সরোজ দরবার

সুন্দরী, ফ্ল্যাটবাড়ি ও ফিলগুড গল্প

তুমি যে শুধু নিজে অসুখী তা-ই নয়, বাকিদেরকেও সুখে থাকতে দিচ্ছ না পার্থ- কেটে কেটে কথাগুলো বলছিল মৌরিফুল।

এটিই তার সঠিক নাম কি না তা কেউ জানে না। কেউ কোনোদিন তার আধার কার্ড দেখেনি বা দেখতেও চায়নি। নাম হিসেবে সে এটাই বলে। এবং মৌরিফুল পদবী ব্যবহার করে না।

তার কথা শুনে এই ‘কোপাই’ ফ্ল্যাটবাড়ির যারা জড়ো হয়েছিল, সকলেই মুখ নামিয়ে নিল। পার্থ শুধু মুখ তুলে তাকাল। মৌরিফুল সুন্দরী। টানা টানা উচ্চাকাঙ্ক্ষী চোখ, গৌরবর্ণা, উন্নতনাসার যে সুন্দরীদের একবার দেখে চাইলেও চোখ ফেরানো যায় না, সেরকমই সুন্দরী সে। তীব্র যৌবনবতী, তবে মাপমাপ, যেন কোথাও এতটুকু বাহুল্য থাকতে নেই। এবং এই মুহূর্তে সম্ভবত সে বেজায় রেগে আছে কিংবা উত্তেজিত, তাই কপালের দু-পাশে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। নাকের ডগা কিঞ্চিৎ রক্তাভ। পার্থ দেখল, তীক্ষ্ণ ও আধুনিক চোখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে মৌরিফুল। দৃষ্টির এরকম উপমা খানিকটা বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে, কিন্তু মৌরিফুলকে প্রথম দেখায় এরকমটাই মনে হয়েছিল পার্থর। এখন মনে হওয়ার কোনও সেন্সর বোর্ডও নেই, সহায়িকাও হয় না, অগত্যা…।

‘কোপাই’ ফ্ল্যাটবাড়িতে মৌরিফুলকে নিয়ে এসেছিল পার্থই। সে এক অন্য কিসসা। পরে বিস্তারিত বলা যাবে। তবে এই মুহূর্তে পার্থর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগটা শুনে নেওয়া জরুরি। কারণ মৌরিফুল সম্ভবত আর কয়েক মিনিটের মধ্যে এর ফয়সালা করে ফেলবে। এবং ফ্ল্যাটবাড়ির অন্যান্যরা যেভাবে তার কথায় মুখ নামিয়ে নিয়েছে অর্থাৎ সম্মতি দিয়েছে, তাতে রায় শোনানো সময়ের অপেক্ষা মাত্র। অবধারিতভাবে সেটা মৌরিফুলেরই সিদ্ধান্ত, যদিও আদতে তা সর্বসম্মত হিসেবেই প্রতিপন্ন করা হবে। এ কথা বেশ স্পষ্টই বুঝতে পারছে পার্থ।

হাতে ধরা চিঠিটার দিকে সে আর একবার তাকাল। ঝকঝকে ইংরেজিতে যা লেখা তার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়-

এতদ্বারা কোপাই ফ্ল্যাটের অধিবাসীবৃন্দ জানাতে বাধ্য হচ্ছে যে, শ্রী পার্থ ঘোষাল ক্রমাগতভাবে ফ্ল্যাটের ও পাড়ার সুখী পরিবেশ নষ্ট করেছেন। শ্রীমতী মৌরিফুল গত এক বছরের অক্লান্ত চেষ্টায় হ্যাপিনেস ইনডেক্স যেভাবে বাড়িয়ে তুলেছিলেন, তা বিপজ্জনকভাবে নামতে শুরু করেছে। এর মূল কারণ পার্থবাবুর অসহযোগিতা, সকলের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা, মৌরিফুলকে সাহায্য না করা, ফ্ল্যাটের অন্যান্য বাসিন্দাদের এড়িয়ে চলা ইত্যাদি। মৌরিফুল এ ব্যাপারে পার্থবাবুকে একাধিকবার সতর্ক করা সত্ত্বেও তাঁর তরফে কোনও সাড়া মেলেনি।

এমতবস্থায় আগামী রবিবার আমরা একটি মিটিং-এর আয়োজন করছি। সেখানে পার্থবাবু যদি নিজের দোষ শুধরে নিতে সম্মত না হন, তবে আমরা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।

