এবার।” সোহম হ্যাঁ-মাথা নাড়ল। লেক মলের সামনের ফুটপাথের বসার জায়গা দুজনে উঠে পড়ল। পাশের রাসবিহারী অ্যাভিনিউ তখন সন্ধের আলো জ্বালিয়েছে সবে। লোকজনের ভিড় বাড়ছে। ফুলের দোকান, চপের দোকান, সোনার দোকান সবাই মিলে ঘুরতে বেড়ানো প্রেমিক-প্রেমিকাদের হাঁ করে দেখছে।

শুভদীপের বাড়ি নিউ আলিপুরে। সোহমের চেতলায়। রাসবিহারী মোড় থেকে অটোতে উঠে পড়ল শুভদীপ। সোহম হাঁটতে হাঁটতে চলল চেতলার দিকে। বাঁ-হাতে কেওড়াতলা মহাশ্মশানকে রেখে চেতলা ব্রিজে উঠে পড়ল সোহম। সন্ধেবেলা এই ব্রিজের উপর দিয়ে হাঁটতে খুব ভালো লাগে ওর। এখানেই শেষবার দেখা গেছিল কাকাকে। তা প্রায় পনেরো বছর হয়ে গেল। রাত দশটা নাগাদ সাইকেল চালিয়ে এই ব্রিজ পেরোচ্ছিল। পাড়ারই একজন দেখেছিল। ব্যাস, তার পর থেকেই ভ্যানিশ! সোহমরা চেতলা অঞ্চলের অনেক পুরনো পরিবার। গোবিন্দ আঢ্যি রোড থেকে একটা গলিতে ঢুকে অনেক একটা পুরনো বাড়ি। প্রায় একশো বছরের। সোহমদের পরিবার এই এলাকার খুবই পরিচিত এবং প্রভাবশালী পরিবার। তাই কাকা যেদিন নিরুদ্দেশ হলো, সেদিন গোটা পাড়া সারারাত ঘুমোয়নি। সে এক হইহই কাণ্ড। তার পরের দিন সারাদিন খোঁজ-খোঁজ। রাতে অর্ধেক ঘুম। তার পরের দিন থেকে ওই যা হয়, সবাই “কী যে হলো! কোথায় যে গেল জলজ্যান্ত ছেলেটা!” বলে যে যার কাজে চলে গেছে, ঘুমিয়েছে। কাকা আর ফেরেনি। সোহম এখনও মনে করে কাকাকে। তাই যখন প্রথমবার ওই আশ্চর্য লোকটা সোহমের ঘরের জানলার পাশের রোয়াকে বসে ছিল, সে এক ঝটকায় ভেবেছিল কাকা এসেছে। কাছে গিয়ে ভুল ভেঙেছিল। একটি লোক। পরনে সাদা ফুলহাতা জামা এবং কালো প্যান্ট। অন্য কোনও রঙেরও হতে পারে, কিন্তু রাত বলে কালো বলেই মনে হয়েছিল সোহমের। জামাটা ইন করে পরা নয়, প্যান্টের উপর ছাড়া। বলা নেই কওয়া নেই, বন্ধ গেট পেরিয়ে ঢুকে সটান বসে রয়েছে রোয়াকে। এমনকি ডাকাডাকি অবধি করেনি। রাগ ধরে গেছিল সোহমের। কাছে গিয়ে কড়া গলায় বলেছিল, “কে আপনি? এখানে বসে কী করছেন?” কোনও উত্তর দেয়নি লোকটা। সোহমের দিকে কিছুক্ষণ স্থির চোখে তাকিয়েছিল। তারপর উঠে চলে গেছিল। এমন একটা ঘটনাকে ভূতের ঘটনা বলেই মনে করা স্বাভাবিক। ভয় লাগার কথা সোহমের। চিৎকার করে ওঠাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু এসব কিছুই হলো না। খুব স্বাভাবিক ভাবে, খানিকটা উৎসুক ভঙ্গিতেই লোকটার চলে যাওয়া দেখল সোহম। উচ্চতা খানিকটা তার মতোই হবে। চেহারা পেটানো। বয়স বেশ খানিকটা বেশি বলেই মনে হয়। শরীরটা সামনের দিকে ঝুঁকে ছিল। ধীরে ধীরে, রাস্তা  দিয়ে হেঁটে হেঁটে সোহমের চোখের আড়ালে চলে গেছিল। সোহমের ইচ্ছে করেনি এগিয়ে গিয়ে দেখতে, লোকটি কোথায় গেলেন। মাঝেমধ্যে মানুষের শরীর কেমন হঠাৎ ভারী হয়ে যায়, মনও অবশ হয়ে যায়। নিজের সচেতনতাকে অবাক করে শরীর আর মন একজায়গায় বসে থাকে। এগিয়ে যেতে তাদের ইচ্ছেই করে না। হতভম্ব চেতনার আড়ালে চাপা পড়ে সচেতনতা। ঘরে গিয়ে চুপিচুপি শুয়ে পড়েছিল সোহম। এই যে একটা লোক এরকম ভাবে তাদের বাড়িতে ঢুকে পড়েছিলেন, সেই বিষয়ে কাউকে কিছু বলেনি সোহম। বাবাকে বললে হেসে উড়িয়ে দেবে। মা-কে বললে হয়তো চিন্তায় পড়ে যাবে। আর ঠাকুমার কথা বাদই দেওয়া ভালো। সেই কাকা নিরুদ্দেশ হওয়ার পর থেকে সেই যে মাথাটা বিগড়েছে, আর ঠিক হয়নি। সারাদিন নিজের ঘরে বসে থাকে আর বিড়বিড় করে। সোহমের খুব জানতে ইচ্ছে করে, কাকা চলে যাওয়ার পরে এত বছর ধরে এই যে সারাদিন বিড়বিড় করে যাওয়া, আসলে কী বলতে চায় ঠাকুমা? একবার গিয়ে জিজ্ঞেসও করেছিল সোহম। ঠাকুমা কোনও উত্তর দেয়নি। তার দিকে তাকিয়ে সামান্য হেসে বলেছিল, “সময় আসুক, ঠিক বুঝবি।” বলে আবার বিড়বিড় করতে শুরু করেছিল সোহম। বাবা, মা, সোহম, কাকা, কাকিমা, ঠাকুমা এই নিয়ে বেশ জমজমাট পরিবার ছিল তাদের। ছোটবেলায় দেখেছে সে। এক হাঁড়ি। এক বাড়ি। সে এক মজার সময় ছিল ছোটবেলায়! কাকার সঙ্গে সোহমের দারুণ জমত। কাকা সেই বিখ্যাত সাইকেলে তাকে চাপিয়ে বেড়াতে নিয়ে যেত কেওড়াতলা মহাশ্মশানের দিকে। শ্মশানের প্রতি একটা অদ্ভুত টান ছিল কাকার। তারপর কোথায় যে হারিয়ে গেল কাকা? মাঝেমধ্যে কাকার সঙ্গে সেই সাইকেলটাকেও খুব মিস করে সোহম। ভাবে, কাকার সঙ্গে সঙ্গে সেই সাইকেলটাও তো হারিয়ে গেল। নিরুদ্দেশ হয়ে গেল। কাকা চলে যাওয়ার পর কাকিমা একদিন সুইসাইড করল। দোতলায় নিজেদের ঘরে। তারপর থেকে সেই ঘরটায় কেউ থাকে না। কোনও অশুভ কিছু ঘটেনি তাদের বাড়িতে। কিন্তু ওই ঘরে আর কেউ থাকে না। কেউই থাকেনি আর।