আজ সেই রবিবার। চিঠির শেষে সেক্রেটারি হিসেবে সনাতন মুখুজ্জে সই করেছেন। তারপর আরও অনেকের সই আছে। সকলেই যে খাপ্পা তা ধরে নেওয়া যেতে পারে। আবার না-ও হতে পারে। কারণ এই মিটিং-এ এতক্ষণ, পার্থ যা দেখল, সকলেই হ্যাঁ-হুঁ করেছেন মাত্র। যা বলার মৌরিফুলই বলেছে। সমস্ত অভিযোগ সে একে একে দৃঢ়স্বরে এবং সেই-ই যে ঠিক, তা একেবারে নিশ্চিত করেই জানিয়েছে। যদিও পার্থ একটিরও উত্তর দেয়নি। স্রেফ চুপ করে থেকেছে। তাতেই মৌরিফুল সম্ভবত আরও বেশি চটেছে।

এবং এখন রায় ঘোষণার পালা চলে এসেছে। পার্থ মোটামুটি জানেও তা কী হতে চলেছে। তবু ওই শুনতে হয় তাই শোনা আর কি!

২)

মৌরিফুল অযোনিসম্ভূতা নয়, হওয়া সম্ভবও নয়। কিন্তু তার অতীত এমন রহস্যাবৃত, যেন সে কোনোদিন কোথাও ছিল না। এখন যে আছে এই যথেষ্ট এবং এটাই তীব্র সত্য। তার উপস্থিতি অনেকটা এরকমই। অতীত নিয়ে সে মুখ খুলতে চায় না। এই হেঁয়ালিটা মৌরিফুলকে আরও সুন্দরী করে তোলে বলে এককালে ধারণা হয়েছিল পার্থর।

তার নিজের জীবনেও তখন একটা বিতিকিচ্ছিরি সময় চলছে। অতীত ভুলে বাঁচতে চাইছে সে। দীর্ঘদিনের বান্ধবী তখন বিদায় নিয়েছে। রাজনীতি নিয়ে একসময় যাদের সঙ্গে জোর চর্চা হত তারা ধীরে ধীরে মার্কেটিংয়ে ঢুকে পড়ছে সব। মদ খেতে বসলেও নেশা হয় না। সিগারেট খেয়ে কাশলেও বুকে ভয় হয় না। অফিস থেকে বেতন পেলেও মনটা খুশি খুশি হয় না। কারণ সে জানত এই অর্থে সারা মাস স্বচ্ছন্দে চলবে না, তবু এই অর্থ অস্বীকার করা যাবে না কারণ এটুকু না থাকলেই নয়। অগত্যা যাবতীয় ধ্যাতানি সহ্য করতে হবে, যাকে বলে কম্প্রোমাইজ। মৌরিফুল বলেছিল, একেই আসলে বলে বয়স হওয়া বা জন্মদিন পেরনো। এই যে দেখলেন, কথার মধ্যে হুট করে মৌরিফুল ঢুকে পড়ল, ঠিক এভাবেই সে আচম্বিতে পার্থর জীবনেও চলে এসেছিল। ঢাকঢোল পিটিয়ে নয়। বলতে গেলে প্রায় কোনও উৎসব ছাড়াই। অথচ এক পুরুষের জীবনে একজন নারী এলে উৎসব হয়ই, পাঁজিপুঁথিতে অবশ্যি তার হদিশ থাকে না। ইন ফ্যাক্ট উৎসব সম্পর্কে মানুষ খুব কম জানে। কিছু রাংতা, আলো, ঢাক-ঢোল বাদ্যিকে সে উৎসব ভুল করে। পূর্ণাঙ্গ উৎসব মানুষ রক্তে-মাংসে টের পেতে পারত, কিন্তু গায়ে কাঁটা বলে ভুল করে বসে। উৎসবের ধারণা তাই মানুষের কাছে ক্রমাগত দুর্বোধ্য হয়ে ওঠে। পার্থ যে সেভাবে উৎসব মিস করেছে তা নয়, কিন্তু এখানে উৎসব প্রায় ছিলই না। মৌরিফুল এসেছিল, জোঁক যেভাবে চামড়ায় ঝুলে পড়ে, ইন্দ্রিয়কে ঠকিয়ে, অনেকটা সেভাবেই।

সে যাকগে, তারপর কী করে যেন সে পার্থর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অভ্যেসে পরিণত হল। অফিসে হোক, বাসে হোক, এমনকী ময়দানের পাশে তার প্রিয় একলা হাঁটার জায়গাতেও পার্থ ক্রমাগত মৌরিফুলকে মিস করতে লাগল। এবং বুঝে গেল এই মেয়েটিকে ছাড়া সে যেন আর কিছুতেই পুরোপুরি পার্থ হয়ে থাকতে পারে না। ততদিনে বন্ধুবান্ধবদের কেউ কেউ মৌরিফুলের সঙ্গে তাকে দেখেছে। ফ্ল্যাটে আসার সুবাদে পড়শিরাও কেউ কেউ দেখেছে মেয়েটিকে। অর্থাৎ মৌরিফুলকে সঙ্গে নিয়ে পার্থর একটা যৌথ ইমেজ তৈরি হল, যা ছাড়া সে নিজে অসম্পূর্ণ হয়ে উঠল ক্রমশ। এমনকী ক্বচিৎ মৌরিফুলের সঙ্গে তাকে কেউ না দেখলে পালটা প্রশ্ন আসত, কী ভায়া, আজকাল একা একা ঘুরছ যে বড়? যেন বড় গর্হিত কাজ হয়ে গিয়েছে। আসলে তো সে একাই, যেমন বস্তুত প্রতিটা মানুষই একা। কিন্তু একা থাকলে মানুষকে মানুষের কাছে এত কৈফিয়ৎ কেন দিতে হয় কে জানে! এখন তো পার্থর পক্ষে যেন আর তা সম্ভবই নয়। ভিতর এবং বাইরেও। একা হিসেবে সে যে আর স্বীকৃত নয়, এমনকী নিজের কাছেও, ক্রমে তা বুঝে গেল পার্থ।

তবু এটা কিন্তু প্রেম নয়, সহাবস্থান- দৃঢ়স্বরে বলেছিল মৌরিফুল। এরকম সিদ্ধান্ত যখন সে জানায় তখন তাকে অদ্ভুত লাগে। পার্থর মনে হয় এই একরোখা মুহূর্তগুলিতেই মৌরিফুল সত্যিকারের সেক্সি হয়ে ওঠে। তবু মরিয়া হয়ে সে বলেছিল, লিভ টুগেদার তো করতে পারি আমরা, নাকি? নো ওয়ে- আবারও সাফ কথা মৌরিফুলের। তবে তুমি চাইলে তোমার ফ্ল্যাটে আমার থাকার জায়গা করে দিতে পারো, অন্য ঘরে, সেপারেট।

সুযোগ হাতছাড়া করেনি পার্থ। সনাতন মুখুজ্জেকে বলেকয়ে ভাড়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। এমনিতে ছোট ফ্ল্যাটবাড়ি। গোটা দশ পরিবারের বাস। ওর মধ্যেই একজন এখানে জাস্ট ফ্ল্যাট কিনে রেখে অন্যত্র বাস করেন। সনাতনের কথায় তিনি ভাড়া দিয়ে দিলেন। মৌরিফুল তার অল্প জিনিসপত্র নিয়ে একদিন এখানে চলে এল। পার্থর পরিচিতা কিংবা বান্ধবী ভাবার সূত্রেই সম্ভবত কেউ আর জানতেও চাইল না, সে এতদিন কোথায় থাকত বা ছিল?

টু অ্যান্ড হাফে পড়ল মৌরিফুলের ফ্ল্যাট। একতলা উপরে পার্থর।

মৌরিফুলের দরজা পেরিয়ে সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে কতবার বিড়বিড় করেছে পার্থ, সহবাস নয় সহবস্থান।

 

৩)

ড্রপবক্সে দুঃখ ফেলেছেন আই মিন মনখারাপ?- রায়চৌধুরী বউদির মুখে এ কথা শুনে ভীষণ চমকে গিয়েছিল পার্থ। এই তো কটাদিন আগের কথা। ফ্ল্যাটে তখন জাঁকিয়ে বসেছে মৌরিফুল। এমনিতেই সে মিশুকে স্বভাবের মেয়ে। তবে আদতে তা পুরোটাই প্রফেশনাল। কারণ সে একটা এজেন্সি চালায়, যার নাম হ্যাপিনেস এজেন্সি। একদিন তার কথাতেই পার্থ উদ্যোগ নিয়ে এই এখানেই এভাবে সকলকে একজোট করেছিল। সেটাও ছিল রবিবার।

মৌরিফুল সেদিন দারুণ সেজেছিল। ঠিক কী পরেছিল তা এখনও স্পষ্ট মনে আছে পার্থর। সাধারণত অনেকগুলো দিন পেরোলে, দিনের স্মৃতি এতটা নিখুঁত থাকে না। কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয়নি, হয়তো দিনটার গুরুত্বের নিরিখেই। এমনকী মৌরিফুলের চিলতে প্রদর্শিত ক্লিভেজটুকু সেদিন বহুজনের দ্রষ্টব্য ছিল, তাও মনে আছে পার্থর। এ বিষয়ে এখনও সে বিস্তারিত বর্ণনা করতে পারে। কিন্তু এই পোশাক-আশাক, ক্লিভেজ ইত্যাদির বর্ণনা অত্যন্ত ক্লিশে ও ক্লান্তিকর মনে হয় তার আজকাল। খোলামেলা, ক্রমাগত খোলামেলার সঙ্গে বোল্ডনেস জুড়ে দেওয়ার হাস্যকর বিদঘুটে সমীকরণের আশাপাশে হাঁটতে হাঁটতে, এক এক সময় দাঁড়িয়ে তার মনে হয়েছে, উন্মুক্ত স্তনের দিনও আজ আর পলাশ ফোটাতে পারবে না।