দু’দিন পরে লোকটা আবার এলো। প্রায় রাত দুটো নাগাদ। সোহম একটা লেখা লিখছিল। সেটা শেষ করে বাথরুমে যাবে, এমন সময় জানলা দিয়ে দেখতে পায় রোয়াকে এক ছায়ামানুষ বসে আছে। দেখেই বুকটা ধড়াস করে উঠল সোহমের। সেটা সামলে নিয়ে দরজা খুলে এগিয়ে গেল। সটান লোকটার পাশে গিয়ে বসল। লোকটিও তার দিকে ফিরে তাকাল। সোহম দেখল, স্ট্রিটল্যাম্প থেকে ছুটে আসা আলোয় লোকটার গাল চকচক করছে। খুব তীক্ষ্ণ মুখ। সোহমের যেন ধাক্কা লাগল। চেনা চেনা লাগল কি? অসীম কৌতূহলে সোহম স্মার্টলি লোকটির দিকে হাতজোড় করে বলল, “নমস্কার, আমি সোহম দাস। আপনার পরিচয় জানতে পারি?” লোকটি হাসলেন। সোহমের কথার উত্তর না দিয়ে বললেন, “তোমার ঠাকুরদাদাকে আমি চিনতাম। সুকুমার দাস। হাইকোর্টের উকিল ছিলেন। বড্ড ভালোমানুষ ছিলেন। তোমাকে একদম তোমার ঠাকুরদাদার মতো দেখতে।” সোহম বেশ অবাক হলো। হাসল। বলল, “আচ্ছা? তা বেশ তো। আপনি কি ওনার বন্ধু ছিলেন? আপনার নাম কী?” লোকটি আবার উত্তর দিলেন না। উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “তোমার ঠাকুরদাদা বড্ড ভালোমানুষ ছিলেন। কিন্তু তোমরা ওনার মতো বলিষ্ঠ মনের মানুষ নও।” বলে তিনি হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার দিকে মিলিয়ে গেলেন। সোহম এবার ভয় পেল। কোনোরকমে উঠে দাঁড়িয়ে ঘরে চলে গেল। গলাটা কেমন কাঠ হয়ে শুকিয়ে গেল সোহমের। কিন্তু ফ্রিজ থেকে জল নিয়ে এসে খাওয়ারও সাহস পেল না সে। চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়ল। রাতে সেভাবে গভীর ঘুমও এলো না তার। পরের দিন আবার এসেছিলেন মানুষটা। সোহম আর কাছে যাওয়ার সাহস পায়নি। মাঝেমধ্যে উঁকি মেরে দেখেছিল সারারাত রোয়াকেই বসেছিল লোকটা। দেখতে দেখতেই সে ঘুমিয়ে পড়েছিল। সকাল হতেই তাঁকে আর দেখতে পায়নি সোহম। পরপর কিছুদিন এরকম ঘটল। এরপর একদিন সোহম বাড়িতে ডাকল শুভদীপকে। শুভদীপ সব শুনলো। বলল, “আমার একটা কথা শুনবি সোহম? একবার ডাক্তারের কাছে যাবি? আমার জানাশোনা আছে। খুব ফ্রেন্ডলি।” সোহম হেসে উড়িয়ে দিল। বলল, “নিজের চোখকে কীভাবে মিথ্যে বলে ভাবব শুভদা?”