যাই হোক, সেদিন অত্যন্ত আকর্ষণীয়া লাগছিল মৌরিফুলকে। কেউ-ই প্রায় চোখ ফেরাতে পারছিল না। তাতে মৌরিফুলের সুবিধাই হয়েছিল। চোখে চোখ রেখে সে তার বক্তব্যগুলো মগজে ঢুকিয়ে দিতে পেরেছিল। বোধহয় সে কারণেই অমন করে সেজেছিল মৌরিফুল। কিছু কিছু প্রফেশনে বিশেষভাবে সাজাটাও পার্ট অফ জব। যাই হোক সেদিন সে যা বলেছিল, তার যার মর্মার্থ এই- আমরা সকলেই ভীষণ একা একা বাঁচতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। একার খাওয়া, একার থাকা, একার ভাল, একার মন্দ, একার মনখারাপ… এইরকম আর কি। কিন্তু যদি একটা কমন প্ল্যাটফর্ম করা যায়, যেখানে সবাই সবার একাকিত্ব, এমনকী আনন্দ কিংবা ভাল জিনিসগুলো শেয়ার করতে পেরে হালকা হবে, তবে কেমন হয়?

একতলার সুভাষ একটু পেটুক প্রকৃতির। সেই-ই সবার আগে বলেছিল, যার বাড়ি যা ভাল-মন্দ রান্না হবে সবাই শেয়ার করবে? তাহলে তো আর নিজের বাড়ি গ্যাস না জ্বালালেও চলবে।

মৌরিফুল স্মিত হাসি হেসে বলেছিল, নো স্যার। দ্যাটস নট দ্য ওয়ে। সেটা করতে গেলে হিউজ খরচ পড়বে। কিন্তু এমনটা হতে পারে, আপনার বাড়িতে ছোলা দিয়ে মোচার ঘণ্ট হয়েছে। আপনি সে গল্প বাকিদের কাছে করলেন। শুনে কারও ছোটবেলার মায়ের হাতের বড়ি দিয়ে লাউয়ের তরকারির কথা মনে পড়ে গেল। তাতে হয়তো কিছুই হল না, কিন্তু হতে পারে তিনি ডিপ্রেসনে ছিলেন, এই সুখস্মৃতিতে তা কেটে গেল। অথবা বেশ মনখারাপ হল। কিন্তু এই ধরনের দুঃখিত হওয়ার মধ্যেও একটা গোপন সুখ আছে। হ্যাপিনেস এজেন্সির কাজই হচ্ছে, সবাই সবাইকে যাতে সুখী রাখে তা খেয়াল রাখা। দেখবেন, এতে কারওরই লোকসান নেই।

লাভ-লোকসান শুনেই নড়েচড়ে বসেছিল সেলসের মৈনাক। কিন্তু সেও মডেলটার কোনও খুঁত ধরতে পারল না। উলটে তার মনে হল, এ তো ভালই। একজন সিঙ্গল মল্ট খেতে পারছে না।  কিন্তু তারই বাড়িতে আর পাঁচজন খাচ্ছে, এই গল্প শুনতে শুনতে একদিন সেও ঝাঁপ দিতে পারে। অর্থাৎ মার্কেট বাড়ছে, ব্যাপারটা মন্দ নয়।

সনাতনের স্ত্রী সুব্রতা অবশ্য একটু গাঁইগুঁই করেছিল। ঘরের কথা পরের কাছে বলে বেড়ানোর কী দরকার? এ তো সেই দুপুরে পাড়া বেড়ানো আর পরচর্চা করার মতোই হয়ে গেল। মৌরিফুল তাকে এক মুহূর্তে থামিয়ে দিয়ে বলেছিল, মাসিমা আপনি এখানে কতদিন আছেন?

  • তা বছর সাতেক।
  • কিন্তু আমি ছাড়া আর কে জানে বলুন তো যে, আপনি চমৎকার নকশিকাঁথার কাজ জানেন? সকলেই মুখ চাওয়াচাওয়ি করে।
  • প্লাস আপনি যে এমন চমৎকার রবীন্দ্রসঙ্গীত গান, বিশেষত, এ পরবাসে-র মতো কঠিন গানও অক্লেশে গেয়ে ফেলেন, তাই-ই বা কে জানে! করুণা বন্দ্যোপাধ্যায় আপনার প্রিয় না?