  • নিজের চোখের ভুল হতে পারে না? চল, ধরে নিলাম চোখ ভুল দ্যাখেনি। কিন্তু এই দুই চোখ ছাড়াও হয়তো মানুষের অন্য কোনও চোখ আছে। সেগুলো আমরা জানি না হয়তো।
  • হয়তোর ওপর বেস করে জীবন চলে না গো শুভদা।
  • হুমম। তাহলে কী করবি ভাবছিস? পুজো-টুজো?
  • ধুর ধুর। তুমি তো জানোই ওসবে আমার বিশ্বাস নেই। আমি একটা অন্য কথা ভাবছি।
  • কী ভাবছিস?
  • গবেষণা করতে জার্মানি চলে যাবো কিনা? ফিজিক্সের জন্য এই দেশে এখন আর কী অবশিষ্ট আছে বলো? খালি ধর্ম-ধর্ম খালি মারামারি, খুনখারাপি ছাড়া? আমি জার্মানির ইউনিভার্সিটি অ্যাপ্লাই করব আবার। এবার যদি চান্স পেয়ে যাই তো চলে যাবো।
  • আর কাকু-কাকিমা-ঠাকুমা, এরা? আর সোনালীই বা কী করবে?
  • কী আর, বাবা মা ঠাকুমা বাড়িতে থাকবে। বাড়িটা তো আর চলে যাচ্ছে না। আর সোনালী? ও তো ইন্ডিইয়া ছেড়ে কোথাও যেতে চায় না। দেখি কথা বলে।
  • তুই তাহলে পালাচ্ছিস সোহম?
  • না গো। পালাচ্ছি না। ঠাকুরদা একবার বলেছিল, আমার কপালে নাকি বিদেশযাত্রা আছে। আর ওই লোকটা বলল আমাকে ঠাকুরদার মতো দেখতে। তাই এসব ভাবছি আর কী!
  • সে তুই যাই বল সোহম, তুই বেশ ভয় পেয়েছিস।

 

২।
ভয় লাগছিল সোহমের। তার বাবা, মা সবার। চোটপাট দেখানো হুমকির চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর হলো ঠাণ্ডা গলায় দেওয়া নির্দেশ। চায়ের কাপে শেষ চুমুক মেরে ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে বিবেক শিন্ডে ভাঙা ভাঙা গলায় সোহমের বাবাকে বললেন, “তাহলে ওই কোথাই রইল দাদা। আপনাদের এত বড় জমি আছে, বাড়ি ভি পুরোনো হো চুকা। হামরা ভালো ফ্ল্যাট বানাবো। আপনারাও মালকড়ি ভালোই পাবেন। তাহলে ওই কোথাই রইল… শাহনওয়াজ ভাইয়াকে ইনফর্ম করে দেবো আপনারা রাজি আছেন।” এই কথা শুনে ঘরের সবাই চুপ করে রইল। সোহম দাঁড়িয়ে দরজায় ঠেস দিয়ে। মা পাশে। বাবা বসে আছে বিবেক শিন্ডের সামনের চেয়ারে। তার পাশের বসে আছে বিবেকের চ্যালা। বিকেল এই অঞ্চলের পার্টির বড় নেতা শাহনওয়াজ খানের ডান হাত। শাহনওয়াজ ছিলেন সোহমের কাকার বন্ধু। কাকা নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার সময় তাকে খোঁজার ব্যাপারে যে সবচেয়ে সক্রিয় ছিল সে-ই। তখন তাঁর জামাকাপড়ের বিজনেস ছিল। তারপর প্রোমোটার হয়ে যান। এখন তিনি এই অঞ্চলের জনপ্রিয় নেতা। গোটা এলাকায় শাহনওয়াজের কথাই শেষ কথা। সবাই তাঁকে বিশ্বাস করে। আড়ালে আড়ালে ভয়ও করে। তবে সেই ভয় মূলত বিবেক শিন্ডের কারণে। বিবেক একজন কুখ্যাত ক্রিমিনাল, যার বিরুদ্ধে একটাও ক্রিমিনাল কেস নেই। এমন মানুষকে সাধারণ মানুষ ভয় পাবেন না তো কাকে পাবেন? মানুষ তো বটেই, বিবেকের মুখের ওপর কথা বলতে রাস্তাঘাট গাছপালা বাড়িঘরও ভয় পায়। সোহমের বাবা মা তো বটেই, ঘরের আসবাবপত্রগুলো কেমন যেন ভয়ে কুঁকড়ে ছিল। সেই ভয় বেশ এনজয় করছিলেন বিবেক। হাসিমুখে চেয়ার ছেড়ে উঠবেন, এমন সময় সোহমের বাবা বলে উঠলেন, “আসলে এই বাড়িটা বিক্রি করে দিতে আমাদের মন চায় না। কোটি টাকা পেলেও এই বাড়ি আমরা ছাড়ব না।” এই কথা শুনে চোয়াল শক্ত হয়ে গেল বিবেকের। তারপর সিল্কের পাঞ্জাবীর পকেট থেকে সাদা রুমাল বের করে মুখ মুছে ঠাণ্ডা গলায় বললেন, “মন চায় না? সে তো আমি বুঝেছি, শাহনওয়াজ ভাইয়া কি বুঝবেন? ভাইয়া এখানে টিউশন সেন্টার বানাবেন। দেশ বানাতে হোবে তো। তরক্কির কথা ভাববেন না? আপনার ল্যাড়কা বহুত ভালো ছেলে আছে। এডুকেটেড। ওর একটা ফিউচার আছে। আপনি কোতো মাল পাবেন বলুন তো? ঠিক হ্যায়, ভাইয়া কী বলে দেখনা পড়েনা।” বলে সবাইকে নমস্কার জানিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন বিবেক। এই দিনের পর থেকেই সব কেমন বদলে গেল। সোহমদের বাড়ির সবাই কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেল। অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে লাগল। রাতবিরেতে বাড়িতে ঢিল পড়তে লাগল। একদিন ইলেকট্রিক চলে গেল। কাস্টমার কেয়ার নাম্বার ফোন করেও সুরাহা হলো না। কেউ এলো না। এইভাবে দু’দিন কেটে যাওয়ার পর ইলেকট্রিক এলো। একদিন বাড়ির গেটের মুখে কে যেন পায়খানা করে রেখে গেল। সোহমের বাবা আর মা বালতি হাতে তা ধুতে লাগল। সোহম চুপচাপ ছিল। একদিন পাড়ার মোড়ে বিবেক শিন্ডে হাসিমুখে তার খোঁজখবর নিল। কোনও দরকার থাকলে যেন তাঁদের ডাকে, সেই কথাও জানিয়ে রাখলো সোহমকে। সেই দিনের পর থেকে বিবেক শিন্ডে আর একবারও আসেনি সোহমদের বাড়িতে। তারা বাড়ি বিক্রি করতে চায় না শুনে শাহনওয়াজও আসেনি।