সুব্রতা মুখুজ্জের মুখ আলোয় ভরে গেল। ‘পরনিন্দা-পরচর্চা ছাড়া, এভাবে নিজেকে আবিষ্কার করা যেতে পারে, তাতেও সুখ বাড়ে।’- এবার বলল মৌরিফুল। ‘আপনারাই বলুন সুব্রতা মাসিমা যে গান গাইতে পারেন তা জেনে এবং তাঁর গান যদি আপনারা শুনতে পান, আপনাদের ভাল লাগবে না?’

মৌরিফুলের এ প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ না হয়ে যায় না হলও তাই। এবং সর্বসম্মতিক্রমে ঠিক হল, হ্যাপিনেস এজেন্সিকে কোপাই-এ কাজ করতে দেওয়া হবে। সবথেকে বড় কথা, এর জন্য কিছু খরচ তো হচ্ছে না। ওই মেনটেন্স থেকে টুকটাক, রিজনেবল।

রাতারাতি একটা ড্রপবক্স বসল ফ্ল্যাটের আড়াইতলার ল্যান্ডিংয়ে। সেখানে সকলে গিয়ে নিজের মনের কথা চিরকুটে লিখে ফেলে দিতে শুরু করল। এবার যার যখন সময় হত, টুক করে বাক্স খুলে দেখে নিত, কার মনে কী জমেছে। ‘আহা রে অমুখ দাদার গাঁটে ব্যথাটা আবার বাড়ল, বড্ড কষ্ট পাচ্ছেন’ কিংবা ‘অমুখবাবুর মেয়ের বিয়েটা বোধহয় টিকবে না, সকলেই মনে মনে বড় কষ্ট পাচ্ছেন’ – এই জাতীয় মন্তব্য ভেসে আসত চিরকুট পড়ার সময়। যদিও তা শোনার জন্য কেউ থাকত না। ইনফ্যাক্ট ফ্ল্যাটবাড়ির কালচার মেনে কারওর সঙ্গে কারও দেখাই হত না। কিন্তু সকলেই সকলের কথা জানলেন। তারপর এ যখন ওর বাড়ির কলিংবেল বাজিয়ে বলে এল, মাথাব্যথায় খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন শুনলাম, এই ওষুধটা ট্রাই করে দেখুন তো, তখনই বোঝা গেল হ্যাপিনেস এজেন্সি কীরকম কাজ করছে। এই যে আমার কষ্টে, আমার দুঃখে আর একজন ভাবছে বা সমব্যথী, এই ভাবনার মধ্যেই একটা গোপন সুখ আছে। মৌরিফুল বেশ আধুনিকভাবে ভাবে সেই সুখ ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন সকলের মধ্যে। ফ্ল্যাটের সকলে এখন নিজেদেরকে বেশ কানেক্টেড ভাবে। সুখে আছে মনে হয় তাদের। ফলত হ্যাপিনেস ইন্ডেক্স বাড়ারই কথা।

কিন্তু পার্থর কপালে সুখ সইল না।

৪)

সাধে কী বলে সুখে থাকতে ভূতে কিলোয়! ঘটনাটা যখন ঘটেছিল তখন ত্রিসীমানায় ছিল না পার্থ। অফিসে একটার পর একটা জরুরি মিটিং ছিল সেদিন। সারাদিন সেই ব্যস্ততাতেই কেটেছিল। ফিরে এসে ড্রপবক্স নাড়াঘাঁটা করে বুঝল, সাংঘাতিক কাণ্ড সব ঘটে চলেছে একে একে।

ঘটনাটা এইরকমঃ- এ পাড়ার একেবারে শেষমাথায় একটা পার্ক আছে। বয়স্করা সেখানে বিকেলের দিকে একটু হাঁটাহাঁটি করেন। সেখানেই সম্ভবত পাশের পাড়ার একটা ছেলে-মেয়ে সামান্য ঘনিষ্ঠ হয়ে বসেছিল। কোনও কারণে বয়স্কদের তা অসভ্যতা বলে মনে হয়। প্রথমে কথা কাটাকাটি তারপর এক প্রবীণ মানুষ নাকি মাথা গরম করে ছেলেটির গায়ে হাত তুলে ফেলেছেন। মেয়েটি ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে কোনোক্রমে বাঁচিয়েছে।