হুইস্কির লাস্ট পেগটা শেষ করে শুভদীপ বলল, “তুই বরং জার্মানিতেই চলে যাওয়ার চেষ্টা কর ভাই। কাকুকেও বোঝা, ওই বাড়ি যেন ফ্ল্যাট বানাতে দিতে উনি রাজি হয়ে যান। কী লাভ বল? কী আছে এই শহরে? ধীরে ধীরে একটা পোড়ো শহর হয়ে যাচ্ছে কলকাতা। পালা ভাই, এখান থেকে পালা।” সোহম হাসিমুখে বলল, “তুমি বলেছিলে আমি ভয় পাচ্ছি। এখন আমি সত্যি সত্যি ভয় পাচ্ছি গো। পুরো ব্যাপারটার গন্ধটা আমার ভালো ভালো লাগছে না। ওই লোকটা ওদের পাঠানো কেউ নয় তো?” শুভদীপ বলল, “হতেও পারে। যাক গে, বাদ দে। অনেক রাত হলো। এবার ওঠা যাক। আজ রাতেই লেখাটা নামিয়ে দিস ভাই। তোকে নিয়ে আমার গর্ব হয় রে, ফিউচার সায়েন্টিস্ট এবং সাহিত্যিক। ভাবা যায়!” এরপর দুজনেই একসঙ্গে হেসে উঠল।

বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকতেই সোহম দেখল রোয়াকে আবার সেই লোকটা বসে আছে। রাত তখন প্রায় সাড়ে বারোটা। সোহম ধীরে ধীরে লোকটার কাছে এগিয়ে গেল। পাশে বসল। মদের নেশায় সোহম মাথা তুলতেই পারছিল না। কেমন একটা ঝিমঝিম লাগছিল। লোকটি সোহমের ডান হাতের পাঞ্জাটা নিজের দু’হাতে জড়িয়ে ধরল। অসম্ভব ঠাণ্ডা লোকটির হাত। যেন বরফে হাত দিয়েছে, এমন অনুভূতি হচ্ছিল সোহমের। সোহম আবার ভয় পেল। লোকটি যেন সেটা বুঝতে পারলে হাত ছেড়ে দিলেন। তারপর সোহমকে বললেন, “ভয় পেয়ো না। তুমি আমার নাম পরিচয় জানতে চেয়েছিলে, তাই না? আমার নাম শেখ হবিবুর ইসলাম। আমি তোমার ঠাকরদার পরিচিত ছিলাম। হাইকোর্টে আমরা একসঙ্গে প্র্যাকটিস করতাম। সেসব সেই ইংরেজ আমলের কথা। আমার কথা বাদ দাও। তোমার লেখাটা কদ্দুর? ছেচল্লিশের দাঙ্গা আর দেশভাগ নিয়ে যে বড় গদ্যটা লিখছিলে, সেটা শেষ হলো?” সোহম অবাক হলো। বলল, “মানে? আপনি কীকরে জানলেন?” লোকটি হাসলেন। বললেন, “আমি সব জানি গো।” সোহম বোকার মতো হাঁ করে তাকিয়ে থাকলো লোকটির দিকে। তিনি তখন বলতে শুরু করলেন, “তাহলে শোনো, তোমাকে কিছু কথা বলি। ছেচল্লিশের দাঙ্গা তো বিস্ফোরণ ছিল। কিন্তু সলতে পাকানোর কাজ চলছিল অনেকদিন আগে থেকেই। সমস্যাটা বহুযুগ আগের। ভারতবর্ষে জাতপাতের সমস্যা তো একদিনের নয়। বহুদিনের। দলিত, শূদ্র শ্রেণির মানুষেরা দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত, লাঞ্ছিত। তাঁদের ন্যায্য প্রাপ্য এবং অধিকার দিতে চাইত না বর্ণহিন্দুসমাজ। দূরে সরিয়ে রাখত। তাঁদের ছায়ায় স্পর্শ লাগলেও স্নান করতে যেত একশ্রেণির ব্রাহ্মণ। এই অবহেলা, লাঞ্ছনার কারণে সেই দলিত, শূদ্র সমাজে ক্ষোভ ছিল। সেই ক্ষোভকেই কাজে লাগালেন ইসলাম ধর্মপ্রচারকরা। তাঁরা এটা বোঝাতে সক্ষম হলেন, ইসলামে কোনও জাতপাত নেই। বর্ণবিদ্বেষ নেই। প্রচুর সংখ্যায় ধর্মান্তরিত হতে লাগলো দলিত হিন্দু সম্প্রদায়। কিন্তু ওটুকুই। জাতপাতের ঘৃণার পরিবেশ থেকে তাঁরা মুক্ত হলেন বটে, তবে গিয়ে পড়লেন আরেকপ্রকার অন্ধ-বিশ্বাসে। শুধু তাই নয়, ধর্ম বদলে যাওয়া ছাড়া আর কোনও সামাজিক পরিবর্তন তাঁদের জীবনে ঘটল না। যে তিমিরে ছিলেন সেই তিমিরেই থাকলেন। এরপর এলো ইংরেজরা। তাঁরা নিজেদের স্বার্থেই আধুনিক শিক্ষার গোড়াপত্তন করল। হিন্দুসমাজের একটা বড় অংশ সেই শিক্ষাগ্রহণ করতে এগিয়ে গেলেন। মুসলিম সমাজের বিরাট অংশ খুব গোঁড়া মানসিকতার সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করলেন। তাঁরা বিশ্বাস রাখলেন ধর্মীয় শিক্ষায়। ফলে বিরাট একটা বৈষম্য তৈরি হলো। আধুনিক শিক্ষায় যারা শিক্ষিত হলেন সেই বড় সংখ্যক হিন্দুদের হাতে জমিজমা তো ছিলোই, আধুনিক শিক্ষার মাধ্যমে চাকরি পেলেন তাঁরা। ফলে রোজগারও বাড়তে লাগল। হিন্দুদের জমি, টাকা। মুসলিমরা সেই জমির ভাড়াটে কৃষক। বেশিরভাগ হিন্দু তাঁদের শুরু থেকেই নীচু নজরে দেখতেন। কারণ তাঁরা জানতেন এই মুসলিমরা আদতে পূর্বতন নীচু জাতের হিন্দু। তাই অবহেলা, লাঞ্ছনা চলতেই লাগলো। ওদিকে জাতপাতের অন্ধকার থেকে মুক্তি পেতে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন যারা, তাঁদেরও ধর্মপরিবর্তনটাই হলো শুধু। কাজের কাজ কিছুই হলো না। ইসলাম তাঁদের রোজগারের পথ, আধুনিক হয়ে ওঠার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ালো। গোটা দেশজুড়ে তৈরি হলো এক বিরাট বৈষম্য। এরপর তৈরি হলো মুসলিম লিগ। ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে তাঁরা প্রচার করল, মুসলিমদের জন্য আলাদা দেশ চাই। স্বয়ং জিন্না একটা ভাষণে বললেন, পাকিস্তান হলে দুটো স্বাধীনতা পাওয়া যাবে। এক, ইংরেজদের হাত থেকে। দুই, হিন্দুদের হাত থেকে। তিনি আরও বললেন, হিন্দু আর মুসলিম দুটো ধর্মের মানুষদের জীবনযাত্রা আর সংস্কৃতি এতটাই আলাদা যে এরা একসঙ্গে দীর্ঘকাল থাকতেই পারবে না। জানো সোহম, কথাগুলো হয়তো ভুল নয়। তবে কী জানো, মন মানতে চাইত না আমার। কারণ আমি জানতাম, জিন্নার এই দ্বিজাতিতত্ত্ব যতই মুসলিমদের ভালো করার নামে করা হোক, তা আসলে ক্ষমতার লোভ ছাড়া আর কিছু নয়। সেই ক্ষমতার লোভেই ১৯৪৬ সালের ১৬ই অগস্ট কলকাতায় প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসের ডাক দেওয়া হলো। মুহূর্তের মধ্যে হিন্দুনিধন শুরু হলো। সে কী আতঙ্কের পরিবেশ কী বলব তোমাকে সোহম? তুমি তো সবই জানো। এরপর গোপাল পাঁঠার নেতৃত্বে হিন্দুরা পাল্টা মুসলিম নিধন শুরু করল। আমিও ভয় পেয়ে গেছিলাম। একদিন খবর পেলাম আমাকেও মারা হতে পারে। সেই দিনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কলকাতা ছেড়ে চলে যাবো। তোমার ঠাকুরদাকে জানাতে হু-হু করে কেঁদে ফেললেন সুকুমার। বন্ধু ছিলাম গো আমরা। বন্ধুত্বে ধর্ম থাকে না। এই দেশ তো আমাদেরও দেশ ছিল। তবু, ছাড়তে বাধ্য হলাম জানো। আমাদের বাড়িটা কিনে নিলেন সুকুমার সেন। তোমার ঠাকুরদা। এই বাড়িটাই আমাদের বাড়ি ছিল। তুমি যে ঘরে থাকো, সেই ঘরেই আমি থাকতাম। তাই আমি দেখতে আসি আমাদের ফেলে যাওয়া বাড়িটা।” সোহম অবাক হয়ে শুনছিল। শুনতে শুনতে সব নেশা কেটে গেছে তার। সে বলল, “আমি তো ভাবতেই পারছি না। এটা আসলে আমাদের বাড়ি নয়? এটা আপনার বাড়ি?”

  • হ্যাঁ। এটা আমাদের বাড়ি। ওপার বাংলা থেকে চলে আসা হিন্দুদের নিয়ে কত কাহিনী! এপার বাংলা থেকে ওপার বাংলায় চলে যাওয়া মুসলিমদের নিয়ে গল্প লেখোনা কেন তোমরা? হ্যাঁ জানি, সংখ্যায় আমরা উদ্বাস্তু হিন্দুদের তুলনায় নগন্য, তবু নগন্য বলে কি আমাদের দাম নেই বলো?
  • অবশ্যই দাম আছে। আমি লিখব আপনার কথা, এই বাড়ির কথা।
  • হায়! সোহম, আমাদের এই বাড়িটা তোমরা রাখতে পারবে না গো। দখল হয়ে যাবে খুব শিগশির।
  • না। দখল হবে না। আমরা হতে দেবো না। কিন্তু আপনি এসব জানলেন কী করে? আপনি এখন থাকেনই বা কোথায়?
  • উত্তরপুরুষ বিপদে পড়লে পূর্বপুরুষরা সাবধান করে দিতে আসেন, এটা তুমি জানোনা সোহম? আমি তাই তোমাকে সাবধান করতে এসেছি সেই সুদূর অতীত থেকে। সোহম, তোমরা এই বাড়িটা রাখতে পারবে না। ভয় তোমাদের শেষ করে দেবে।

 

৩।
পরপর দুদিন দুটো পোস্ট ভাইরাল হলো সোহমের। এই বাড়ি দখল করা নিয়ে বিবেক শিন্ডে এবং তার দলবলের বিরুদ্ধে সব কিছু খোলামেলা ফেসবুকে লিখেছে সোহম। একটা গল্পও লিখেছে ওই মুসলিম ভদ্রলোকটিকে নিয়ে। গল্পটা প্রশংসিত হয়েছে। অন্যদিকে হাজারের ওপরের লাইক পড়েছে দুটো ফেসবুকের দুটো পোস্টে। প্রচুর শেয়ার হয়েছে। তারপর থেকেই নতুন বিপদ শুরু হয়েছে। ফেসবুক মেসেঞ্জারে কত কত অচেনা লোক এসে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। মারধোর করা থেকে শুরু করে খুনের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। সোহম তাতে এতটুকু ঘাবড়ায়নি। যারা যারা হুমকি দিয়েছে সেই সব কথাবার্তার স্ক্রিনশট নিয়ে পোস্ট দিয়েছে ফেসবুকে। বাড়িটা বাঁচাতে বুক চিতিয়ে লড়ে যাচ্ছে সোহম। ওদিকে পাড়ায় অদ্ভুত শান্ত সব। বিবেক শিন্ডে একদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাসিমুখে গল্প অবধি করল, যেন কিছুই হয়নি। সব কিছুই স্বাভাবিক চলছিল। একদিন বেশ রাতের দিকে মদ খেয়ে ফিরছিল সোহম। বৃষ্টিশেষের ঠাণ্ডা হাওয়ায় চেতলা ব্রিজ তখন বুঁদ হয়ে আছে। সোহম হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিল ব্রিজের ওপর দিয়ে। এমন সময় পাশে এসে দাঁড়ালো বিবেক শিন্ডের বাইক। বিবেক বললেন, “চলো সোহম তোমাকে ছেড়ে দিয়ে আসি।” সোহম রাজি হচ্ছিল না। খানিক জোর করেই তাকে তুলে নিলেন বিবেক। তার বাইকের পাশ দিয়ে আরও চারটে বাইক ছুটছিল। বাইক নিয়ে একটা অন্ধকার গলিতে ঢুকে বাইক থামালেন বিবেক। বাকি চারটে বাইকও থামল। সব ছক বুঝতে পারল সোহম। চুপ করে রইল। বাইক থেকে নামতেই সোহমের গালে ঠাস করে থাপ্পড় মারলেন বিবেক। সোহম মনে মনে রেডিই ছিল। পাল্টা ঘুষি মারল বিবেককে। দু’হাত মতো ছিটকে সরে গেল বিবেক। সঙ্গে সঙ্গে পাশ থেকে চারজন দুমাদ্দুম ঘুষি লাথি মারতে শুরু করল সোহমকে। প্রথম প্রত্যাঘাত করার চেষ্টা করলেও পারল না সোহম। মেরে মুখ ফাটিয়ে দিল তার। অন্ধকার গলিতে পড়ে গেল সোহম। তার কলার চেপে ধরলেন বিবেক, বললেন, “ভালো চাস তো, ফেসবুকের পোস্টগুলো ডিলিট করে দিস আর বাবাকে বোঝাস যেন বাড়িটা লিখে দেয় আমাদের। ওই বাড়ি আমরা নেবোই। যা দাম দেবো নিয়ে কেটে পড়। নাহলে তোর হালত তোর কাকার মতো হবে। সততা মারিয়ে আমাদের গাঁড়ে লাগলে একদোম গায়েব করে দেবো। কেউ টের পাবে না। বুঝেছিস? আমি তোকে লোপাট করে দিতেই চেয়েছিলাম। শাহনওয়াজ ভাইয়া নে মানা কিয়া। ভাইয়া আচ্ছা আদমি হ্যায়। দিল সে সাচ্চা। বোলা, আচ্ছা ল্যাড়কা হ্যায়, এক ঠো চান্স তো মিলনা চাহিয়ে। তাই হালকা রগড়ে দিলাম। এই নে কিছু টাকা তোর পকেটে গুঁজে দিলাম। কাল সকালে ডাক্তার দেখিয়ে নিস।” বলে ওরা চলে গেল। অন্ধকার গলি রাস্তার ধুলোয় মরার মতো কিছুক্ষণ শুয়ে রইল সোহম। খানিক পরে অতীতের সেই লোকটির মুখ ঝুঁকে এলো তার দিকে। তিনি বললেন, “সোহম ওঠো। বাড়ি যেতে হবে তো। দেশ ভেঙে গেছে সেই কবে। স্বাধীনতা এসেছে কি? আসেনি আসেনি। দেশ আবার ভাঙছে সোহম। এই ভাঙন শুরু হবে বাড়ি ভাঙার মাধ্যমে। ওঠো সোহম, ওঠো” মদের নেশা কেটে গিয়ে মারের নেশায় মাতাল হয়ে গেছে সোহম। ঠোঁটে নোনতা রক্তের স্বাদ। মাথাটা ভিজে ভিজে লাগছে আর যন্ত্রণায় ছিঁড়ে যাচ্ছে। তবু জড়ানো স্বরে সোহম লোকটিকে বলল, “বাড়ি ছেড়ে কোথায় যাবো? আপনি কোথায় গেছিলেন? শান্তি পেয়েছিলেন? দেশ ভাঙলে রক্ত পড়ে নিজের ঘরে। মরলে মরব, তবু ভাঙতে দেবো না। জাস্টিস সুকুমার দাসের নাতি, নকশাল সুরঞ্জন দাসের ভাইপো আমি ভয় পাইনি। নিশ্চিন্তে থাকুন হে পূর্বপুরুষ, সোহম দাস ভয় পায়নি।”