নিঃসন্দেহে ছাপোষা পাড়ায়, যেখানে কেউ কাউকে চেনে না, সেখানে চাঞ্চল্যকর ঘটনা। কিন্তু প্রশ্ন হল, হ্যাপিনেস এজেন্সি এখানে কী করবে? মৌরিফুল বলল, কেন, সকলেই এই মোরাল পুলিশিং-এর এগেনেস্টে মুখ খুলতে চাইছে, আমরা একে অন্যের ভিউ শেয়ার করব। আমার পক্ষে অনেক লোক আছে, এটা ভাবাও তো হ্যাপিনেস।

পার্থ তীব্র আপত্তি জানিয়ে বলেছিল, তাতে লাভটা কী হবে? বয়স্করা কেন এমন করল তা আগে জানা উচিত ছিল। তারপর বাচ্চাগুলোর মতামত জানা দরকার। কী এমন হল যে এমনটা ঘটল, এতদিন তো কেউ এরকম কিছু শোনেনি। আর অ্যাডোলেসেন্স পিরিয়ড যদি একটু আড়াল না খুঁজে পায়, কাপল আর বয়স্কদের যদি এক পার্ক শেয়ার করতে হয়, তবে তো পাড়ার প্ল্যানিংয়েই গড়বড় আছে বলতে হবে।

মৌরিফুল মৃদু হেসে বলল, সে সব ঠিক করার জন্য পুরসভা আছে। ইটস নট আওয়ার রেসপন্সিবিলিট। ‘তাহলে খামোখা হাওয়া গরম করে আমরা কী করব?’ পার্থ উত্তেজিত হয়ে বলেছিল। তার বক্তব্য, এতদিন যা ঘটেনি তা যখন এই পাড়ায় ঘটছে তখন, তখন কারণগুলো খোঁজা দরকার। রুটটা কোথায়? তা না করে এর মত, ওর মত, সে সহমত, ও ভিন্নমত- এই চিহ্নিতকরণে কী ছাই লাভ হচ্ছে?

মৌরিফুল বলেছিল, মানুষ ফিল গুড থাকতে চায় পার্থ। মরাল পুলিশিংয়ের প্রতিবাদ করে তারা ভাল থাকছে। দ্যাটস ইট। নাথিং রং উইথ দিস।

চুপ করে গিয়েছিল পার্থ। সে নিজেও মরাল পুলিশিং-এর বিপক্ষে। কিন্তু তার মনে হয়েছিল, এক্ষেত্রে অন্য ভূমিকা পালন করা উচিত ছিল। আরও রুটে পৌঁছোনো জরুরি ছিল। যদিও হ্যাপিনেস এজেন্সি তা করতে দিল না। গোটা পাড়াকে আড়াআড়ি ভাগ করে দিল। একদল নীতিপুলিশের বিপক্ষে। আর কেউ অন্য সম্ভাবনার কথা বলতে গেলেই তাকে নীতিপুলিশের পক্ষে ধরে নেওয়া হল। যেমন পার্থ। অগত্যা তার চুপ করে যাওয়া ছাড়া সেযাত্রায় আর কোনও উপায়ও ছিল না।

কিন্তু দিনকয় পর আরও একটা ঘটনা ঘটল। এবার পাড়ারই কোনও একটি মেয়েকে ইশারা করে কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি করল এক ফেরিওয়ালা গোছের লোক। মেয়েটির বান্ধবী সেই ঘটনার ভিডিও করেছিল। হ্যাপিনেস এজেন্সি দায়িত্ব নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তা দেখিয়ে নিয়ে এল। বলে রাখা ভাল, মৌরিফুলের হ্যাপিনেস এজেন্সি আর শুধু কোপাই-এ আটকে নেই। সাতপাড়ার লোককে সুখে রাখার দায়িত্ব এখন তার সংস্থার।

এবারও পার্থ বলল, আমার মনে হয়, আগে পুলিশে যাওয়া উচিত ছিল। মৌরিফুল ও বাকিরা একস্বরে বলল, আরে পুলিশ আগে শুনলে কিছু নাও করতে পারত। কিন্তু এখন সকলে একযোগে বলার ফলে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য। লোকটা ধরা পড়েছে। এবং এই ধরনের বিকৃত মানসিকতার লোকের ধরা পড়াই উচিত। তা বটে। তবু পার্থ বলল, এই টেন্ডেন্সিটা কিন্তু ভাল নয়। এরপর তো কেউ মরে যাচ্ছে কি মার খাচ্ছে দেখলেও লোকে আগে ভিডিও তুলবে। প্রপার ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাববে না।

মৌরিফুল মুখ বেঁকিয়ে বলল, বোগাস। মানুষ কেন ড্রয়িংরুমে মা কালী না রেখে বুদ্ধমূর্তি রাখে- তা বিশ্লেষণ করা আমাদের কাজ নয়। আমাদের কাজ হচ্ছে যদি বুদ্ধমূর্তি রেখে মানুষ যদি ভাল আছে বলে বোধ করে, তবে আরও ভ্যারাইটির বুদ্ধমূর্তি জোগান দেওয়া।

পার্থ হতবাক। ভিড়ের মধ্যেই মৌরিফুলকে একটু একা পেয়ে সে বলল, এই অরগানাইজড ফোর্স কি মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে তুমি কল্পনা করতে পারছ? জানো অরুন্ধতি রায়ের মতো মানুষ কী বলছেন? বলেছেন, আমরা যে অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি সেটাকে বলা যেতে পারে ‘হিস্ট্রি অ্যাজ ফেক নিউজ’। আজ যদি কেউ কমিউনাল টেনশন ছড়াতে, পলিটিক্যাল গেনের জন্য কৌশলে হ্যাপিনেস এজেন্সিকে ব্যবহার করে? তখন? পারবে দাঙ্গা রুখতে?

মৌরিফুল আবার তার মুখের হাসিটি টেনে এনে বলেছিল, মানুষকে এত বোকা মনে কর কেন পার্থ? সামান্য একটা এজেন্সির কথা লোকে বিশ্বাস করবে?

  • সামান্য এজেন্সি তো তোমার আর নেই মৌরিফুল?
  • ভুল করছ। মানুষের সিস্টেমের কাছে আমি সামান্য তো বটেই, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বলা যায়।
  • তবু তুমি অন্যকে প্রভাবিত করার মতো ক্ষমতাশালী। তুমি তোমার ইচ্ছেমতো অন্যকে ভাবাতে পারো। বহুসংখ্যক মানুষের ভুল কাজে হ্যাঁ বলাকে সামনে এনে তুমি প্রমাণ করে দিতে পারো, এটাই ঠিক। এটাই গণতান্ত্রিক। সেটা বিপজ্জনক নয়?
  • তুমি বারংবার একই ভুল করছ পার্থ। আমি বা আমার সংস্থা কাউকে প্রভাবিত করছে না। আমাদের একটাই কাজ মানুষকে ফিল গুড রাখা। যদি কেউ ইনফ্লুয়েন্সড হন বা কমিউনাল টেনশনে পা দিয়ে ফেলেন, তাহলে বুঝবে তিনি বা তাঁরা সেটা করেই ভাল থাকছেন। আমি কী করব? কারও ভাল থাকার অধিকার আমি কেড়ে নিতে পারি না!
  • তাই বলে কেউ যদি কাউকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মেরে ভাল থাকে? তাকেও তুমি সাপোর্ট করবে?
  • আমি কোনও কিছুকেই সাপোর্ট করছি না পার্থ। এটা আমার বিজনেস। হ্যাঁ, মানুষ চাইলে আমি পুড়িয়ে মারাও সকলকে দেখাব বইকি। আবার মানুষ না চাইলে দেখাব না। অথবা এমন ব্যবস্থা করব, যাতে যার ইচ্ছে হয়, তিনি দেখবেন। মোদ্দা কথা, মানুষের ভাল থাকার বাইরে ভাবা ছাড়া আমার দ্বিতীয় কোনও রাস্তা নেই। তোমার যদি মনে হয়, মানুষ ভাল নেই, তবে জেনে রাখ হ্যাপিনেস এজেন্সি তার জন্য দায়ী নয়। মানুষ আসলে ভুলে গেছে কীভাবে ভাল থাকতে হয়।

আর কথা বাড়ায়নি পার্থ। বুঝেছিল, কথা বলার মতো জায়গা আর নেই। গোটা পাড়া, মহল্লা বাইনারি হয়ে গেছে। শূন্য অথবা এক। ছোটবেলার অঙ্ক স্যারের শাস্তির নিদান মনে পরেছিল তার। হয় আঙুলের ফাঁকে পেন্সিল নয় হাতছড়ি। দুটোই অসহনীয়, সমান ব্যথাদায়ক বাট চয়েস ইজ ইওরস। গোটা মহল্লা যেন মৌরিফুলের এজেন্সি মারফত তাকে সেই চয়েস দিচ্ছে। সে কোনটাই বা নেবে!