 

Facebook Comments

Related posts

3 Thoughts to “সোহম দাস ভয় পায়নি”

  1. বিশ্বদীপ দে

    আধুনিক গদ্য হয়তো এমনই হয়ে উঠছে। এই সময়টার মতোই একই সঙ্গে নিস্পৃহ ও সোচ্চার। অন্য রকম। বেশ ভালো লাগল গল্পটি।

  2. Sumit Bhattacharya

    যাঁরা বলেন বর্তমানের সাহিত্য সেই জায়গায় নেই, তাঁদের এই গল্পটা পড়তে অনুরোধ করছি। ক্লাসিক কিনা জানি না। তবে শেষতক এসে ছিটকে গেছি। দেবব্রত কর বিশ্বাসের লেখায় কীভাবে সময়ের টানাপোড়ন উঠে এসেছে তা চাক্ষুষ করেই নাহয় দেখা যাক আসলে লেখক কী বলতে চেয়েছেন।

  3. Shuvroneel Sagar

    দারুণ! উত্তর কলকাতার প্রেক্ষাপটে প্রজন্ম ক্ল্যাশ, পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি ও প্রোমোটারকেন্দ্রিক ঝামেলা বিষয়ক প্রচুর গল্প পড়েছি। এটা সেরাদের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু কেন জানি হুট করে শেষ হয়ে গেলো! এ বিষয়ে দেবব্রত দা-ই ভালো বলতে পারবে। কেবল জমে উঠছিল, চরিত্রগুলোর প্রতি ভালোবাসা জন্মাচ্ছিল, আরেকটু গাঢ় হওয়ার আগেই পর্দা নেমে গেলো। দাদুর চরিত্রকে আরেকটু ফুটিয়ে তোলা যেতো, একইভাবে কাকুও। তাতে শেষের তিন চার লাইন আরো আবেগ নিয়ে ধাক্কা দিত। যদিও এসব আমার ব্যক্তিগত পাঠ প্রতিক্রিয়া, আমি আরেকটু থাকতে চাচ্ছিলাম চরিত্রগুলোর সঙ্গে!

Leave a Comment