হ্যাপিনেস এজেন্সি বা মৌরিফুলের সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ রাখেনি তার পর থেকে। বহুবার মৌরিফুল যেচে এসেছে কথা বলতে, ফ্ল্যাটের সকলে ডেকেছে, কিন্তু ভুয়ো খবরের ইতিহাস হয়ে সং সেজে থাকতে তার আর ইচ্ছে করেনি।

ফলত তার দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছে। নোটিস জারি হয়েছে। যার শুনানি শেষে এইমাত্র মৌরিফুল ঘোষণা করল, পার্থ আসলে এমন ধরনের মানুষ যারা সামাজিক বন্ধনকেই বিপন্ন করে। বিচ্ছিন্ন বাঁচাকে ইন্ধন দেয়। সমাজ এদের মেনে নেয় না। এ ধরনের মানসিকতাকে প্রশ্রয় দেয় না।

‘তাহলে কী প্রশ্রয় দেয়?’ বাঁকা হাসি হেসে প্রশ্নটা করেই ফেলল পার্থ। মৌরিফুলের নাকের ডগা এখন আর লাল নয়। তার মানে ভিতর ভিতর অদ্ভুত শান্ত হয়ে গিয়েছে সে। সেই শান্ত স্বরেই সে বলল, পার্থ হ্যাপিনেস এজেন্সি আছে বলে মানুষ এই এত সামাজিক ইস্যুতে রিঅ্যাক্ট করছেন। যে মানুষ রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়েছেন, তিনিও যে আজ যে কোনও সামাজিক ইস্যুতে সোচ্চার, সেটা হ্যাপিনেস এজেন্সির ক্রেডিট নয়? যিনি রাস্তায় নামতে পারেন না, তিনিও যে প্রতিবাদ করতে পারেন, এই অ্যাভিনিউটা খোলার দরকার ছিল না? তুমি বোধহয় জানো না, আমরা স্যানিটারি ন্যাপকিন, পিরিয়ডস, শাঁখা-সিঁদুর পরার অযৌক্তিকতার মতো বিষয় নিয়েও ক্যাম্পেন হলে তাকেও গুরুত্ব দিচ্ছি, ছড়িয়ে দিচ্ছি। উইমেন এমপাওয়ারমেন্টে জোর দিচ্ছি। স্ট্রিট অ্যানিমালদের নিয়ে কেউ কাজ করলে সকলের সঙ্গে তার যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছি। তোমার মনে থাকবে, সৌকর্যবাবুর মেয়ের অপারেশনে রক্ত পাওয়া সহজ হয়েছিল শুধু হ্যাপিনেস এজেন্সি ছিল বলেই। ক্যান ইউ ডিনাই দ্যাট? অ্যান্ড ইউ? শেষ প্রশ্নটা বাকিদের উদ্দেশ্য করে করা।

এই ফ্ল্যাটের অন্তত সকলেই স্বীকার করল, মৌরিফুলের কৃতিত্ব অস্বীকারের উপায় নেই।

আহা খাপ পঞ্চায়েত! পার্থ হাসল মনে মনে। পঞ্চায়েতের রায় বেরিয়েছে সে সমাজচ্যুত, একঘরে।

একা একা নিজের ফ্ল্যাটে ঢুকে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিল পার্থ।

৫)

পার্থর তিন তলার এই ব্যালকনিতে এখন অনেক রাত। কড়া করে বানানো হুইস্কি হাতে মৃদু হাওয়ার ভিতর এসে দাঁড়িয়েছে সে।

মৌরিফুলের কথা খুব মনে হচ্ছে। কিন্তু আপাতত সবই ধরাছোঁয়ার বাইরে। পার্থর মনে হল, তাহলে কি এখন সে সত্যিই ভাল আছে? একদা সে ভাল ছিল না। মৌরিফুল এসেছিল তার জীবনে। সহবাস নয়, সহবস্থানেই। তখন কি তাহলে ভাল ছিল? তাহলে এত অশান্তিই বা ফের ঘনিয়ে উঠল কেন?

আর আজ যখন বিচ্ছেদ, তখন নেশা এত গাঢ় হচ্ছে কেন? তাহলে কি এখন সত্যিই ভাল নেই সে? মৌরিফুল আর তার হ্যাপিনেস এজেন্সিকে বাদ দিয়ে তার ভাল থাকার উপায় নেই?

বিভ্রান্ত হয় পার্থ। কোনটা আসলে সত্যিকারের সে, কখন যে সে ভাল ছিল, কিছুতেই আর ঠাহর করতে পারে না। মৌরিফুল তো তাহলে ঠিকই বলেছিল, কী করে ভাল থাকতে হয় মানুষ তা জানে না কিংবা ভুলে গেছে।

ফিলগুড ফ্যাক্টর… হ্যাপিনেস ইনডেক্স… বিড়বিড় করতেই পার্থ দেখল, হেমন্তর আকাশে মেঘের মধ্যে দূরে মিলিয়ে যাচ্ছে একটা বিমানের আলো। লাল একটা বিন্দু আবছা হতে হতে হতে একেবারে নেই হয়ে গেল।

সেই মিলিয়ে যাওয়ার দিকে হাতের গ্লাসটা তুলে ধরে পার্থ শুধু অস্ফুটে বলল, চিয়ার্স।

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment